বিলুপ্তপ্রায় বাংলা গুইসাপ

বিলুপ্তপ্রায় বাংলা গুইসাপ

সংগৃহিত ছবি।

২০০০ সালে ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব কনজারভেশন অব ন্যাচার (আইইউসিএন) এই প্রজাতির গুইসাপকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রাণী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। বাংলা গুই এর বৈজ্ঞানিক নাম ভেরানাস বেঙ্গালেন্সিস।

কক্সবাজারের দরিয়ানগর সৈকতে পাওয়া গেল দেশ থেকে বিলুপ্ত প্রায় বাংলা গুই বা বড় গুই বা রামগদি গুইসাপ। হিমছড়ি বনাঞ্চল সংলগ্ন সৈকতে বিচরণ করার সময় আটকা পড়ে বিরল প্রজাতির এই গুইসাপ। পরে বনকর্মীরা খবর পেয়ে গুইসাপটি উদ্ধার করে সৈকতে অবমুক্ত করে।

বিজ্ঞানীরা জানান, সারা পৃথিবীতে ৭৩ প্রজাপতি গুই সাপ রয়েছে। যার মধ্যে বাংলাদেশে রয়েছে মাত্র তিন প্রজাতির। আর এগুলোও প্রায় বিলুপ্তির পথে। আর এ তিন প্রজাতির গুইসাপের মধ্যে অন্যতম হল বাংলা গুই বা বড় গুই বা রামগদি গুইসাপ।

চট্টগ্রামের মীরসরাই উপকূলেও বাংলা গুই বা বড় গুইসাপ এর দেখা মেলে। এর রঙ দেখতে গাঢ় বাদামি বা কালচে। এদের সারা শরীরে চামড়ার ওপরের ত্বকে হলুদ রঙের রিং বিদ্যমান। পা ও নখ লম্বাটে। লেজ চ্যাপ্টা ও শিরযুক্ত। এরা দ্রুত গাছে উঠতে পারে। সাঁতরে খাল–বিল–পুকুর সহজেই পাড়ি দিতে পারে। এর ওজন ২৫ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে কক্সবাজারের দরিয়ানগরের পাহাড়ে প্রচুর পাখির আবাস থাকায় এই বিলুপ্ত প্রায় জাতের গুইসাপটির ভাল আনাগোনা রয়েছে বলে মনে করেন পরিবেশকর্মীরা। এই প্রজাতির গুইসাপ ভারত, শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া ও চীনেও দেখতে পাওয়া যায়।

অনেক প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে টিকে থাকা বাকি দুই প্রজাতির গুইসাপ হলো– কালো গুইসাপ ও সোনা গুইসাপ। গুইসাপ খুব ভাল সাঁতারু। বাংলাদেশে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম ও সিলেটে গুইসাপের বিচরণ রয়েছে। পরিবেশ অর্থনীতিবিদদের মতে, একটি গুইসাপ, শিয়াল অথবা একটি পেঁচা বছরে পরিবেশগত যে সেবা দিয়ে থাকে তার অর্থনৈতিক মূল্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। তাদের মতে, একটি ইঁদুর প্রতিদিন ২০০টি ধানের শীষ কাটে। আর একটি গুইসাপ দৈনিক কমপক্ষে ৫০টি ইদুর খেয়ে থাকে।

গুইসাপ বা গোসাপ ভ্যারানিডি গোত্রের সরীসৃপ প্রাণী। নামে সাপ হলেও এরা আসলে সাপ নয়। এরা বড়সড় টিকটিকির মতো দেখতে, কিন্তু সাপের মতো দ্বিখণ্ডিত জীবসম্পন্ন প্রাণী। এদের লালায় ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া থাকায় তা বিষাক্ত।

উদ্ভিদ ও প্রাণী বিশেষজ্ঞদের মতে, গুইসাপ প্রকৃতিবান্ধব প্রাণী। একে কৃষকের বন্ধুও বলা হয়। কারণ এর প্রধান খাদ্য ইদুর। এছাড়া এরা বিষধর সাপ, ক্ষতিকর পোকামাকড়, ছোটসাপ, ব্যাঙ, মাছ, কেঁচো, শামুক, কাঁকড়া, হাঁস–মুরগির ছানা ও ডিম তাদের পছন্দের খাবার।

গুইসাপের চামড়া বেশ উন্নত মানের ও দামি। বিশ্ববাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। এই চামড়া দিয়ে ভ্যানিটি ব্যাগ, ম্যানি ব্যাগ, বেল্ট প্রভৃতি তৈরি করা হয়। এছাড়া তার শরীরের মাংশ দিয়ে ওষুধী তেল তৈরী করা হয়। যে কারণে চোরাচালানীদের কাছে প্রাণীটি একটি আকর্ষণীয় পণ্য। এছাড়া প্রজনন ক্ষেত্র এবং আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ায় গুইসাপ কমে যাওয়ার আরো একটি কারণ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গুইসাপ কোমোডো ড্রাগন, যেটি ইন্দোনেশিয়ার কোমোডো দ্বীপে পাওয়া যায়। এদের অন্য নাম ভারান। এই প্রাণী ইন্দোনেশিয়া জাতীয় প্রাণীদের অন্যতম। এর আকার ৩ মিটারের কাছাকাছি লম্বা হয়। ওজন হয় প্রয় ৭০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত।

পরিবেশবিদদের মতে, বাংলাদেশে গুই সাপ ঝুঁকির অন্যতম কারণ চামড়া আহরণ এবং প্রজনন ক্ষেত্র এবং আবাসস্থল ধ্বংস। গুই সাপের চামড়া রপ্তানির ফলে পরিবেশের ওপর ক্ষতিকর প্রভাবের বিবেচনায় ১৯৯০ সালে সরকার এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ২০১২ সালের বন্যপ্রণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনে এ প্রণীটি সংরক্ষিত হলেও, অতিমূল্যবান চামড়ার জন্যেই নিধন করা হচ্ছে এদের।