সাময়িক বরখাস্ত গৌতমসহ দুদকের তিন কর্মচারী

সাময়িক বরখাস্ত গৌতমসহ দুদকের তিন কর্মচারী

সংগৃহিত ছবি।

‘ঘুষ লেনদেনের সময়’ হাতেনাতে গ্রেপ্তার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারী গৌতম ভট্টাচার্য্যকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে সংস্থাটি। এ ছাড়া প্রতারণার মাধ্যমে টাকা দাবির অভিযোগে চট্টগ্রামে পুলিশের হাতে আটক দুদকের গাড়িচালক মো. সফিউল্ল্যাহ ও কনস্টেবল ইমরান হোসেনকেও সাময়িক বরখাস্ত করেছে দুদক।

গতকাল রবিবার (২৫ জুন) তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ জানিয়েছেন। দুদকের চেয়ারম্যান মইনউদ্দীন আবদুল্লাহ স্বাক্ষরিত পৃথক আদেশে তাদের বিরুদ্ধে
দুর্নীতি দমন কমিশন চাকরিবিধি ২০০৮-এর ৩৯ (খ) ৩৯ (ছ) ধারা অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

এর আগে শুক্রবার (২৩ জুন) মতিঝিলের একটি হোটেলে টাকা লেনদেনের সময় গৌতমসহ চারজনকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- এসকেন আলী খান, হাবিবুর রহমান ও পরিতোষ ম-ল। তাদের মধ্যে এসকেন আলী চাকরিচ্যুত পুলিশ কনস্টেবল। এর পর গত শনিবার এক শুনানি শেষে তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকা মহানগর হাকিম হুমায়ুন কবীর।

গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগ, এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অর্থ দাবির পর গৌতমকে ধরতে ফাঁদ পেতে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুদক কর্মকর্তাদের সই জাল করে বায়তুল মোকাররম মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের একটি চিঠি তৈরি করে তা নথিভুক্ত না করার আশ্বাস দিয়ে গৌতম ২ কোটি টাকা দাবি করেন। ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর ফাঁদ পেতে তাদের ধরা হয়। এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় ‘অন্যের রূপ ধারণ’ করে প্রতারণা ও ভয়ভীতি প্রর্শনের অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো দুর্নীতিবাজ বা অন্যায় কাজ করে এমন ব্যক্তি থাকতে পারবে না। কালকের ঘটনায় (গৌতম ভট্টাচার্য্যকে গ্রেপ্তার) আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল, যারা হাতেনাতে ধরেছে তাদেরকে বলেছি যে, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হোক। একই সঙ্গে বলেছি, আরও কেউ জড়িত আছে কিনা তদন্তে বেরিয়ে আসুক। সেই কর্মচারীকে আমরা সাময়িক বরখাস্ত করেছি। পুলিশ থেকে মামলা হয়েছে, আমরাও বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থার করব।’

এদিকে গত ১১ জুন চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার বনৌজা নামের একটি রেস্টুরেন্ট থেকে দুদকের গাড়িচালক মো. সফিউল্যাহ ও কনস্টেবল এমরানকে আটক করে পুলিশ। যদিও দুদকের পক্ষে চট্টগ্রামের ইপিজেড থানা থেকে ওই দুই কর্মচারীকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছিল। এক ব্যবসায়ীর নামে নিজেরাই দুদকে অভিযোগ জমা দিয়ে সেই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিয়মিত টাকা আদায় করতেন দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের কনস্টেবল এমরান হোসেন ও তার সহযোগীরা। ওই দিন বনৌজা রেস্টুরেন্টে টাকা আনতে গেলে পুলিশের হাতে আটক হন সফিউল্যাহ ও এমরান। এরপর ওই ঘটনার তাদেরকে চট্টগ্রাম কার্যালয় থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করে দুদক।

দুদকের মহাপরিচালকের ব্যক্তিগত সহকারীকে সাময়িক বরখাস্তের কথা জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ বলেন, ‘শুধু এটা নয়, কদিন আগে চট্টগ্রামেও এমন একটা ঘটনা ঘটেছে, একজন ড্রাইভার ও আরেকজন কনস্টেবল, তাদেরকেও আমরা সাময়িক বরখাস্ত করেছি। বিভাগীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তিনি জানান পুলিশও এ বিষয়ে কাজ করছে। এমন আরও যারা আছে তাদের শনাক্ত করতে আমরা চেষ্টা করছি। আমরা এ ধরনের কোনো কাজকে প্রশ্রয় দেব না। আরেক প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, গৌতম ভট্টচার্য্য যে মহাপরিচালকের অধীনে কাজ করছেন তিনি এক থেকে দেড় মাস আগে এখানে যোগ দিয়েছেন। তার এ কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, ‘এমন আরও কে কে আছে তাদের বের করতে আমরা চেষ্টায় আছি। আমাদের এই অফিসের ভেতরে এমন আরও কেউ আছে কিনা, পুলিশকেও গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে আর কে কে আছে তা উদঘাটন করার জন্য বলেছি।’