ফুটপাত হকারদের দখলে (লাল, হলুদ ও সবুজ জোন করা হয়েছে কিন্তু মানছেন না কেউই)

ফুটপাত হকারদের দখলে (লাল, হলুদ ও সবুজ জোন করা হয়েছে কিন্তু মানছেন না কেউই)

ফুটপাথের প্রতীকী ছবি।

রাজধানীর গুলিস্তানসহ আশপাশের বেশিরভাগ এলাকার সব ফুটপাথই দখল হয়ে গেছে। সাধারণ পথচারীদের এই হাঁটার স্থানকে কেন্দ্র করে চলে লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য। আর এসব বাণিজ্যে জরিত এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কোথাও কোথাও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নামও শোনা যায়। বেশিরভাগ এলাকাতেই হকারদের দখলে চলে গেছে রাস্তা। বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাথ দখল করতে করতে পুরো রাস্তায় দখলে নিয়েছেন হকাররা। হকারদের রাস্তা দখলের কারণে এসব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় পথচারীদের।

ইতোমধ্যে গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট (নুর হোসেন চত্বর) হতে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হয়ে আহাদ পুলিশ বক্স এবং বঙ্গভবন ও মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারগামী ও ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্তান চত্বর এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু কোন কোন এলাকা এই রেড, হলুদ ও সবুজ জোন করা হয়েছে তার কোনো চিহৃ পর্যন্ত নেই। আছে শুধু হকারদের দখল। আর এসব স্থানে ব্যবসা করতে আসা হকাররা কোনো নির্দেশনাকেই পাত্তা দেন না। তাদের দাবি টাকা দিয়ে দোকান বসাই তাই কাউকে কইফিয়ত দেয়ার সময় নেই। রেড জোনে হকার মুক্ত করতে ইতোমধ্যে সেখানে অনেকবার উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। অভিযানে দখলদার উচ্ছেদের পাশাপাশি নির্দেশনা অমান্য করায় বেশ কয়েকজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ-ও প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

নামে বাণিজ্যিক এলাকা হলেও মতিঝিল সত্যিকারের বাণিজ্যিক এলাকার বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে অনেক আগেই। হকারদের দখলে চলে গেছে এই এলাকার বেশিরভাগ রাস্তাই। নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষের চলাচল রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে। গুলিস্তানের পরই সবচেয়ে বেশি মানুষের পদচারণা থাকে সেখানে। দিন রাতের সবসময়ই গিজগিজ করে মানুষ। যে ফার্মগেটে এত পথচারী অথচ সেখানে ফুটপাথ ধরে হেঁটে চলাচল করার কোনো সুব্যবস্থা নেই। দখলদারিত্ব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না ফার্মগেটের ফুটপাথগুলো। পুরো ফুটপাথজুড়েই গিজগিজ করছে দোকান। পথচারীদের হাঁটার জায়গা দখল করে নানা রকমের বাজার সাজিয়ে রেখেছে অবৈধ দখলদার। ফুটপাথ দিয়ে হাঁটার মতো পরিস্থিতি নেই সেখানে। তাই বাধ্য হয়ে পথচারীরা নেমে এসেছেন মূল সড়কে। যে কারণে যানচলাচলে বিঘœ ঘটছে, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। সেই সঙ্গে তো থাকছে পথচারীদের দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। ফুটপাতগুলো হকাররা দখল করে ব্যবসা করলেও এর নেপথ্যে আছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রতিদিনই চলছে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি। কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে তাদের এ আধিপত্য। যে কারণে বারবার উচ্ছেদ করার পরও দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না ফুটপাথগুলো। ফুটপাথ দখল করা হকারদের কোনোভাবেই ঠেকাতে পারছে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

পরিবেশবীদের মতে, হাঁটার নিরাপদ ও অনুকূল পরিবেশ না থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের মধ্যে পথচারীদের সংখ্যাই বেশি। অপর্যাপ্ত ও হাঁটার অনুপযোগী ফুটপাথ এবং রাস্তা পারাপারের তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় পথচারীদের আগ্রহ থাকার পরও তারা হাঁটতে পারছেন না। পথচারীদের হাঁটার পরিবেশ না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের মূল রাস্তা ব্যবহার করতে হচ্ছে।

জানা যায়, ২০০৭ সালে হকার পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে হলিডে মার্কেট চালু করা হয়। হকারদের উচ্ছেদ করে গুলিস্তানসহ রাজধানীর পাঁচটি নির্দিষ্ট জায়গায় তাদের বিভিন্ন ছুটির দিনে বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন সপ্তাহের সব দিনেই রাস্তা দখল করে বসছে তারা। রাস্তা দখল করে হকারদের এই ব্যবসা যানজট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এ নিয়ে কেউ কোনো প্রতিবাদ করলে হকাররা মারমুখী হয়ে ওঠেন, তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করাসহ নানাভাবে অপমান করেন। সিটি করপোরেশনের অভিযান চালিয়ে তাদের উচ্ছেদ করা হলেও তারা আবারও ফুটপাথে ও রাস্তায় পণ্যের পসরা নিয়ে বসে যান। শুধু গুলিস্তান নয়, রাজধানীর আরও অনেক এলাকাতেই ফুটপাথ ও রাস্তা হকারদের দখলে। সমস্যাটির স্থায়ী সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া নেয়া হলেও কোনো কাজে আসছে না কোনো উদ্যোগই।

নগরবাসী জানিয়েছেন, ফুটপাথ ও রাস্তা দখল রোধ করা এবং যানজট নিরসনের জন্য সিটি করপোরেশনের আরও তৎপর হতে হবে। অভিযান চালিয়ে ফুটপাথ ও রাস্তাগুলো দখলমুক্ত করে সব সময় নিয়মিত নজরদারি করতে হবে, যেন সেগুলো আবার দখল করার সুযোগ কেউ না পায়। এখন এ সমস্যার স্থায়ী সমাধান করা না হলে অদূর ভবিষ্যতে মহানগরের অনেক এলাকা যানজটে অচল হয়ে পড়তে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, পুরো এলাকায়ই ফুটপাথ, হেঁটে যাওয়ার কোনো পরিস্থিতি নেই। সবগুলো ফুটপাথে অতিরিক্ত দোকান, তার মধ্যে মানুষের হেঁটে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এত ভিড় থাকে যেখানে পুরুষ মানুষই হাঁটতে পারে না আর আমরা মেয়ে মানুষ কীভাবে হাঁটব?

ফুটপাথের এক দোকানদার বলেন, টাকা দিয়ে দোকান বসাই। মানুষও হাঁটুক আমাদেরও ব্যবসা হোক। ফুটপাথে দোকান না বসালে কই যামু, বাজারে দোকানঘর নেয়ার মতো তো পুঁজি নাই। তাই প্রতিদিন লাইনম্যানকে টাকা দিয়ে দোকান চালাই।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকা শহরের প্রায় সকল রাস্তা-ঘাট, পথচারীদের হাঁটার পথ, পথচারী পারাপার সেতুসহ যত্রতত্র হকারদের বিচরণ ঢাকাবাসীর জীবনযাত্রার মান নিম্নগামী করার পাশাপাশি যান চলাচলেও বিঘœ সৃষ্টি করছে। তাই হকার ব্যবস্থাপনাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন সড়ক, পথচারীদের চলাচলের পথকে লাল, সবুজ ও হলুদ চিহ্নিত এলাকায় ভাগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। লাল চিহ্নিত এলাকায় কোনো হকারকে বসতে দেওয়া হবে না। সবুজ চিহ্নিত এলাকায় নির্দ্বিধায় ২৪ ঘণ্টা এবং হলুদ চিহ্নিত এলাকায় হকাররা সুনির্দিষ্ট সময়ে ব্যবসা করার সুযোগ পাবে।