কোরবানির উদ্দেশ্য ও ফজিলত

কোরবানির উদ্দেশ্য ও ফজিলত

প্রতিকী ছবি

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রব্বুল আলামিন বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি শুধু আমার ইবাদত করার জন্য।’ (সুরা জারিয়াত, আয়াত ৫৬)। সুতরাং কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহতায়ালা তাঁর বান্দাকে পালন করার জন্য যে কোনো আদেশ দিতে পারেন এবং বান্দার দায়িত্ব হলো তা সুচারুভাবে পালন করা। কোরবানির অন্যতম উদ্দেশ্য হলো, ত্যাগ করার মানসিকতা তৈরি করা। আল্লাহর বিধান পালনে জানমালের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কোরবানির ঈদ শুধু গোশত খাওয়ার অনুষ্ঠানে পরিণত করা নয় বরং নিজেদের মধ্যকার পশুসুলভ আচরণ ত্যাগ করার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকা। নফসের আনুগত্য ছিন্ন করে আল্লাহর আনুগত্য পোষণ করাই হলো কোরবানির মূল উদ্দেশ্য। আল্লাহ বলেন, ‘হে রসুল আপনি বলুন, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার জীবন, আমার মৃত্যু, কোরবানি সব কাজকর্ম সবকিছুই সৃষ্টিকুলের মালিক আল্লাহতায়ালার জন্য।’ (সুরা আল আনয়াম, আয়াত ৬)।

কোরবানির প্রেক্ষাপট : পবিত্র কোরআনের সুরা আছ সাফফাতে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর সে দোয়া করল, হে আমার রব তুমি আমাকে নেক্কারদের মধ্য থেকে একটি সন্তান দান কর। এরপর আমি তাকে একজন ধৈর্যশীল পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। সে যখন তার পিতার সঙ্গে দৌড়াদৌড়ি করার মতো বয়সে উপনীত হলো তখন সে একদিন ছেলেকে বলল, হে বৎস্য আমি স্বপ্নে দেখি আমি যেন তোমাকে জবাই করছি। এ ব্যাপারে তোমার অভিমত কী? সে বলল, হে আমার আব্বাজান, আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। অতঃপর যখন তারা দুজনেই আল্লাহর ইচ্ছার সামনে আত্মসমর্পণ করল এবং সে তাকে জবাই করার উদ্দেশ্যে কাত করে শুইয়ে দিল। তখন আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইবরাহিম, তুমি তোমার স্বপ্নকে সত্য প্রমাণ করেছ। তোমরা উভয়েই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছ। নিঃসন্দেহে আমি এভাবেই সৎ কর্মশীল মানুষদের পুরস্কার দিয়ে থাকি। এটা ছিল তাদের উভয়ের জন্য একটা সুস্পষ্ট পরীক্ষা মাত্র। আমি ছেলের পরিবর্তে একটা বড় কোরবানির জন্তু তাকে দান করলাম।’ (আয়াত ১০০-১০৭)। সুবহানাল্লাহ। কোরবানির ঘটনা নিয়ে আল্লাহ রব্বুল আলামিন এ সুরাটিতে তাঁর বান্দাদের জন্য বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘কোরবানির দিন পশু কোরবানির চেয়ে আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় আর কোনো আমল নেই। কেয়ামতের দিন জবাই করা পশুকে তার শিং ও ক্ষুরসহ হাজির করা হবে। কোরবানির জন্তুর রক্ত জমিনে পড়ার আগেই তা আল্লাহর কাছে কবুল হয়ে যায়। সুতরাং তোমরা খোলা মনে ও সন্তুষ্টচিত্তে কোরবানি কর।’ (মিশকাত শরিফ, খণ্ড -১, পৃষ্ঠা ১২৮)। কোরবানি কোনো উৎসব নয়। কোরবানি হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং নিজের ভিতর আল্লাহর ভয় জাগ্রত করার জন্য। গোশত খাওয়ার নিয়তে কিংবা কোরবানি না দিলে মানুষ খারাপ বলবে এ কারণে কোরবানি দেওয়া হলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। হালাল অর্থ দিয়ে কোরবানি দিতে হবে, তা না হলে সে কোরবানি আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ বলেন, ‘মনে রেখ, আল্লাহতায়ালার কাছে কখনো কোরবানির গোশত ও রক্ত পৌঁছায় না, বরং তার কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়াটুকুই।’ (সুরা হাজ, আয়াত ৩৭)। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নামে কোরবানির পশু জবাই করা যাবে না। যদি কেউ করে তা শিরক বলে গণ্য হবে। তবে আমাদের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী বলতে হবে অমুকের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করা হলো। রসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নামে পশু জবাই করে আল্লাহ তার ওপর লানত দেন।’ (সহিহ মুসলিম শরিফ)। সুতরাং কোরবানি দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সবাইকে সচেতনতা অবলম্বন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য সঠিকভাবে পশু কোরবানি করতে হবে। গরিব ও অসহায়দের মধ্যে কোরবানির গোশত বিলিয়ে দেওয়া অনেক সওয়াবের কাজ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নিয়ম মেনে কোরআন ও হাদিসের আলোকে কোরবানি করার তৌফিক দান করুন।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার