স্বস্তিতেই প্রথম দিন শেষ করল টাইগাররা

স্বস্তিতেই প্রথম দিন শেষ করল টাইগাররা

সংগৃহীত

আফগানিস্তানের বিপক্ষে দিনের শুরুতেই জাকির হাসানের উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। তবে এরপর মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্তর ২১২ রানের জুটিতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় টাইগাররা। শান্তর অনবদ্য সেঞ্চুরি ও জয়ের হাফসেঞ্চুরির পরও তৃতীয় সেশনে দ্রুত কয়েকটি উইকেট হারিয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। তবে মুশফিকুর রহিম ও মেহেদি হাসান মিরাজের ব্যাটিং দৃঢ়তায় স্বস্তি নিয়েই প্রথম দিন শেষ করল টাইগাররা।

প্রথম দিন শেষে ৭৯ ওভার ব্যাটিং করে নাজমুল শান্তর ১৪৬ ও মাহমুদুল জয়ের ৭৬ রানে ভর করে ৫ উইকেটে ৩৬২ রান করেছে বাংলাদেশ দল। এদিন ওভার প্রতি ৪.৫৮ গড়ে রান তুলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। দিনশেষে ৪১ রানে অপরাজিত রয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ৪৩ রানে মেহেদি হাসান মিরাজ দিন্সের শেষ পর্যন্ত তাকে সঙ্গ দেন।

 

বুধবার (১৪ জুন) মিরপুরের ‘হোম অব ক্রিকেট’ শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের একমাত্র টেস্ট ম্যাচে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে স্বাগতিক বাংলাদেশ। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই হোঁচট খায় স্বাগতিকরা। দলীয় ৬ রান ও ব্যক্তিগত ১ রানে সাজঘরে ফিরে যান ইনজুরি কাটিয়ে জাতীয় দলে ফেরা জাকির হাসান। দিনের দ্বিতীয় ওভারে আফগানদের হয়ে অভিষিক্ত পেসার নিজাত মাসুদের অফ স্টাম্পের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়েই উইকেটরক্ষকের তালুবন্দি হন তিনি।

এরপর তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ে আসেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সেখান থেকে আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়কে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা লড়াই চালিয়ে যান। শুরু থেকেই অনেকটা ওয়ানডে মেজাজেই ব্যাট করতে থাকেন শান্ত। আর তাতে করে লাঞ্চ বিরতির আগেই মাত্র ৫৮ বলেই টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি বাগিয়ে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটার।

শান্ত টেস্টের মেজাজ ভুলে ব্যাটিং করতে থাকলেও ঠিক বিপরীত মেজাজে ব্যাট করে যোগ্য সঙ্গ দিয়ে দলকে টেনে নিয়ে যান জয়। এই দুজনের অবিচ্ছেদ্য জুটিতে ১ উইকেটে ১১৬ রান নিয়ে দ্বিতীয় সেশনের খেলা শুরু করেন তারা।

বিরতি থেকে ফিরে আরও আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন শান্ত। হাঁটতে থাকেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরির দিকে।

তবে শান্তকে অপেক্ষায় রেখেই ফিফটি তুলে নেন তরুণ ওপেনার জয়। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল চোটে পড়ার কারণে একাদশে সুযোগ পান জয়। আর সুযোগ পেয়েই আস্থার প্রতিদান দিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। ১০২ বলে ক্যারিয়ারে তৃতীয়বারের মতো এই মাইলফলক স্পর্শ করেন ২২ বছর বয়সী এই ব্যাটার।

জয়ের ফিফটির পর ওয়ানডে স্টাইলে সেঞ্চুরি তুলে নেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ক্রিকেটের অভিজাত ফরম্যাটে তিনি শতকের স্বাদ পান মাত্র ১১৮ বলে। তবে শান্তর সেঞ্চুরির পর বিদায় নেন জয়। অনিয়মিত বোলার রহমত শাহর লেগ স্পিন বলে অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বসেন জয়।

রহমতের নিরীহ ডেলিভারিতে কাট শট খেলার জন্য ব্যাট চালিয়েছিলেন মাহমুদুল হাসান। তবে ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ গেছে স্লিপে থাকা ইব্রাহিম জাদরানের হাতে। তাতে ভেঙে যায় শান্তর সাথে তার ২১২ রানের জুটি। ফলে সেঞ্চুরির ভালো একটি সুযোগ তৈরি করেও এই ব্যাটার থেমেছেন ৭৬ রানে। ইনিংসে তার ছিল ৯টি চারের মার।

পরে মুমিনুল ক্রিজে এলে ২ উইকেটে ২৩৫ রান নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। শেষ সেশনে নেমেই চার মারেন নাজমুল হোসেন শান্ত। পরের ওভারে একটি করে চার ও ছয় হাঁকিয়ে ছন্দের ইঙ্গিত দিয়েছিল টাইগাররা। তবে এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সাবেক অধিনায়ক মুমিনুল।

৫৩ ওভারে দলীয় ২৫৬ রানের মাথায় বল হাতে খাটো লেংথ থেকে লেগ স্টাম্পের ওপর বল তুলেছিলেন আফগান পেসার নিজাত মাসুদ। বল মুমিনুলের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে যায়। আম্পায়ার আউট না দিলেও সফল রিভিউ নিয়ে মুমিনুলকে ড্রেসিংরুমে ফেরত পাঠান আফগানরা। ২৫ বলে ১৫ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটার।

মুমিনুলের বিদায়ের পর ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন শান্তও। আমির হামজার শর্ট বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলে দেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। ১৭৫ বলে ২৩ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ১৪৬ রানে বিদায় নেন তিনি। প্যাভিলিয়নে ফিরে হয়ত ডাবল সেঞ্চুরির মাইলফলক স্পর্শ করতে না পারার আক্ষেপে পুড়েছেন তিনি।

এরপর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়কের দায়িত্ব পাওয়া লিটন দাস ছক্কা হাঁকিয়ে দারুণ শুরুর আভাস দিয়েছিলেন। তবে বাঁহাতি স্পিনার জহির খানের ঘুর্ণি জাদুতে স্লিপে থাকা ইব্রাহিম জাদরানের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন দেশসেরা এই ব্যাটার। বিদায়ের আগে ১৫ বলে ৯ রান করেন তিনি।

দলীয় স্কোর ২১৮/১ থেকে ২৯০ যেতেই ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। তবে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম ও অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ আর কোনো বিপর্যয় হতে দেননি। তাদের দুজনের ৭২ রানের অপরাজিত জুটিতে দিন শেষে স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে চন্ডিকা হাথুরুসিংহের শিষ্যরা।

বোলিংয়ে আফগানিস্তানের হয়ে অভিষিক্ত পেসার নিজাত মাসুদ ২ উইকেট পান। এছাড়া ১ টি করে উইকেট পান রহমত শাহ, জহির খান ও আমির হামজা।