যুক্তরাষ্ট্রে গোলাপের বাড়ি : দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের

যুক্তরাষ্ট্রে গোলাপের বাড়ি : দুদককে অনুসন্ধানের নির্দেশ হাইকোর্টের

ফাইল ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুস সোবহান গোলাপের ৯টি বাড়ি কেনার বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

দুদকের পক্ষে অ্যাডভোকেট খুরশিদ আলম খান ও রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক শুনানি করেন।

এর আগে গতকাল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মো: আবদুস সোবহান মিয়ার (গোলাপ) যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে ৯টি বাড়ি কেনার বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করা হয়।

উল্লেখ্য, মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অভিযোগ জমা দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।

অভিযোগে তিনি বলেন, আবদুস সোবহান মিয়া গোলাপের যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কসহ বিদেশে একাধিক বাড়ি কেনার তথ্য ২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় তথ্য গোপন করেছেন। এ জন্য তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করছি। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। গোলাপের বিরুদ্ধে জমা দেয়া অভিযোগের বিষয়ে দুদক সচিব মো: মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নিয়ম অনুযায়ী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ওই সময় দুদক সচিব বলেন, অভিযোগ যে কেউ দিতে পারেন। অভিযোগ দাখিল করার পর দুদকের যে যাচাই-বাছাই কমিটি রয়েছে, তারা সব বিধিবিধান যাচাই করে দেখবেন, এটা দুদকের তফসিলের মধ্যে পড়ে কি না। যদি পড়ে তাহলে কমিশনের কাছে সুপারিশ করবে। এরপর কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। অভিযোগ যে মাধ্যমেই আসুক না কেন তা যাচাই-বাছাই কমিটির মাধ্যমে যাচাই করার পরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

দুদকে অভিযোগ জমা দেয়ার পর ব্যারিস্টার সুমন সাংবাদিকদের বলেন, মাদারীপুরের সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপ, যার বিষয়ে আমি একটা ভিডিও করেছি। অরগানাইজড ক্রাইম অ্যান্ড করাপশন রিপোর্টিং প্রজেক্ট বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাংবাদিকদের একটি প্রজেক্ট।
যেখানে বলা হয়েছে, আবদুস সোবহান গোলাপ ২০১৪-১৫ সালে যখন এমপি ছিলেন তখন তিনি কী পরিমাণ দেশ সেবা করেছেন যে, সেবা করতে করতে নিউ ইয়র্কে ৯টা প্রপার্টিজ করেছেন। যেগুলো তার নিজের নামে আছে এবং এখনো পর্যন্ত তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেননি।
সুমন বলেন, তিনি শপথ নেয়ার সাত মাস পর তার আমেরিকান সিটিজেনশিপ ত্যাগ করেছেন। অথচ আমাদের কনস্টিটিউশনে (সংবিধানে) আছে, আপনার যদি বিদেশী নাগরিকত্ব থাকে, তাহলে কোনোভাবেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট বলেছে, বিষয়টি দুদক দেখবে।

তিনি বলেন, আমি এতদিন অপেক্ষায় ছিলাম দুদক এ রকম একটি ক্রিস্টাল ক্লিয়ার বিষয়ে কোনো সরাসরি সুয়োমোটো গ্রহণ করে কি না। যেহেতু এখন পর্যন্ত দুদক গ্রহণ করেনি, তাই আমি নিজে আজ দুদক বরাবর অভিযোগ করে গেলাম। এটা আইনে আছে, যেকোনো ব্যক্তি দুদকে অভিযোগ করতে পারবেন। দুদক এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয় বা না নেয়, তা দেখে আমি পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

ব্যারিস্টার সুমন বলেন, গোলাপ সাহেবদের লেভেল পর্যন্ত দুদক পৌঁছাতে পারে না, এটি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। তিনি আরো বলেন, গোলাপ সাহেবের ৯টা সম্পত্তি শুধু নিউ ইয়র্কে পাওয়া গেছে। কত সম্পত্তি যে বাংলাদেশে আছে সেটির হিসাব তো আর আমি নিতে পারব না। এই লোকটা যদি এসব সম্পত্তি এমপি থাকাকালীন করে থাকেন, তাহলে আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের নাম ব্যবহার করে যে টাকাটা তিনি কামাই করেছেন অবৈধভাবে, এটা আপনি নিশ্চিত থাকেন নিপীড়িত আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু আদর্শের কর্মী যারা, তাদের কাছ থেকে নিয়েছেন। কাউকে পৌরসভার চেয়ারম্যান বানাবে, কাউকে এমপি বানাবেন এসব বলে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা নিয়েছেন।

সুমন বলেন, এত দীর্ঘসময় পরেও কী কারণে মানুষ আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে কষ্ট পায়, কারণ কিছু লোক টাকা বানিয়ে লাল হয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আত্মা কষ্ট পাবে এ ধরনের লোক গণভবনে থাকলে। তাকে অবশ্যই বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। দুদককে তার নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রেখে এ রকম সঠিক তথ্য পেয়েও যদি তদন্ত না করে, তাহলে তাদের ব্যাপারে নেগেটিভ ধারণা আসবে। এ জন্য আমি আজ অভিযোগ দিয়ে গেলাম, পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবো।