তাওবার পর আবারও গুনাহ করলে করণীয়

তাওবার পর আবারও গুনাহ করলে করণীয়

প্রতিকী ছবি

শয়তানের ধোঁকায় পড়ে মানুষ বারবার গুনাহ করে ফেলে, গুনাহের পথ থেকে সরে আসার জন্য তাওবা করে, আবারও আল্লাহর অবাধ্যতায় লিপ্ত হয়। গুনাহ হয়ে গেলে স্বভাবতই মুমিনরা অনুতাপে ভোগেন, পরবর্তী করণীয় ভেবে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। এই দুশ্চিন্তা থেকে কেউ পাপাচারেই অটল থাকেন এই ভেবে যে, আল্লাহ তাআলা হয়ত আর মাফ করবেন না। এই অনুভূতি আদৌ কাম্য নয়।

কারণ পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یَغۡفِرُ الذُّنُوۡبَ جَمِیۡعًا ؕ اِنَّهٗ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ‘(হে রাসুল আপনি) বলুন, হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছো- (তোমরা) আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না; আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। তিনি তো ক্ষমাশীল ও দয়ালু।' (সুরা জুমার: ৫৩)

মূলত গুনাহ হয়ে গেলে দ্রুত তাওবা করে নেওয়া জান্নাতি মানুষের বৈশিষ্ট্য। গুনাহে অটল থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়। কারণ আল্লাহ ছাড়া কে আছে যে গুনাহ মাফ করতে পারে? সে কথা পবিত্র কোরআনে বিধৃত হয়েছে এভাবে—

‘(ভালো মানুষ হচ্ছে তারা) যারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেলে কিংবা নিজেদের ওপর নিজেরা জুলুম করে ফেলে, (সঙ্গে সঙ্গেই) তারা আল্লাহকে স্মরণ করে এবং গুনাহের জন্যে (আল্লাহর কাছে) ক্ষমা প্রার্থনা করে। কেননা আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যে গুনাহ মাফ করে দিতে পারে? (তদুপরি) এরা জেনে বুঝে নিজেদের গুনাহের ওপর কখনও অটল হয়ে বসে থাকে না। এই মানুষগুলোর প্রতিদান হবে, আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমা করে দেবেন। আর (তাদের) এমন এক জান্নাত (দেবেন) যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা বইতে থাকবে, সেখানে (নেককার) লোকেরা অনন্তকাল অবস্থান করবে। সৎকর্মশীল ব্যক্তিদের জন্যে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) কত সুন্দর প্রতিদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।' (সুরা আল ইমরান: ১৩৫-১৩৬)

বারবার তওবার কথা বলেছেন রাসুলুল্লাহ (স.)

আবু হুরায়রা (রা.) সূত্রে নবী (স.) স্বীয় রব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ‘জনৈক বান্দা পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মার্জনা করে দাও। তারপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে, যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে ধরেন। এ কথা বলার পর সে আবার পাপ করল এবং বলল, হে আমার রব! আমার পাপ ক্ষমা করে দাও। তারপর আল্লাহ তাআলা বললেন, আমার এক বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন রব আছে যিনি পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে শাস্তি দিতে পারেন। তারপর সে পুনরায় পাপ করে বলল, হে আমার রব! আমার পাপ মাফ করে দাও। এ কথা শুনে আল্লাহ তাআলা পুনরায় বলেন, আমার বান্দা পাপ করেছে এবং সে জানে যে, তার একজন প্রভু আছে, যিনি বান্দার পাপ মার্জনা করেন এবং পাপের কারণে পাকড়াও করেন। তারপর আল্লাহ তাআলা বলেন, হে বান্দা! এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল করো। আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছি। বর্ণনাকারী আবদুল আ’লা বলেন, “এখন যা ইচ্ছা তুমি আমল করো” কথাটি আল্লাহ তাআলা তৃতীয়বারের পর বলেছেন, না চতুর্থবারের পর বলেছেন, তা আমি জানি না।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭৫৮)

বান্দার গুনাহ আল্লাহ প্রতিবারই ক্ষমা করে দেন

বান্দা গুনাহ করে বারবার তওবা করলে প্রতিবারই আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেন। পাপ করার পর ক্ষমা প্রার্থনাকারী বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা বর্ণনা করতে গিয়ে নবীজি (স.) বলেছেন– ‘সেই মহান সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! যদি তোমরা পাপ না কর, আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে (তোমাদের পরিবর্তে) এমন এক জাতি আনয়ন করবেন, যারা পাপ করবে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাও করবে। আর আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম: ২৭৪৮)

এই হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে—আল্লাহ তাআলা ওসব বান্দাদের পছন্দ করেন না যারা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে না, বরং ওসব বান্দারাই আল্লাহর কাছে উত্তম যারা গুনাহ করে ফেললে তাওবা-ইস্তেগফার করেন। আল্লাহ তাআলা তাদের ক্ষমাও করে দেন। তবে, যেন-তেন তাওবা করলে হবে না। বরং তাওবা কবুলের শর্তগুলো মেনেই ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে। 

তাওবা কবুলের শর্ত

আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা কবুল ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। ১) পাপ সম্পূর্ণরূপে বর্জন করতে হবে। ২) পাপের জন্য অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে। ৩) ওই পাপ আগামীতে না করার দৃঢ় সঙ্কল্প করতে হবে। ৪) কারো হক নষ্ট করার গুনাহ হলে আগে তা পরিশোধ করে দিতে হবে।

উল্লেখিত শর্তগুলো না মেনে তাওবা করলে সেই তাওবার মূল্য নেই। তাই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর বিশুদ্ধ তওবা।’ (সুরা তাহরিম: ৮)

তাওবার গুরুত্ব

তাওবার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে অনেক আয়াত ও নবীজির অনেক হাদিস রয়েছে। এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, 'হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর দরবারে তাওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; আমি প্রতিদিন ১০০ বার তওবা করি।’ (বুখারি: ২৭০২)

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গুনাহসমূহ নেকি দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন।’ (সুরা ফুরকান: ৭০)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি তাওবা-ইস্তেগফার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।