সুদানে অব্যাহত লড়াইয়ের মধ্যে খাদ্য সংকটের আশংকায় খার্তুমের মানুষ

সুদানে অব্যাহত লড়াইয়ের মধ্যে খাদ্য সংকটের আশংকায় খার্তুমের মানুষ

সুদানে অব্যাহত লড়াইয়ের মধ্যে খাদ্য সংকটের আশংকায় খার্তুমের মানুষ

সুদানের রাজধানী খার্তুমে এখন যে তীব্র লড়াই চলছে, তার ফলে সেখানে খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। একই সঙ্গে পানি এবং বিদ্যুৎ সরবরাহেও সংকট দেখা দিয়েছে বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন শহরের বাসিন্দারা।“আমাদের আর মাত্র দুদিনের খাবার আছে”, বলছেন নাসরিন আল-সাইম।

মিজ সাইম জানান, তিনি এবং তার পরিবার সাধারণত যে পরিমাণ খাবার খান, এখন সেই খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন, যাতে করে তাদের মজুদ করা খাবার আরও বেশিদিন যায়।বিদ্যুৎ এবং পানির সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক সুদানি পরিবার এখন সংকটে পড়েছে।সুদানে গত ১৫ এপ্রিল হতে দেশটির সেনাবাহিনী এবং প্যারা-মিলিটারি বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সের (আরএসএফ) মধ্যে লড়াই চলছে।

সুদানে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে সরকার চালাচ্ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান, যিনিই কার্যত দেশটির নেতা এবং আরএসএফের প্রধান মোহাম্মদ হামদান দাগালু, যিনি ছিলেন উপ-নেতা। কিন্তু এই দুজনের ক্ষমতার দ্বন্দ্বে দুই বাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে।খার্তুমে মার্কিন দূতাবাসের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সেখানে লড়াইয়ে এ পর্যন্ত ২৭০ জনের বেশি নিহত হয়েছে।

দোকানপাট বন্ধ

খার্তুমের উত্তরে বাহরি এলাকা থেকে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে জানান, সেখানে পানি সরবরাহের প্রধান পাম্পিং স্টেশনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।স্থানীয় বাসিন্দা হিন্দ জানান, পানির সরবরাহ যেহেতু ঘন ঘন বিঘ্নিত হচ্ছে, তাই তিনি এবং তার পরিবার এখন পিপাসা মেটাতে ‘আবরি’ পান করছেন। আবরি হচ্ছে ভুট্টা দিয়ে তৈরি একধরণের পানীয়, যেটি সাধারণত লোকে রমজান মাসে পান করে।

হিন্দ জানান, তার এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ, কেবল কিছু বেকারি খোলা আছে। তবে এসব বেকারিতেও আর অল্প পরিমাণ ময়দা অবশিষ্ট আছে।এই লড়াই শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে সেনাবাহিনী খাদ্য মওজুদ করার জন্য জনগণকে সতর্ক করে দিয়েছিল। তখন রাজধানী খার্তুমের বিভিন্ন স্থানে আরএসএফের বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছিল।

তবে খার্তুমের আরেকজন বাসিন্দা হেবা বিবিসিকে জানান, “কেবল অল্প কিছু পরিবার” এই সতর্কতাকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল, কারণ কেউ কল্পনা করেনি যে পরিস্থিতি এরকম ভয়াবহ রূপ নেবে।“আমরা গরমের মধ্য বাইরে যেতে চাইনি, আর রমজান উপলক্ষে আমরা আগে থেকেই কিছু খাবার-দাবার কিনে মজুদ করে রেখেছিলাম”, বলছিলেন হেবা।

জাতিসংঘের ত্রাণ স্থগিত

হেবা যে এলাকায় থাকেন, সেখানে দিনে মাত্র দুই ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। এর ফলে যারা খাদ্য কিনে মজুদ করেছিলেন, সেগুলো নষ্ট হয়ে যেতে পারে।এই লড়াই কবে থামবে তা একদম বোঝা যাচ্ছে না। ফলে কতদিন খাদ্য সরবরাহ বিঘ্নিত হবে, সেটাও পরিষ্কার নয়।

এরই মধ্যে দুই দফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু বিবদমান দুই পক্ষই লড়াই অব্যাহত রাখায় যুদ্ধবিরতি টেকেনি।প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, খার্তুমের যেসব এলাকায় লড়াইয়ের তীব্রতা কিছুটা কমেছে, সেসব এলাকায় মুদির দোকানগুলো খুলেছে। এসব দোকানের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যাচ্ছে। তবে বোতল-জাত খাবার পানি পাওয়া যাচ্ছে না।তবে খার্তুমের অন্য এলাকাগুলোতে লোকজন এখনো ভয়ে ঘর থেকে বেরুচ্ছে না।

খার্তুমের উত্তরের আরেকটি এলাকা রিয়াদের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, সেখানে দোকানদাররা জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে ডিম, মাংস বা পানীয়ের মত পণ্যের দ্বিগুণ দাম চাইছে।“এদের অনেকে তাদের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে, এটা খুবই খারাপ। দোকানদাররা দাম বাড়ানোয় অনেকে বেশ ক্ষিপ্ত ”, বলছেন শাকির নামের একজন।শাকির জানান, খার্তুমের অন্যান্য জায়গা থেকেও তিনি এরকম জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়ার খবর শুনেছেন।

“আমরা আশা করছি এই লড়াই শীঘ্রই বন্ধ হবে। কিন্তু কিছু কিছু জিনিসের মজুদ তো ফুরিয়ে এসেছে। লোকজনকে যদি বাঁচতে হয়, তাহলে তো তাদের খাওয়া কমিয়ে দিতে হবে”, বলছেন তিনি।পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডাব্লিউএফপি) সুদানে তাদের ত্রাণ সাহায্য স্থগিত রাখার ঘোষণা দেয়ার পর। দার্ফুর অঞ্চলে তাদের তিনজন কর্মী নিহত হওয়ার পর গত ১৬ এপ্রিল জাতিসংঘ এই ঘোষণা দেয়।

এবছরের শুরুতে জাতিসংঘ বলেছিল, সুদানের দুই তৃতীয়াংশ মানুষের (প্রায় দেড় কোটি মানুষ) ২০২৩ সালে মানবিক ত্রাণ সাহায্য দরকার হবে। সুদানে ২০২১ সালে যখন এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী আবদাল্লাহ হামদককে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়, তখন সেখানে দাতা দেশগুলো সাহায্য দেয়া স্থগিত রাখে। এর ফলে সুদানের পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।

সুদানের একটি রাজনৈতিক জোট, ‘ফোর্সেস ফর দ্য ফ্রিডম এন্ড চেঞ্জ’ এর মুখপাত্র আবলা কারার বলেন, সুদানের পরিস্থিতি যখন নাজুক, তখন জাতিসংঘের এই সিদ্ধান্ত দুঃখজনক।এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “সুদান এমনিতেই বিরাট এক অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কাজেই দেশের ভেতরে খাদ্যের মওজুদ যতটুকুই থাক না কেন, সেটি যথেষ্ট হবে না।”তিনি আরও বলেন সুদানে একটি “তীব্র মানবিক সংকট” তৈরি হওয়ার আগেই সেখানে একটি যুদ্ধবিরতি দরকার।

সূত্র : বিবিসি