নারীদের সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে হবে : তথ্য সচিব
নারীদের সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে হবে : তথ্য সচিব
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেছেন, নারীদের চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপযোগী সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে হবে। নারী-পুরুষের যৌথ প্রচেষ্টায় দেশ তার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার কারণে নারীরা পিছিয়ে পড়েছিল। সরকার এখন এই জায়গা থেকে নারীদের এগিয়ে আনতে চায়। এই সুযোগকে কাজি লাগিয়ে নিজেদের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের মধ্যে চলে এসেছি, পঞ্চম শিল্প বিপ্লব আমাদের দোরগোড়ায়। আমাদের নারীদেরকে এই জায়গায় নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলতে হবে।’আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস কর্তৃক সংস্থার র্বোডরুমে আয়োজিত আজ এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তথ্য সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এসব কথা বলেন।
বাসস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংস্থার ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুর রহমান, প্রধান বার্তা সম্পাদক সমীর কান্তি বড়–য়া ও রুহুল গনি সরকার জ্যোতি, সিটি এডিটর মধু সূদন মন্ডল, বার্তা সম্পাদক নূরে জান্নাত আক্তার সীমা, সিনিয়র রিপোর্টার সেলিনা শিউলী, সিনিয়র সাব এডিটর রোকসানা ইয়াসমিন তিথি।
তথ্য সচিব বলেন, ‘চতুর্থ এই শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জিং সময়ে নিজেদের স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি বলেন, স্মার্ট সিটিজেন তৈরি করার দায়িত্ব কেবল সরকারের নয়। যোগ্য নাগরিক তৈরি করার দায়িত্ব দেশের প্রতিটি নাগরিকের। বিশ্ব এখন অটুমেশনের দিকে যাচ্ছে। যিনি এর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবেন না, তিনি পিছিয়ে পড়বেন। দূত হিসেবে সাংবাদিকরা সমাজের প্রতিটি স্তরে এই বার্তাটি পৌছে দিতে হবে।
হুমায়ুন কবীর খোন্দকার বলেন, যিনি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারবেন তিনি পারিশ্রমিক পাবেন অনেক বেশি। আবার যিনি নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তুলতে পারবেন না, তার পারিশ্রমিক অনেক নিচে চলে আসবে। অর্থ্যাৎ ব্যবধানটা হবে অনেক বেশি। তিনি বলেন, নারী দিবস একদিনে সীমাবদ্ধ না করে, বছরের প্রতিটি দিন পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র, কর্মক্ষেত্র প্রতিটি ক্ষেত্রে এর চর্চা করতে হবে। তাহলে নিঃসন্দেহে এই দিবসের উদ্দেশ্য সফল হবে।
সচিব বলেন, ‘একজন সুশিক্ষিত মানুষ হিসেবে আমাদের নারীর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে, দেশের প্রতি অবদান ও ত্যাগের স্বীকৃতি সরূপ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান জানাতে হবে এবং বয়োবৃদ্ধদের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। এই জায়গাগুলো যদি আমরা চর্চা করি তাহলে এই নারী দিবসের উদ্দেশ্য সফল হবে। প্রতিটি দিনই হোক এই দিবস তাহলেই পরিবার, সমাজ ও দেশ সুন্দর হবে।’
মার্চ মাসের গুরুত্ব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এই মাসটি আমাদের জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই মাসটি আমাদের অগ্নিঝড়া মার্চ। কারণ ৭ মার্চে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। ৮ মার্চে নারীরা আন্দোলন করে আন্তর্জাতিক নারী দিবস আদায় করেছে। ১৭ মার্চ জাতির পিতার জন্ম না হলে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতো না। ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। অর্থ্যাৎ এই মাসটি আন্দোলনের মাস। আমরা সবাই এই মাসটিকে গুরুত্ব দিবো।’
নারীদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সরকার গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে তথ্য সচিব বলেন, পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার ১৯১৭ সালে বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন প্রণয়ন করেছে, ২০১৮ সালে বাল্য বিবাহ নিরোধ বিধিমালা প্রণয়ন করেছে, ২০১৮ সালে যৌতুক নিরোধ আইন প্রণয়ন করেছে, ২০১৪ সালে ডিএনএ আইন প্রণয়ন করেছে, ২০১০ সালে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আউন প্রণয়ন করেছে, ২০১০ সালে এসিড নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন করেছে, ২০০০ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন প্রণয়ন করেছে। নারীদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য এবং অপরাধীদের আইনী কাঠামোতে নিয়ে আসার জন্য সরকার এই আইনগুলো পাস করেছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের ১৪ মে সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকার শিশু এবং নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় পর্যায়ে এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে এগুলো মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশের সংবিধানে নারী-পুরুষসহ দেশের সকল নাগরিকের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের নানামূখী উদ্যোগের ফলে বর্তমান সমাজে নারীরা তাদের যোগ্যতা দিয়ে অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দূরদর্শিতা, দক্ষতা ও যোগ্যতায় আজ অন্যতম বিশ্ব নেত্রী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।তিনি বলেন, সমাজের সচেতন মানুষ হিসেবে পরিবার ও সমাজে নারীর প্রতি আমাদের সম্মান জানানো উচিত। নারীকে নারী নয়, তাকে মানুষ হিসেবে দেখতে হবে। তবেই উন্নত সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
সূত্র : বাসস