ঢাকা, সিলেট ও খুলনা থেকে মানব পাচার সবচেয়ে বেশি

ঢাকা, সিলেট ও খুলনা থেকে মানব পাচার সবচেয়ে বেশি

ঢাকা, সিলেট ও খুলনা থেকে মানব পাচার সবচেয়ে বেশি

বাংলাদেশে ২০২০ সালে যেসব মানবপাচারের ঘটনা সনাক্ত করা গেছে তার বেশিরভাগই ঘটেছে ঢাকা, খুলনা এবং সিলেট বিভাগীয় অঞ্চলে। জাতিসংঘের মানবপাচার বিষয়ক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

জাতিসংঘের অভিবাসন বিষয়ক সংস্থা আইওএম এবং জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক দপ্তর যৌথভাবে ‘ট্রাফিকিং ইন পার্সনস ইন বাংলাদেশ’ নামে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে।  

জেলা হিসেবে বাংলাদেশের সাতটি জেলায় সবচেয়ে বেশি মানব পাচারের ঘটনা বেশি সনাক্ত করা হয়েছে। এসব জেলা হচ্ছে মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, শরীয়তপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া এবং হবিগঞ্জ। এসব জেলা থেকে প্রতি লাখে দেড় জনের বেশি মানুষ পাচারের শিকার হয়।ঢাকা, খুলনা ও সিলেট অঞ্চলের মানবপাচার চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি পাচার হওয়ার ঘটনা ঘটে খুলনা বিভাগে।

এসব বিভাগে কেন বেশি?

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে , বাংলাদেশের সব এলাকার বাসিন্দারাই মানব পাচারের শিকার হয়।তবে ঢাকা, খুলনা এবং সিলেট- এই তিনটি অঞ্চলের মানুষ বেশি পাচার হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে।যেসব এলাকার সাথে ভারতের সীমান্ত বেশি সেসব এলাকায় মানবপাচারের ঘটনা বেশি ঘটে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয় খুলনা বিভাগের কথা।

এই বিভাগের পশ্চিমাঞ্চলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাথে দীর্ঘ স্থল সীমান্ত রয়েছে এবং সেখান থেকে কলকাতাও দূরে নয়।যার কারণে ২০২০ সালে এই এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানবপাচারের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে অভিবাসন নিয়ে গবেষণার কাজ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রামরুর পরিচালক মেরিনা সুলতানা বলেন, যেকোন সীমান্ত এলাকা যেখানে পারাপারটা তুলনামূলক সহজ সেখানে অনিয়মিত অভিবাসনের সাথে সাথে মানবপাচারের বিষয়টিও ঘটে।"বাংলাদেশের কিছু এলাকা মানবপাচারের হাব বা পকেট হিসেবে কাজ করে। এসব এলাকায় মানবাপাচারকারী চক্র বেশ সক্রিয় থাকে এবং তারা সেখানকার বাসিন্দাদের নানা ধরণের প্রলোভন দেখিয়ে মানবপাচার করে থাকে"

মিজ সুলতানা বলেন, যেসব জেলা পকেট হিসেবে কাজ করে সেখানে দেখা যায় যে, অনেক মানুষ আগে থেকেই বিদেশে থাকে এবং তাদের দেখাদেখি অন্যরাও যেতে চায়। এসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি মানবপাচারের শিকার হয় নারীরা। উদাহরণ হিসেবে তিনি মানিকগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ এবং নরসিংদীর কথা তুলে ধরেন।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে যে, যেসব কারণে মানব পাচার হয় তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে উন্নত জীবনের আশায় এবং আর্থিক স্বচ্ছলতার  প্রলোভনে। প্রায় ৫১ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিক কারণে পাচারের শিকার হন।

অন্যদিকে ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন জেলার বাসিন্দাদের মধ্যে সৌদি আরব থেকে প্রত্যাবাসন করা হয়েছে ১১ জনকে, ভারত থেকে ০৫ জনকে এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে একজন করে বাংলাদেশিকে প্রত্যাবাসিত করা হয়েছে। এরা সবাই মানব পাচার শিকার হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাবাসন করে ফেরত পাঠানো হয়েছে সৌদি আরব থেকে। এরপরে ওমান থেকে দুইজন এবং ভারত থেকে একজনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।মিজ সুলতানা বলেন, ভাল চাকরীর প্রলোভনে যারা মানবপাচারের শিকার হয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা জানে না যে তারা আসলে পাচারের শিকার হচ্ছে। আর পাচারকারীরা তাদেরকে না বলে বিদেশ নিয়ে তাদের বিক্রি করে দেয়।

যেসব বিষয় মানবপাচারের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় তার মধ্যে রয়েছে, অর্থনৈতিক কারণ, অন্তরঙ্গ সঙ্গী যে কিনা মানবপাচারকারী, অভিবাসনের প্রলোভন, শিক্ষা এবং বিদেশি ভাষা জানার অভাব, মানসিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যাযুক্ত পরিবারের সদস্য হওয়া, বাবা-মায়ের যত্ন না পাওয়া শিশু এবং শারীরিক প্রতিবন্ধকতা।'ট্রাফিকিং ইন পার্সন্স ইন বাংলাদেশ' নামে প্রতিবেদনে বলা হয়, যারা মানবপাচারে যুক্ত থাকে, তারা আসলে অন্য কাজের তুলনায় এ কাজে বেশি অর্থ আয় সম্ভব হয় বলে এই অপরাধের সাথে জড়ায়।

তাদের হিসাবে, প্রতিটি মানবপাচারের জন্য একজন পাচারকারী ৫০ হাজার থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত টাকা আয় করে থাকে যা প্রচলিত পেশার তুলনায় অনেক বেশি।প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাথে প্রত্যাবাসনের চুক্তি রয়েছে সেসব দেশ থেকে যাদের ফেরত আনা ব্যক্তিদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই রিপোর্ট তৈরি করা হয়।

কিন্তু যেসব দেশের সাথে প্রত্যাবাসন চুক্তি নেই সেসব দেশে বাংলাদেশ থেকে কত মানুষ পাচার হয়েছে সে সংক্রান্ত কোন তথ্য এই প্রতিবেদনে নেই।প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশের ভেতরেই অনেকে পাচারের শিকার হয়।এতে বলা হচ্ছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে মোট ৭৩০ টি মানবপাচারের ঘটনা জানা গেছে। এছাড়া ২০১৭ সালে ৭৭৮টি এবং ২০১৮ সালে ৫৬১ টি মানবপাচারের ঘটনা জানা যায়।

সূত্র : বিবিসি