সুনামগঞ্জে হাওর-নদীতে পানি না থাকায় কাজ নেই নৌকাশ্রমিকের

সুনামগঞ্জে হাওর-নদীতে পানি না থাকায় কাজ নেই নৌকাশ্রমিকের

ফাইল ছবি

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের বুক চিরে বয়ে চলেছে পিয়াইন নদী। এই নদীর দুই কূলে অথবা নদীর কিনারে অল্প পানিতে বাঁধা বা অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় পড়ে আছে তিন শতাধিক যাত্রীবাহী নৌকা। জৈষ্ঠ্যের এমন দিনে বজরা, ছইয়া, ছাদখোলা ইত্যাদি নৌকা যাত্রী নিয়ে পাথারিয়া বাজার থেকে ভাটিপাড়া-বাংলা বাজার রুট আর হাওরের বুকে দাপিয়ে বেড়ানোর কথা থাকলেও এখনো নৌকাগুলো শুকনায় পড়ে আছে। নৌকার কাঠ শুকিয়ে যাচ্ছে জৈষ্ঠ্যের দাবদাহে। এতে যেমন কষ্ট আর দুর্ভোগ বাড়ছে এসব এলাকার যাত্রী সাধারণের তেমনি কর্মহীন হয়ে আছেন ভাটিপাড়া, মুরাদপুর, আলীনগরসহ এসব এলাকার প্রায় নয় শতাধিক নৌকাশ্রমিক। পরিবার নিয়ে কষ্টে আছেন এসব নৌকাশ্রমিকরা। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় মুরাদপুরের একাধিক নৌকাশ্রমিক জীবন ও জীবিকার তাগিদে সপরিবারে পাড়ি জমিয়েছেন সিলেটসহ রাজধানী ঢাকায়। হাওর-নদীতে পানি না থাকায় এই এলাকায় এখনো নৌকা চলাচল শুরু হয়নি। নৌকায় চলাচল করতে না পারায় বাধ্য হয়েই যাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মোটরসাইকেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে সড়ক পথে। পাথারিয়া-ভাটিপাড়া-আলীনগরের সড়কপথকে মৃত্যুর ফাঁদ বললেও ভুল হবে না। প্রায় প্রতিদিনই এ সড়কে ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ভুক্তভোগীরা। মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল খালিক ও আলীনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. মাহবুব বলেন, নৌকা চলাচল শুরু না হওয়ায় আমরা সীমাহীন দুর্ভোগের মাঝে আছি। রাস্তা ভাঙ্গা, মোটরসাইকেলের ভাড়া বেশি। পানি হলে নৌকায় করে আমরা খুব সহজেই চলাচল করতে পারি, খরচও কম।

স্থানীয়রা জানান, অন্যান্য বছর বৈশাখ মাস থেকেই আমরা নৌকায় চলাচল করতে পারি। পাথারিয়া বাজার থেকে প্রায় ৩০০ নৌকা চলে ভাটিপাড়া, মুরাদপুর, বাংলাবাজার ও আলীনগরসহ এই সমস্ত এলাকায়। প্রতিটি নৌকায় তিন জন করে নৌকা শ্রমিক থাকেন। দিন শেষে নৌকার খরচপাতি বাদে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা উপার্জন করে বাড়ি ফেরেন তারা। এই উপার্জনে ভালোভাবেই চলে তাদের সংসার। কিন্তু এ বছর পানি না হওয়ায় জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ সময়েও হাওর বা নদীতে নৌকা ভাসানো যায়নি। এতে চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয়রাই বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।

এদিকে কর্মহীন হয়ে সপরিবারে বাড়ি ছেড়েছেন মুরাদপুর গ্রামের এমন তিন জন নৌকাশ্রমিকের সঙ্গে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা হলেন, মৃত রাহাত উল্লাহর ছেলে গোলাপ নূর, ইজাজুল ইসলামের ছেলে ফয়জুল হক এবং অপর শ্রমিক আবুল হাসান। মুঠোফোনে কথা হয় আবুল হাসানের সাথে। তিনি জানান, আমি একজন নৌকা শ্রমিক। বছরের ছয় মাস নৌকায় যাত্রী বহন করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকি। আমার নিজেস্ব নৌকা না থাকায় প্রতি বছর ছয়মাস চুক্তিতে নৌকা ভাড়ায় আনি। এ বছরও ৭০ হাজার টাকায় নৌকা ভাড়া করেছি। স্থানীয় ব্যাংক থেকে কিস্তি তুলে, ধারদেনা করে নৌকা নিয়েছিলাম। এখনো নদী-হাওরে পানি আসেনি। পিয়াইন নদীতে নৌকা ডুবিয়ে পরিবার নিয়ে সিলেটে আছি। দিনমজুরি করে কোনো রকমে চলছি। আমার মতো আরো অনেকেই আছেন।

নৌকাশ্রমিক আবদুল মতিন বলেন, আমরা সাধারণ শ্রমিক। সারা বছরে আমাদের একটা লক্ষ্য থাকে বর্ষা মৌসুমে কিছু বেশি আয় রোজগার করে বছর কাটাবো। কিন্তু এ বছর তা হচ্ছে না। জ্যৈষ্ঠ মাসও প্রায় শেষ। এখনো নদীতে পানি আসেনি। আমরা এখন একদম বেকার সময় কাটাচ্ছি। খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছি।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনোয়ারুজ্জামান বলেন, বেকার হওয়া শ্রমিকদের নামের তালিকা পেলে আমরা কিছু একটা করার চেষ্টা করব।