রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোরবানির জন্য প্রস্তুত আড়াই হাজার পশু

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোরবানির জন্য প্রস্তুত আড়াই হাজার পশু

সংগৃহীত

ঈদুল আজহা উপলক্ষে কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে আড়াই হাজারের বেশি গরু-ছাগল জবাই করা হবে। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) পক্ষ থেকে পাওয়া এসব পশু উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্পগুলোতে পাঠানোর প্রক্রিয়াও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এর মধ্য ২ হাজার ১০০টি গরু এবং ৬৭৮টি ছাগল।

অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দ্দৌজা সমকালকে বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য আড়াই হাজারের বেশি কোরবানির পশু পাওয়া গেছে। এ সংখ্যা কিছুটা বাড়তে পারে। তবে যেসব পশু পেয়েছি, সেগুলো একত্রিত করে যেখানে, যতটা দরকার পাঠানো হচ্ছে। এসব পশু জবাইয়ের পর মাঝিদের সহযোগিতায় ক্যাম্প ইনচার্জদের তত্ত্বাবধানে মাংস বণ্টন করা হবে।

আগামীকাল বাংলাদেশে ঈদুল আজহা পালিত হবে। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রায় অধিকাংশ মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়ায় তারা ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এদিকে টেকনাফের নয়াপাড়া মৌচনি রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (উপসচিস) আব্দুল হান্নানের দাবি, তার ক্যাম্পের জন্য এখনও কোরবানির পশু পাওয়া যায়নি।

তিনি বলেন, এবার রোহিঙ্গাদের জন্য কোরবানির পশু পাওয়া যায়নি। তবে ক্যাম্পের কিছু রোহিঙ্গা ভাগাভাগি করে কোরবানির পশু কিনছে বলে শুনেছি।

টেকনাফের লেদা ক্যাম্প ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম জানান, তার ক্যাম্পে সাড়ে ৫ হাজার পরিবারে প্রায় ২৮ হাজার মানুষ বাস করেন। এসব মানুষ গত বছর কোরবানির ঈদে গরুর মাংস পায়নি। এবারও তার ক্যাম্পের লোকজনের কোনো বরাদ্দ পায়নি। তবে কিছু লোকজন মিলেমিশে কোরবানির গরু কিনেছেন বলে জানান তিনি। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, লেদা ও রেজিস্টার্ড ক্যাম্পের পুরনো রোহিঙ্গাদের বাইরে থেকে গরু দেওয়া হচ্ছে না। কারণ স্বচ্ছল হওয়ায় তাদের অনেকেই নিজ উদ্যোগে পশু কিনে কোরবানি দিচ্ছেন। তবে মিয়ানমার থেকে গত আগস্টের পর পালিয়ে আসা নতুন রোহিঙ্গাদের পশু কেনার আর্থিক সক্ষমতা নেই।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ১২টি ঈদ পার করতে যাচ্ছি। আমরা মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় ২-৩টি বড় গরু কোরবানি দিতাম। কিন্তু এখানে আসার পর সেই সুযোগ হয়নি। এবার আমরা ১০ জন মিলে একটি ছোট গরু কিনেছি।

তিনি আরও বলেন, ৬টি বছর পার হচ্ছে যাচ্ছে। তবুও আমাদের কোনো কূল-কিনারা হচ্ছে না। এরপরও আমাদের আশা, অনন্ত আগামী বছর নিজ দেশে ঈদ উদযাপন করতে পারবো।

টেকনাফের জাদিমুড়া শালবন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা বজলুল রহমান বলেন, আমরা অধীনে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের বসতি। এখানে সন্ধ্যার মধ্যে কোরবানির পশু পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে ২৫ আগস্ট ঈদুল আজহার মাত্র কয়েকদিন আগে রাখাইনের ৩০টি নিরাপত্তা চৌকিতে একযোগে হামলার ঘটনা ঘটে। এর প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে। এ সময় প্রাণ বাঁচাতে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে পুরনোসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বসবাস করছে। তবে জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৫৫৭।