দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই হবে স্বেচ্ছাসেবী দল : ডিএসসিসি মেয়র

দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই হবে স্বেচ্ছাসেবী দল : ডিএসসিসি মেয়র

দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই হবে স্বেচ্ছাসেবী দল : ডিএসসিসি মেয়র

দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রতিটি ওয়ার্ডেই ন্যূনতম ২০০ সদস্যের স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।  

তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে ন্যূনতম ২০০ সদস্য নিয়ে আমরা স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করতে চাই। যেকোনো দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে তাৎক্ষণিকভাবে এসব দল যেন প্রস্তুত থাকে, সাড়া দিতে পারে, আমরা সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাই। এসব দলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের স্কাউটসে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরা থাকবে। তাদের বয়স সীমা থাকবে ১৬ বছর থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত। প্রত্যেক ওয়ার্ডে যেসব মার্কেট রয়েছে, সেসব মার্কেটের নিরাপত্তারক্ষীরাও এ দলে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তবে তাদের বয়সসীমা শিথিল করা হবে। আগামী ৩০ মে এর মধ্যে প্রতিটি ওয়ার্ডেই এসব স্বেচ্ছাসেবী দল গঠন করা হবে।’
আজ দুপুরে নগর ভবনে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির তৃতীয় সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ডিএসসিসি মেয়র এ তথ্য জানান। 

স্বেচ্ছাসেবীদের প্রশিক্ষণ ও মহড়া আয়োজনের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার শেখ তাপস বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী একটা নির্দেশিকা প্রণয়ন করব। সে নির্দেশিকার আলোকে বাৎসরিক সূচি প্রণয়ন করা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতি তিন মাসে এবং পরবর্তীতে প্রতি মাসেই স্বেচ্ছাসেবীদের নিয়ে অঞ্চল ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও মহড়ার আয়োজন করা হবে। যেমন- কোনো বড় স্থাপনা চিহ্নিত করে সে স্থাপনায় দুর্যোগ হলে কী কী করণীয়? এভাবে স্থাপনা কেন্দ্রিক অঞ্চল ভিত্তিক মহড়া হবে। সেজন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আগামী বাজেটে দুর্যোগ মোকাবেলা খাতে অর্থ বরাদ্দ রাখা হবে। এসব প্রশিক্ষণ ও মহড়ায় যে ব্যয় হবে তা সিটি কর্পোরেশন বহন করবে। কারণ, আমরা লক্ষ্য করি যে, এসব নিয়ে যখন কোন প্রকল্প সরকারের কাছে যায়, তখন সেখান থেকে অর্থ ছাড় করে এসে তা মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।’

দুর্যোগ মোকাবেলায় দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন উদ্যোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দুর্যোগ মোকাবেলায় ইতোমধ্যে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির পর্যালোচনা ও সুপারিশ অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের জন্যও বাজেটে আর্থিক বরাদ্দ রাখা হবে। যাতে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে মানবিক কারণেও দাঁড়াতে পারি। এছাড়াও দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দক্ষিণ সিটিতে একটি জরুরি সাড়া দান কেন্দ্র বা ইমার্জেন্সি রেসপন্স সেন্টার প্রতিষ্ঠা করছি। আগামী জুনের মধ্যেই এটি চালু হবে।’

দুর্যোগ মোকাবেলায় ‘দুর্ঘটনাস্থলে সামগ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা’ বিষয়ক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, আজকের বৈঠকে ১১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহবায়ক এবং পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও কমিটিতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশন, ডিএমপি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ডিসিসিআই, জেলা প্রশাসন ও রেড ক্রিসেন্টের প্রতিনিধি থাকবে। কমিটি আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী দুর্যোগ মোকাবেলায় নির্দেশিকা প্রণয়ন করবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজউক ইতোমধ্যে ৪২টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং ১৯৭টি ভবন সংস্কারের সুপারিশ করেছে। এ তালিকা আগামী ৭ দিনের মধ্যে রাজউক আমাদের কাছে হস্তান্তর করবে। এ ৪২টি ভবন - সেটা সরকারি বা বেসরকারি যা-ই হোক না কেন তা কতদিনের মধ্যে ভেঙে ফেলা যায় এবং ১৯৭টি ভবন সংস্কার করে তা কতদিনের মধ্যে ব্যবহার উপযোগী করা যায় সে বিষয়েও শিগগিরই পদক্ষেপ নেয়া হবে।  

বৈঠকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রথম ও দ্বিতীয় সভার সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়ন অগ্রগতি; ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় সম্প্রতি সংঘটিত অগ্নিকান্ডসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনার বিষয় নিয়ে আলোচনা; কর্পোরেশন এলাকায় অগ্নি দুর্ঘটনা হ্রাসকরণ এবং অগ্নি দুর্ঘটনা পরবর্তী করণীয়; ভূমিকম্প এবং তৎপরবর্তী উদ্ধার তৎপরতা; রাসায়নিক দুর্ঘটনা প্রশমন ও সতর্কীকরণ এবং দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার কার্যক্রমে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা করা হয়। 

কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি ব্যারিস্টার সামির সাত্তার, দক্ষিণ সিটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি, কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটির সদস্যদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লে. কর্নেল মো. রেজাউল করিম, বিএনসিসি’র লে. কর্নেল রাশেদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক মো. ফিরোজ উদ্দিন, রাজউক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দিন আহমদ, বিআরটিএ'র পরিচালক এ টি এম কামরুল ইসলাম, বিটিসিএল’র উপ-মহাব্যবস্থাপক এ এম আব্দুল্লাহ পাটওয়ারী, তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক মো. আব্দুর রউফ, সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. এমদাদুল হক, ঢাকা জেলা প্রশাসন, ডিপিডিসি, গার্লস গাইড, বাংলাদেশ স্কাউটস, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, গণপূর্ত অধিদপ্তর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, ক্যাব, বাংলাদেশ ভূ-তাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তর, বিসিআইসি, আনসার ভিডিপি, ডিআরআরও এর প্রতিনিধি এবং কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র  : বাসস