পাবনায় আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে কৃষিজমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির অভিযোগ

পাবনায় আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে কৃষিজমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির অভিযোগ

পাবনায় আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে কৃষিজমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির অভিযোগ

পাবনায় এক আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে কৃষিজমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির অভিযোগ ওঠেছে। পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ ওঠেছে।কৃষি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অনুমতি রয়েছে বলে দাবি করে প্রভাবশালী এ আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল করিম কোন কিছুই তোয়াক্কা না করে স্বাভাবিকভাবেই দেদারছে এ কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।

অবশ্য জেলা প্রশাসক বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, আমরা কাউকে কোন অনুমোদন দেইনি। পুকুর খনন বা মাটি কাটার অনুমোদন বন্ধ রয়েছে। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এখন পর্যন্ত মনোহরপুর ব্র্যাক প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনে কৃষি জমিতে এই পুকুর খনন কাজ চলছে। এই কাজের সার্বিক তত্বাবধান করছেন মালিগাছা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাবশালী আব্দুল করিম ও তার ভাই নাজেম উদ্দিন। তাদের প্রভাবে এলাকায় কেউ কিছু বলার সাহস পান না। আটমাইলের বাদশা মোল্লা নামের এক ইটভাটার মালিকসহ কয়েকজনের কাছে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার মাটি বিক্রি করেছেন এই প্রভাবশালী চক্রটি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, প্রতিদিন ৮ থেকে ১০টি অবৈধ ড্রাম ট্রাকে এই মাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ভোর থেকে শুরু করে রাত দশটা থেকে ১২টা পর্যন্ত এই মাটি ড্রাম ট্রাকযোগে নিয়ে যাওয়া হয়। ইতোমধ্যে রিক্সাচালক তারু প্রামানিক, অটো চালক ইউনুছ আলী, কাট মিস্ত্রি আব্দুল লতিফ, তার ভাই রিক্সাচালক শরীফ উদ্দিন, দিনমজুর শরীফুল ইসলাম, তহুরা খাতুন, চাম্পা খাতুনসহ বেশ কয়েকজনের বাড়ির পাশ দিয়ে ও আঙিনা দিয়ে এই ড্রাম ট্রাক চলাচল করায় বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এলাকার প্রধান আব্দুল আলীম আব্দুল্লাহ বলেন, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় তাকে কেউ কিছু বলতে পারছেন না। দীর্ঘদিন ধরেই এই মাটি কাটা ও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। চরম সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছে গ্রামের মানুষ। উপজেলা প্রশাসন ও থানা থেকে পুলিশ ফোর্স আসলেও রহস্যজনক কারণে তারা চলে চলে যায়।

মনোহরপুর উত্তরপাড়া জামে মসজিদ, ঈদ, এবতেদায়ী মাদরাসা ও গোরস্থান। এই চারটি প্রতিষ্ঠানের উপর দিয়েই চলছে এই ড্রাম ট্রাক। একদিকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। অন্যদিকে পাবনা-ঈশ্বরদী সড়ক সংযুক্ত গ্রামের পাকা পিচঢালা রাস্তা ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দের। সড়কের আশপাশের বাড়ির মানুষগুলো ধুলাবালি ও উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন। আসন্ন বৃষ্টির মধ্যে এই সড়কে চলাচলে চরম সমস্যার মধ্যে পড়বে স্থানীয়রা। পাশাপাশি বেশ কিছু বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে।

মনোহরপুর উত্তরপাড়া জামে মসজিদের সামনে ঈদগার ক্ষতি করে এ সকল মাটির ট্রাক চলাচল করছে এ বিষয়ে জানতে কমিটির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, শুনেছি কিছু মানুষের যাতায়াতের কোন পথ নেই। তাদের রাস্তা বেধে দেবে এমন চুক্তিতে মাটি নিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন তারা। আমি বা প্রতিষ্ঠান কোন টাকা নেইনি। কোথায়ও কোন অভিযোগও করিনি।

কৃষি জমিতে পুকুর খনন ও মাটি বিক্রির বিষয়ে জানতে আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল করিমকে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছি। আগামী জুন পর্যন্ত মাটি কাটবো। সবাই মাটি কাটছে, আমি কাটলে দোষ কোথায়। সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন পুকুর কাটছেন, মাটি বিক্রি করছেন। তাকে ধরেন। পুলিশ প্রশাসন সবাই আসে, সবাই নিয়ে যায়। আপনিও আসেন। দেখা করেন। নিয়ে যান। নিউজ করার দরকার নেই।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী আনিসুর রহমান মন্ডল বলেন, ১০/১৫ টনের ধারণ ক্ষমতায় আমরা সড়ক নির্মাণ করি। সেখানে ৩০ থেকে ৪০ বা ৫০ টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন যানবাহন চলাচল করে। খবর পেয়ে আমরা জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য লিখিতভাবে জানিয়ে থাকি। এর বাইরে দেখভালের সুযোগ আমাদের নেই বলে জানিয়ে দিলেন।