“৮ প্রকল্পের মেয়াদ, ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব থাকবে” একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে আজ

“৮ প্রকল্পের মেয়াদ, ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব থাকবে” একনেক সভা অনুষ্ঠিত হবে আজ

ফাইল ছবি।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) হঠাৎ বাড়ছে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব। এই প্রবণতা অর্থবছরের শেষে বেশি দেখা যায় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আজ মঙ্গলবার চলতি অর্থবছরের ১৪তম একনেক সভায় ১৭টি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য উঠছে। এগুলোর মধ্যে মেয়াদ অথবা ব্যয় বাড়তে পারে, এমন প্রকল্প আছে আটটি।

আর একনেক অবগতির জন্য উঠছে সাতটি। এগুলোর মধ্যেও মেয়াদ অথবা ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তিনটির।

 

এর আগে সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছিল চার প্রকল্পের সংশোধনী। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য একনেকজানা গেছে।

 

সরকার আগামী অর্থবছরের (২০২৩-২৪) জন্য দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন করেছে। এই অর্থায়নে দেশে হবে আরো এক হাজার ৩০৯টি উন্নয়ন প্রকল্প। তবে এসব প্রকল্পের কতগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন খাত বিশ্লেষকরা।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে একদিকে যেমন প্রকল্পের খরচ বাড়ে, অন্যদিকে বাজেটের শৃঙ্খলা নষ্ট নয়।

পাশাপাশি এই বর্ধিত খরচ বহন করতে হচ্ছে জনগণের ট্যাক্সের টাকায়। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) তৈরির ক্ষেত্রে আরো দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানো দরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নের জায়গায় জবাবদিহি ও নজরদারি শক্তিশালী করা দরকার।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের প্রকল্প বাস্তবায়নের যে হার, তা খুবই ধীরগতির, যা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করছে। ফলে অর্থনীতিতে যে অবদান সেটা কিন্তু পাচ্ছি না।

বছরের পর বছর একই চিত্রই দেখছি; কিন্তু এর জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে এবং কী জবাবদিহি করা হচ্ছে, সেটাও অস্পষ্ট।’

 

আজ (মঙ্গলবার) একনেক সভায় প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে প্রথম সংশোধনীর জন্য উপস্থাপন করা হবে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পটি। সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয়েছে ৬৫১ কোটি টাকা। ব্যয় বাড়ছে প্রায় ৬৭ কোটি টাকা। প্রকল্প অনুমোদনের সময়ে মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত। পরবর্তী সময়ে ব্যয় না বাড়িয়ে প্রথমবার এর মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২১ সালের জুন মাস পর্যন্ত। তবু শেষ হয়নি প্রকল্পের কাজ। সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৭৭ শতাংশ। প্রকল্পটি পটুয়াখালী সদর উপজেলায় বাস্তবায়িত করা হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক এই প্রকল্পের সংশোধনের কারণ হিসেবে বলছেন, সঠিক সময় প্রকল্পের ঋণ না পাওয়ায় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন। জমির মূল্য বৃদ্ধি, রেট শিডিউল পরিবর্তনের কারণে নির্মাণ ও পূর্ত কাজ, আসবাবের ব্যয় বৃদ্ধি, বাজারদর অনুযায়ী চিকিৎসা যন্ত্রপাতির মূল্য অন্তর্ভুক্তি প্রভৃতি।

পরিকল্পনা কমিশন বলছে, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পটুয়াখালী জেলাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর জনসাধারণের স্বল্পমূল্যে আধুনিক ও বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা প্রাপ্তি সহজ হবে এবং ছাত্রছাত্রীদের মেডিক্যাল কলেজে পড়াশোনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। জরুরি ভিত্তিতে প্রকল্পটির সংশোধন করা প্রয়োজন। আলোচ্য প্রকল্পের ভৌত/নির্মাণকাজসহ সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৭৭ শতাংশ।

আরো যেসব প্রকল্পের সংশোধনী প্রস্তাব একনেকে উঠছে : গৃহহীনদের ঘরের প্রকল্পের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পঞ্চম সংশোধনী প্রকল্প। স্থানীয় সরকার বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (দ্বিতীয় পর্যায়, প্রথম সংশোধনী), বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের বাস্তবায়নাধীন বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-১ : শেওলা, রামগড় ও ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর উন্নয়ন এবং বেনাপোল স্থলবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থার আধুনিকায়ন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতাধীন সাতক্ষীরা সড়ক ও সিটি বাইপাস সড়ককে সংযুক্ত করে সংযোগ সড়কসহ তিনটি লিংক রোড নির্মাণ (প্রস্তাবিত প্রথম সংশোধিত), ডিজিএফআইয়ের টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ এবং কারিগরি সক্ষমতা উন্নয়ন (টিআইএইচডিটিসিবি) (প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত), বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়াল গেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ (প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধনী) প্রকল্প।

নতুন যেসব প্রকল্প উঠছে একনেকে : ফরিদপুর জেলাধীন মধুমতী নদীর বাঁ তীরের ভাঙন হতে শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর সংযোগ রাস্তাসহ অন্যান্য এলাকা সংরক্ষণ ও ড্রেজিং প্রকল্প। বাগেরহাট জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, নতুন ছয়টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে স্থানভিত্তিক ধানের জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং বিদ্যমান গবেষণাগার উন্নয়ন প্রকল্প, নেত্রকোনা জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন, ১০টি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আধুনিক সুবিধাসংবলিত ১৯টি হোস্টেল ভবন নির্মাণ প্রকল্প, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টি বিল্ডিং স্থাপন প্রকল্প, হায়ার এডুকেশন এক্সিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সফরমেশন প্রকল্প, বাগেরহাট কালেক্টরেটের নতুন ভবন নির্মাণ, সাভার সেনানিবাস এলাকায় মিট প্রসেসিং প্লান্ট স্থাপন প্রকল্প।

নির্ধারিত সময়ে ৯৫ শতাংশ প্রকল্পই শেষ হয় না : বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় জানা গেছে, গড়ে ৯৫ শতাংশ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না। বারবার মেয়াদ বাড়িয়ে এসব প্রকল্প শেষ করতে হয়। নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় বাড়ে গড়ে প্রায় ২৬ শতাংশ। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের প্রকল্প বাস্তবায়নে মেয়াদ বাড়ে সবচেয়ে বেশি। বিআইডিএস ২০১২-১৩ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ১০ বছরে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে বাস্তবায়িত ৩৬৯ প্রকল্প নিয়ে গবেষণা করে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের অডিট প্রতিবেদন পর্যালোচনা করা হয়েছে।