তামাক ক্রয়ের উপর আয়কর প্রত্যাহার চেয়ে তামাক চাষী সুরক্ষা কমিটির মানববন্ধন

তামাক ক্রয়ের উপর আয়কর প্রত্যাহার চেয়ে তামাক চাষী সুরক্ষা কমিটির মানববন্ধন

ছবি: প্রতিনিধি

তামাক ক্রয়ের উপর ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার, তামাক চাষীদের জন্য সরকারী কৃষি ঋণের ব্যবস্থাসহ পাঁচ দফা দাবিতে মানবন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে বৃহত্তর কুষ্টিয়া তামাক চাষী সুরক্ষা কমিটি। রবিবার বেলা ১১টায় কুষ্টিয়া উপ-কর কমিশনার সার্কেল-১৮ এর কার্যালয়ের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। তাদের দাবি গুলো হলো- কৃষক/ চাষীদের নিকট থেকে তামাক ক্রয়ের উপর ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার, তামাক চাষীদের জন্য সরকারী ভাবে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা, নায্য মূল্য ব্যতিরেকে ব্রিটিশ আমেরিকার টোব্যাকো কোম্পানীর নিকট তামাক বিক্রয় বন্ধ করা, তামাক চাষীদের ঋণের নামে ব্রিটিশ আমেরিকার টোব্যাকোর সুদের ব্যবসা বন্ধ করা এবং বিদেশে তামাক রপ্তানি বন্ধ না করা। মানববন্ধন শেষে কুষ্টিয়া উপ-কর কমিশনারের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর চেয়ারম্যান বরাবর পাঁচ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন তারা।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন,  বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চল তথা কুষ্টিয়া, মেহেরপুর ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পদ্মার কোল ঘেষে অবস্থিত। এই অঞ্চলের অধিকাংশ জমি বালি মিশ্রিত। বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চল বাংলাদেশের বালুমহল নামে পরিচিত। এখান থেকে বালু উত্তোলন করে নির্মান কাজে ব্যবহার করা হয়। এই অঞ্চলে অন্য কোন ফসল ভালো না হওয়ায় এ অঞ্চলসহ দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত। উৎপাদিত তামাক এ অঞ্চলের অর্থকারী ফসল হিসেবে গণ্য করা হয়। এই তামাক বিক্রি করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। পরিবারের ভরনপোষনের পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার খরচ জোগায়ে থাকি। ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীর চক্রান্তে সরকার চলতি অর্থবছরে নতুন করে টিডিএস ইনকাম ট্যাক্স আইন চালু করেছে। এই টিডিএস ইনকাম ট্যাক্স আইন বাতিল করা জরুরী। এই আইন বাতিল না করা হলে আইনের বেড়াজালে কৃষকরা তামাক উৎপাদন করতে পারবে না। ফলে কৃষকরা অভাব অনাটনে দিন যাপন করবে। এতে করে তারা অসামাজিক ও আইন শৃঙ্খলা পরিপন্থি কাজে লিপ্ত হবে।

বক্তারা আরো বলেন, এই অঞ্চলের উৎপাদিত তামাক ক্রয়ের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ক্রেতার আগমন ঘটে। আমরা এসব বিদেশি ক্রেতাদের কাছে তামাক বিক্রি করে থাকি। ফলে আমাদের দেশে বিপুল পরিমান বৈদেশিক মূদ্রা অর্জিত হয়। এতে দেশের অর্তনীতিতে রেমিটেন্স যুক্ত হয়। কিন্তু বহুজাতিক কোম্পনীর একটি প্রতিষ্ঠান ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো এদেশের সাধারণ গরিব তামাক চাষীদের দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে সুদের মাধ্যমে দাদণ বা ঋণ দিয়ে একক ভাবে তামাক ক্রয় করে আসছে। তামাক চাষীদের ঋণের নামে ব্রিটিশ আমেরিকার টোব্যাকোর সুদের ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া দেশে তেমন কোন বড় প্রতিষ্ঠান না থাকায় ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী কৃষকদের জিম্মি করে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোর করে তামাক ক্রয় করে থাকে। কৃষক/ চাষীদের নিকট থেকে তামাক ক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশীয় কোম্পানীর জন্য ১০ শতাংশ আয়কর প্রত্যাহার করা হলে তারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে।

ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর শোষনের চিত্র তুলে ধরে বক্তারা বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের চাষীদের প্রতি কেজি তামাকের মূল্য দিয়েছে ১৭৫ টাকা থেকে ১৯০ টাকা। অন্যদিকে দেশীয় কোম্পানী ও অন্যান্য বিদেশি ক্রেতারা প্রতি কেজি তামাকের মূল্য দিয়েছে ২১০ টাকা থেকে ২১৫ টাকা। আমরা চালানপত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে এ তথ্য জানতে পেরেছি। এই অঞ্চলের গরিব কৃষকরা জানে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো তাদেরকে ঠকাচ্ছে। কিন্তু তারা কিছু বলতে পারেনা। কারণ তারা সুদের মাধ্যমে অগ্রীম টাকা নিয়েছে। আমরা এই ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর কাছ থেকে আর সুদে টাকা নিব না। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মহোদয়ের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন আমাদের জন্য সরকারি কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করা। সরকারি কৃষি ঋণের ব্যবস্থা হলে আমরা ব্রিটিশ আমেরিকার টোব্যাকোর নিকট তামাক বিক্রি বন্ধ করে দিব।

তারা আরো বলেন, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানী দেশীয় শিল্পের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তারা একক ভাবে ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশ থেকে কেউ যাতে বিদেশে তামাক রপ্তানি না করতে পারে সেই ষড়যন্ত্র করছে। তামাক রপ্তানি বন্ধ করতে পারলে তারা চাষীদের জিম্মি করে একক ভাবে তামাক কিনতে পারবে। এটা হতে পারে না আমরা এটা হতে দিব না। সরকার বেশ কিছু পণ্য রপ্তানিতে ভ‚র্তকি দিয়ে রপ্তানি বাড়াতে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। আমাদের বিশ্বাস আমাদের নেত্রী, জননেত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ আমেরিকার এই চক্রান্তের শিকার হবেন না। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে যে চক্রান্ত করছে, তামাক চাষীদের সাথেও ঠিক একই রকম চাক্রন্ত করছে। আর যদি বিদেশে তামাক রপ্তানি বন্ধ করা হয় তবে আমরা প্রতিজ্ঞা করছি যে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানীকে এ দেশে সিগারেটসহ কোন ব্যবসা করতে দিব না।

বাংলাদেশ বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম-সম্পাদক হারিক হোসেনের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন ফেডারেশনের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন। মানববন্ধনে বক্তব্য বিড়ি শ্রমিক ফেডারেশনের রাখেন প্রচার সম্পাদক শামীম ইসলাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাসনাত লাভলু এবং তামাক চাষী সুরক্ষা কমিটির নেতৃবৃন্দ।