মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস আজ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস আজ

ছবিঃ সংগৃহিত।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস আজ। প্রতি বছর চোখ ধাঁধানো আতশবাজি আর জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করেন মার্কিনিরা। ব্যয় করেন শত শত কোটি ডলার।

২৩৭ বছর আগে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই ইংল্যান্ডের শাসন থেকে পৃথক হওয়ার জন্য ভোট দেন আমেরিকার দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেস। এর দুইদিন পর স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় কংগ্রেস। কিন্তু পৃথক হতে ব্রিটেনের সঙ্গে চূড়ান্ত স্বাক্ষর ২ আগস্টে অনুষ্ঠিত হলেও প্রত্যেক বছর চার জুলাই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই দিনটির জন্য জীবন দেন ২৫ হাজার বিপ্লবী আমেরিকান এবং ২৭ হাজার ব্রিটিশ ও জার্মান সেনা।

স্বাধীনতার প্রাক্কালে এই ১৩টি উপনিবেশ একসঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম শুরু করে। ভার্জিনিয়া উপনিবেশের জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন প্রধান সেনাপতি। এরই মধ্যে শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ।

আর সেই যুদ্ধে উপনিবেশগুলোর বিজয়ের প্রাক্কালে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পর পাঁচজনের একটি কমিটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করে। টমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন এ কমিটির অন্যতম সদস্য। টমাস জেফারসন ছিলেন মূল লেখক।

রচিত ঘোষণাপত্রটি নিয়ে কংগ্রেসে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং পরিশেষে ঘোষণাপত্রটি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ঘোষণাপত্রটি কংগ্রেসের অনুমোদন পায় ৪ জুলাই ১৭৭৬ সালে।

ব্রিটিশদের অরাজকতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য ‘প্রতিটি মানুষই সমান এবং একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি’ এই বাণীকে সামনে রেখে থমাস জেফারসন লিখলেন স্বাধীনতার বাণী।

শুধু ভৌগোলিকই নয়, ভেঙে গেল সব পরাধীনতার শৃঙ্খল, বাকস্বাধীনতা, পত্রিকা ও প্রকাশনার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এমনকি কোনো আইন পরিবর্তনের জন্যও সরকারের কাছে আবেদন করার স্বাধীনতা সবার, আমেরিকায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষের। নিজেকে প্রকাশ করার যে স্বাধীনতা, সংবাদপত্র, রেডিও-টেলিভিশন তথা গোটা মিডিয়ার যে স্বাধীনতা আছে আমেরিকায়, পৃথিবীর বহু দেশেই এতটা স্বাধীনতা থাকে না মানুষের।

আর ধর্ম? রাষ্ট্র কখনোই কোনো ধর্ম পালনে কাউকে বাধ্য বা নিষেধও করবে না। যে যার ধর্ম পালন করবে। যদিও অধিকাংশ জনগণই ঈশ্বর ও ধর্মে বিশ্বাসী এখানে। কেউ যদি কোনো ধর্মই পালন করতে না চায়, এমনকি ঈশ্বরকেও বিশ্বাস করতে না চায়, সে অধিকারও আছে তার। আছে নিরশ্বরবাদ নিয়ে কথা বলার, বই লেখার সব অধিকার। এ জন্য তাকে দেশান্তরিত হতে হয় না। নিজ ধর্ম পালনের অবাধ স্বাধীনতার কথা ভেবেই ফ্রান্স, স্পেন, ইংল্যান্ড থেকে বহু লোক আমেরিকায় এসেছিল। এখনো নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে স্বাধীনভাবে নিজের ধর্ম পালনের জন্য এটিই একমাত্র ভূমি। কত ধর্ম-বর্ণের মানুষ! কি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। কিন্তু ঘোষণার পর পরই এতসব সুফল চলে এসেছে তা নয়। স্বাধীনতার এ ঘোষণার পর গ্রেট ব্রিটেন থেকে উপনিবেশগুলো বেরিয়ে এসে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণাকালে ছিল ১৩টি রাষ্ট্র। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বর্তমানে আমেরিকা ব্যয় করেন তার একটা হিসাব দশ শতকের দিকে সর্বপ্রথম চিনে আতশবাজির প্রচলন হয়।

কিন্তু স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বর্তমানে চিনের প্রায় ৯৯ শতাংশ আতশবাজির ক্রেতা মার্কিনিরা। স্বাধীনতা দিবসে প্রায় ছয় কোটি আমেরিকান পতাকা উড়ায়। ২০০৭ সালে পতাকা প্রস্তুতকারকরা ৩০ কোটি ২৭ লাখ ডলারের পতাকা বিক্রি করেছিল।

রান্নাজাতীয় রিটেইল ফেডারেশনের তথ্যমতে, প্রতি বছরের ৪ জুলাইয়ে ৬৮ শতাংশ আমেরিকান জনগণ বারবিকিউ বা অন্য উপায়ে বনভোজনের আয়োজন করে।  একদিনেই প্রায় ১৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের হট ডগ বিক্রি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। মদ খাওয়ার জিনিসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ হয় বিয়ারে। ক্রিস্টমাস ডে, মেমোরিয়াল ডে ও শ্রমিক দিবসের পরে এই দিনেই সর্বোচ্চ বিয়ার কেনা-বেচা করা হয়। এছাড়া ৩০ কোটি ৫৯ লাখ ডলারের মদ বিক্রি হয়।

ভ্রমণ স্বাধীনতা দিবসে প্রায় চার কোটি ৮০ লাখ আমেরিকান নিজের বাড়ি থেকে ৫০ মাইল দূরত্ব ভ্রমণ করে।

ফিলাদেলফিয়ার স্বাগতম আমেরিকা গঠনের জনকেরা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদন দিয়েছিলেন ফিলাদেলফিয়া শহরে। এ জন্য ১ জুলাই থেকে শুরু হয়ে এক সপ্তাহ চলে স্বাধীনতা দিবস উদযাপন। কনসার্ট, শিক্ষামূলক কর্মসূচির আয়োজন ও ঐতিহাসিক স্থাপনা ঘুরিয়ে দেখানো হয় এখানে। পাশাপাশি স্বাধীনতা দিবস আর বাংলাদেশের মতো ‘বিজয় দিবস’ পৃথিবীর খুব কম দেশেরই আছে।

যে ক’টা দেশ জাতীয়ভাবে বিজয় দিবস পালন করে তার বেশির ভাগ স্বাধীনতার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেসব ইউরোপীয় দেশসমূহকে জার্মানি দখল করে রাখে- সেসব দেশ মুক্ত হবার পরে ৮ মে ভি-ই ডে বা বিজয় দিবস পালন করে।