পাকিস্তান যেভাবে ওয়ানডের এক নম্বর দল হয়ে উঠলো

পাকিস্তান যেভাবে ওয়ানডের এক নম্বর দল হয়ে উঠলো

পাকিস্তান যেভাবে ওয়ানডের এক নম্বর দল হয়ে উঠলো

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর পাকিস্তানের ক্রিকেটের জন্য বাবর আজমের দল নিয়ে এলো আরও এক সুখবর - আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে এখন এক নম্বর দল পাকিস্তান।

ওয়ানডে ক্রিকেটের ৫২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তান র‍্যাংকিংয়ের এক নম্বরে জায়গা করে নিলো।এখন আইসিসির ওয়ানডে ফরম্যাটের র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থানে রয়েছে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা।চলতি বছর আছে ওয়ানডে বিশ্বকাপ, এমন সময়ে পাকিস্তান ভগ্নাংশের ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়াকে এবং এক পয়েন্টের ব্যবধানে ভারতকে পেছনে ফেলে ওয়ানডের এক নম্বর দল হয়ে উঠেছে।

এর আগে ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপে পাকিস্তানের একটি ক্রিকেট দল এমন দাপট ও ফর্ম নিয়ে বিশ্বকাপে গিয়েছিল, কিন্তু শোয়েব আখতার, শহীদ আফ্রিদি, ইনজামাম উল হক, ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনিসের সেই দলটি প্রথম রাউন্ডেই বাদ পড়ে গিয়েছিল।

ঠিক বিশ বছর বাদে পাকিস্তান দল আবারও ফেভারিট হিসেবে বিশ্বকাপে যাচ্ছে, এবারে সাবধানী অধিনায়ক বাবর আজম।অধিনায়ক ও শীর্ষ ব্যাটার হিসেবে নিজের দায়িত্ব নিয়ে সচেতন বাবর আজম আইসিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, “বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক হতে পারলে দারুণ হবে।"

র‍্যাংকিংয়ে পাকিস্তানের উন্নতি কীভাবে

২০১১ সালের পর টানা দুই ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তান সেমিফাইনালেও খেলতে পারেনি।টুর্নামেন্টের মাঝামাঝি পর্যায়েই দলটির বিদায় একরকম নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেট দল এমনই অননুমেয় যে এরই মাঝে দুবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলে ফেলেছে, একবার খেলেছে ফাইনাল, ছয় বছর আগে মিনি বিশ্বকাপ নামে পরিচিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিও জিতেছে।

তাই পাকিস্তান ক্রিকেট দল নিয়ে আগাম কোনও বিশ্লেষণ করার আগে বিশ্লেষকরা একটু ভাবেন।তবে বাবর আজমের পাকিস্তান দল পূর্বসুরীদের তুলনায় খানিকটা ধারাবাহিক।২০১৯ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে টানা নয় ম্যাচ হেরেছিল পাকিস্তান। এরপর বাবর আজমের নেতৃত্বে কখনোই এমন ব্যর্থতার মুখ দেখেনি দলটি।

পাকিস্তানের শেষ দশটি সিরিজ

পাকিস্তান-ইংল্যান্ড ০-৪

পাকিস্তান ২-০ শ্রীলঙ্কা

পাকিস্তান ২-১ জিম্বাবুয়ে

পাকিস্তান- দক্ষিণ আফ্রিকা ২-১

পাকিস্তান- ইংল্যান্ড ০-৩

পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া ২-১

পাকিস্তান- ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩-০

পাকিস্তান-নেদারল্যান্ডস ৩-০

পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ১-২

পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড ৪-০ (চলমান)

ওয়ানডে ক্রিকেটের বর্তমান বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড বাদে প্রায় সব দলের বিপক্ষেই জয় পেয়েছে পাকিস্তান।ভারত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে এই সময়ের মধ্যে কোনও ওয়ানডে সিরিজ খেলা হয়নি।

তবে নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দলগুলোকে সিরিজে হারানোর পর এবারে শিরোপার দিকে চোখ পাকিস্তানের।পাকিস্তানের তারকা ফাস্ট বোলার শাহিন শাহ আফ্রিদি গণমাধ্যমে বলেছেন, “এই বছর এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ দুটোই জিতবে পাকিস্তান।"

কারা ভালো করছে পাকিস্তানের

পাকিস্তান দলটিকে এখন ব্যাট ও বল হাতে বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক মানের তারকা রয়েছেন।ওয়ানডে ক্রিকেটে আইসিসির র‍্যাংকিংয়ে শীর্ষ পাঁচজন ব্যাটারের তিনজনই পাকিস্তানের।অধিনায়ক বাবর আজম আছেন এক নম্বরে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি বিশ্বের সেরা ওয়ানডে ব্যাটার হিসেবে ভিরাট কোহলিকে টেক্কা দিয়েছেন।বাবর আজমের রেটিং পয়েন্ট ৮৮৭।দুই নম্বরে আছেন ফখর জামান ও পাঁচ নম্বরে ইমাম উল হক।বাবর আজম সম্প্রতি ওয়ানডে ইতিহাসের দ্রুততম সময়ে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন।অলরাউন্ডারদের তালিকায় আছেন শাদাব খান ও মোহাম্মদ নাওয়াজ।

কিছুদিন হলো শাহীন শাহ আফ্রিদি ব্যাট হাতে ছোট কিন্তু কার্যকরী কিছু ইনিংস খেলছেন, নিজের ছক্কা মারার সামর্থ্য বাড়িয়েছেন ফাস্ট বোলার হিসেবে পরিচিত আফ্রিদি।পাকিস্তানের একটা শক্তিশালী ফাস্ট বোলিং ইউনিট আছে, নাসিম শাহ, শাহীন শাহ, হারিস রওফদের মতো বোলার আছেন যেখানে।

ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে পাকিস্তানের অবস্থান খুব বেশিদিন স্থায়ী না হলেও এটা পাকিস্তানের ক্রিকেটারদের জন্য একটা প্রাপ্তি ও আত্মবিশ্বাস জোগাবে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।গত দুই বছরে দুইবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের কাছে গিয়েও ফিরে এসেছে পাকিস্তান।বিবিসি উর্দুর পডকাস্ট ডাবল উইকেট ময়দানে আলাপ করছিলেন সঞ্চালক ইমান তুফায়েল আরবাব ও সাংবাদিক উমার ফারুক কালসন।ইমান তুফায়েল বলেন, পাকিস্তানকে এখন সতর্ক থাকতে হবে।

পাকিস্তান দলটা এমন যে কোনও না কোনও জায়গায় একটা ফাঁক থেকেই যায়, কিন্তু এই দলটাকে সম্পূর্ণ মনে করেন মি. আরবাব।তিনি বলেন, “একটা সময় ছিল মিডল অর্ডার বলতে কিছু ছিল না। এখন একটা দারুণ টপ অর্ডার আছে, একটা স্থিতিশীল মিডল অর্ডার আছে এবং ভালো স্পিনার ও ফাস্ট বোলার রয়েছে।”দীর্ঘদিন পাকিস্তানের ক্রিকেটে বড় সমস্যা হিসেবে বিরাজ করেছে ক্রিকেটারদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব।

২০১১ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত শহীদ আফ্রিদি ও মিসবাহ উল হকের মধ্যে অধিনায়কত্ব নিয়ে মনোমালিন্য ছিল স্পষ্ট, এর আগে ২০০৩ সালে ওয়াকার ও ওয়াসিমের মধ্যে ঝামেলার কথা গণমাধ্যমে এসেছিল।পাকিস্তানের বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাবর আজমকে নিয়ে এমন কোনও সমস্যা নেই। এটাকে ‘বাবরের জমানা’ বলছেন সমর্থকরা।

সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে দেখা গেছে পাকিস্তানের একাদশ একজন বা দুজন ক্রিকেটারের ওপর নির্ভরশীল নয়, এমনকি যেসব ম্যাচে বাবর আজম নিজে পারফর্ম করতে পারছেন না, রিজওয়ান, ফখরদের মতো ব্যাটাররা সেটা পুষিয়ে নিতে পারছেন।

সূত্র  : বিবিসি