বাংলাদেশের অর্ধেক ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি

বাংলাদেশের অর্ধেক ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি

প্রতীকী ছবি।

মে মাসে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতির হার আরও কমেছে। কয়েক মাস ধরে দেশটিতে খুচরা পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি কমছে, তারই ধারাবাহিকতায় মে মাসে মূল্যস্ফীতির হার কমল। সেই সঙ্গে গত মাসে ভারতের শিল্পোৎপাদনও বেড়েছে, অর্থাৎ উৎপাদন খাত চাঙা হয়েছে।

ইকোনমিক টাইমসের খবরে জানানো হয়েছে, মে মাসের বার্ষিক হিসাবে ভোক্তা মূল্য সূচক বা সিপিআইয়ে ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ, এপ্রিলে যা ছিল ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। ভারতের ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (এনএসও) জানিয়েছে, মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, আগের মাসে যা ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। মে মাসে ভারতের গ্রামাঞ্চলের খুচরা মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ, শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে যা ৪ দশমিক ৩ শতাংশ।

ভারতে টানা কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বাংলাদেশে অবশ্য তা বাড়ছে। গত মে মাসে ১৩৪ মাস বা ১১ বছর দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে। দেখা গেছে, মে মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতির হারের দ্বিগুণেরও বেশি।

ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, এ নিয়ে টানা চার মাস ভারতে খুচরা মূল্যস্ফীতির হার কমল, যদিও তা রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) নির্ধারিত সহনশীল সীমার উচ্চতম হারের চেয়ে সামান্য বেশি।

মে মাসে ভারতে অনেক পণ্যেরই দাম কমেছে, বিশেষ করে টমেটোর। সেই সঙ্গে পরিশোধিত তেল, আটা–গম, এলপিজি ও কেরোসিনের দাম কমেছে। যে ১০টি পণ্যের দাম কমেছে তার মধ্যে ৯টি পণ্যই খাদ্য ও তেলসংক্রান্ত, আরেকটি যোগাযোগ ও যাতায়াত সংশ্লিষ্ট।

এদিতে সম্প্রতি ঘোষিত ভারতের মুদ্রানীতিতে আরবিআই নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখেছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস মূল্যস্ফীতির হার হ্রাসের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছিলেন। তবে তারপরও তিনি সতর্কতা হিসেবে বলেছিলেন, মূল্যস্ফীতির দিকে সব সময় নজর রাখতে হবে।

এ ছাড়া আবহাওয়ার দিকেও নজর রাখতে হবে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। আবহাওয়ার চক্রে এ বছর এল নিনোর সময়, অর্থাৎ খরা হতে পারে। সে কারণে দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর দিকে বিশেষ নজর রাখা দরকার বলে তারা মনে করেন। তবে মূল্যস্ফীতির হার আরও সহনীয় হলে চলতি বছরের আগস্টে আরবিআই নীতি সুদহার কমাতেও পারে।

ভারতের অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন, সময়মতো শস্য বিতরণ খুবই জরুরি। বিতরণ ঠিকঠাক হচ্ছে কি না, তা দেখেই বোঝা যায়, ভবিষ্যতে মূল্যস্ফীতির গতি কোন দিকে যাবে। তবে ভারতে রবিশস্য বাজারে আসতে শুরু করেছে, সে কারণে দানাদার খাদ্য ও ডালের দাম আগামী দুই-তিন মাসে কমতে পারে।

গত এক বছরে বিশ্বের অনেক দেশে মূল্যস্ফীতির হার কমলেও বাংলাদেশে বাড়ছে। এই মূল্যস্ফীতির দায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর চাপিয়ে দেওয়া সুবিধাজনক, কিন্তু সেটা ঠিক বাস্তবসম্মত নয় বলেও মনে করেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ। গতকাল বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের এক সেমিনারে তিনি এই কথা বলেন।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের এই অর্থনীতিবিদ বলেন, যেসব দেশ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে চাহিদা হ্রাসের ব্যবস্থা নিয়েছে, সেসব দেশ প্রণিধানযোগ্যভাবে মূল্যস্ফীতি কমাতে পেরেছে। অর্থাৎ যেসব দেশ নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, সেসব দেশ ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমাতে পেরেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুসারে, মে মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ। গত এপ্রিলে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। কয়েক মাস ধরে তা ৯ শতাংশের আশপাশেই থাকছে।