আমাদের নবীই সর্বশেষ নবী

আমাদের নবীই সর্বশেষ নবী

ফাইল ছবি।

‘আশরাফুল মাখলুকাত’ মানুষ সৃষ্টির একমাত্র উদ্দেশ্য মানুষ আল্লাহর বড়ত্ব বয়ান করবে। তার পরিচয় প্রকাশ করবে। তার ইবাদত ও গুণগান করবে। এ জন্য নবী-রাসূলদের প্রেরণের লক্ষ্যও ছিল মানুষকে আল্লাহর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। তাই আল্লাহকে পেতে হলে রাসূলুল্লাহ সা:-এর আদর্শ অনুসরণ করতেই হবে। অর্থাৎ রাসূলে আকরাম সা: যা করেছেন বা করতে বলেছেন, তা করতে হবে। আর যা করেননি বা করতে বারণ করেছেন, তা বর্জন করতে হবে। আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের উদ্দেশ্যে কুরআনের নির্দেশনায় রাসূল সা:-এর অনুসরণ করাই ইসলামের শিক্ষা। এ জন্য কুরআনে স্পষ্টভাষায় বলা হয়েছে- ‘বলুন (হে রাসূল!) যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসবে, তবে আমার অনুকরণ করো; আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সূরা আলে ইমরান : ৩১) আর হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ মু’মিন হবে না, যতক্ষণ না আমি হবো তার কাছে তার পিতা-পুত্র ও যাবতীয় সবকিছু থেকে প্রিয়।’ (বুখারি প্রথম খণ্ড, হাদিস : ১৩ ও ১৪)

প্রত্যেকটি মু’মিন-মুসলমানের জন্য নবীপ্রেম ও নবীর অনুসরণ যেমন অপরিহার্য কর্তব্য তেমনি তারই ভিত্তিতে শান্তির ধর্ম ইসলামের সাম্য ও ন্যায়নীতি ব্যক্তি, পরিবার, সমাজজীবনে সগৌরবে প্রতিষ্ঠা করাও কর্তব্য। আর এই শিক্ষা প্রদানই নবী বা রাসূল প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য, যা পবিত্র কুরআনে বারবার বলা হয়েছে, ‘তিনি সে মহান প্রভু যিনি রাসূল প্রেরণ করেছেন, সঠিক পন্থা ও সত্য ধর্মসহযোগে, যাতে সে ধর্মকে প্রকাশ করতে পারে সর্ব ধর্মের শিখরে।’ (সূরা ফাতহ-২৮)

আর আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদ সা: আখেরি নবী। আমাদের নবীর পরে কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবীর জন্ম হবে না। হজরত উকবা বিন আমের রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: ইরশাদ করেছেন, ‘যদি আমার পরে কেউ নবী হতো, তাহলে উমর বিন খাত্তাব রা: নবী হতেন।’ (সুনানে তিরমিজি-৩৬৮৬, মুসনাদে আহমাদ-১৭৪০৫) যেহেতু নবীর পরে আর কোনো নবী নেই, তাই তিনি নবী হতে পারেননি। অন্যত্র আবদুল্লাহ বিন ইবরাহিম বিন কারেজ সূত্রে বর্ণিত- তিনি বলেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি আবু হুরায়রা রা:-কে বলতে শুনেছি, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘আমিই সর্বশেষ নবী। আমার মসজিদই নবী কর্তৃক নির্মিত সর্বশেষ মসজিদ।’ (মুসলিম) আবার হজরত ছাওবান রা: সূত্রে বর্ণিত- রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘অতি শিগগিরই আমার উম্মতের মধ্যে ৩০ জন সর্বাধিক মিথ্যুক-ভণ্ডের আত্মপ্রকাশ ঘটবে। তাদের প্রত্যেকেই নবী হওয়ার দাবি করবে। অথচ আমিই সর্বশেষ নবী, আমার পর কোনো নবী নেই।’ (মুসলিম)

 

এরপর অতীত ও বর্তমান যুগে ইসলামের বিরুদ্ধে যেসব ফেতনার উদ্ভব হয়েছে তার মধ্যে নবুয়তের দাবি অতি মারাত্মক। এই নতুন নবুয়তের দাবি মুসলিম জাতির মধ্যে বিরাট গোমরাহির পথ সৃষ্টি করে চলেছে। এ বিষয়ে পরিষ্কার জ্ঞান থাকা আমাদের সবার জন্য জরুরি। যেমন আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদ সা: যে শেষ নবী এবং তার পরে আর কোনো নবী পৃথিবীতে আসবেন না। তা পবিত্র কুরআন-হাদিস, সাহাবিদের ইজমা ও যুক্তি দিয়ে প্রমাণিত। সুতরাং নতুন নবী হওয়ার দাবি করা এবং ওই দাবিদারের অনুসরণ করা কুফরি।

অতএব, কুরআন ও হাদিসের আলোকে এ বিষয়টি একেবারেই স্পষ্ট যে, আমাদের নবী হজরত মুহাম্মাদ সা:-এর পর আর কোনো নবী নেই। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী নতুন শরিয়ত নিয়ে প্রেরিত হবেন না। আর যারা এই বর্তমান সময়েও মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানিকে নবী মানে এবং তার অনুসরণ করে তারা কেউ মুসলিম নয়; তারা সবাই কাফের। হ্যাঁ, তারা তাদের কাদিয়ানি সম্প্রদায় হিসেবে থাকুক। কিন্তু কাদিয়ানি হয়ে মুসলিম নাম ব্যবহার করা যাবে না। তাই মুসলিম উম্মাহকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে যে, কখনো যেন এই রকম কোনো ফেতনা প্রভাব ফেলতে না পারে। সহজ সরল মুসলমানদের ঈমানহারা করতে না পারে।


লেখক : মাওলানা হুসাইন আহমদ, বিশিষ্ট আলেম ও প্রাবন্ধিক।