চট্টগ্রামে একদিনেই চারগুণ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি

চট্টগ্রামে একদিনেই চারগুণ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামে একদিনের ব্যবধানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চারগুণের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে। দিনদিন ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় হাসপাতালগুলোতেও চাপ বেড়েছে রোগী ভর্তির। যার কারণে সরকারি তো বটেই, ঠাঁই নেই অবস্থা বেসরকারি হাসপাতালেও। এছাড়া চলতি জুলাইয়ের ৯ দিনে যে সংখ্যক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন, তা গত জুন মাসে আক্রান্তের তুলনায় বেশি। এর মাঝে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে একদিনে সর্বোচ্চ। এ নিয়ে চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৫৯ জনে। মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি মৌসুমে সব মিলিয়ে ৮৫৯ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে চট্টগ্রামে। এর ৬৭ শতাংশই আক্রান্ত হয়েছে শেষ ৩৯ দিনে (জুনের ৩০ দিন ও জুলাইয়ের ৯ দিনে)। শেষ ৩৯ দিনে মোট ৫৭৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। অথচ এর আগের ৫ মাসে (জানুয়ারি থেকে মে) আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৮২ জন।

এর মধ্যে জানুয়ারিতে ৭৭ জন, ফেব্রুয়ারিতে ২২ জন, মার্চ মাসে ১২ জন, এপ্রিলে ১৮ জন এবং মে মাসে ৫৩ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। জুন মাসে ২৮২ জন এবং চলতি জুলাইয়ের ৯ দিনে সর্বোচ্চ ২৯৫ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

আক্রান্তের পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি মৃত্যুও হয়েছে শেষ ৩৯ দিনে। চলতি বছর এ পর্যন্ত মোট ১৩ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়েছে চট্টগ্রামে। এর মাঝে জানুয়ারিতে মারা যায় তিনজন। বাকি ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে শেষ ৩৯ দিনে। জুনে ৬ জন এবং জুলাইয়ের এই কয়দিনে মৃত্যু হয়েছে ৪ জনের।

চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত জুন মাসে মোট ২৮২ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয় চট্টগ্রামে। তবে চলতি জুলাইয়ের ৯ দিনেই আক্রান্ত হয়েছে ২৯৫ জন। হিসেবে জুন মাসে আক্রান্তের সংখ্যা পার হয়েছে জুলাইয়ের ৯ দিনে। জুলাইয়ের ৯ দিনে আক্রান্তের এই সংখ্যা মে মাসের তুলনায় ৫ গুণের বেশি। মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫৩ জন।

২৪ ঘণ্টায় ১১১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। যা চলতি বছরে একদিনে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যা। ভর্তিদের মধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ৬৫ জন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১৩ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ১২ জন, বিআইটিআইডি হাসপাতালে ২০ জন, লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১ জন রোগী রয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১৩, ১৪, ১৫, ১৬ এবং শিশু ওয়ার্ডে পৃথক পৃথকভাবে ডেঙ্গু রোগীদের সেবা প্রদান করা হচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় বারান্দাতেও সেবা দিতে হচ্ছে রোগীদের। এছাড়াও চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালেও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা গত কয়েকদিনের তুলনায় বেড়েছে। আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও রোগী বেড়েছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম আহসান বলেন, রোগীর সংখ্যা কয়েকদিন ধরে তুলনামূলক বেড়েছে। এখন পৃথক পৃথক ওয়ার্ডে ভর্তি রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বিষয়টি আলোচনাও হয়েছে।

এদিকে গরমসহ নানা অজুহাতে ডেঙ্গু রোগীরা মশারি তুলে রাখেন এবং বেশিরভাগ সময় তারা মশারির বাইরে থাকেন বলে জানান চমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. রাজিব পালিত। তিনি বলেন, রোগীরা সচেতন নয়। যার কারণে বারবার বললেও তারা মশারির ভিতর থাকতে চান না। এতে করে ডেঙ্গু আক্রান্তদের পাশাপাশি থাকা সাধারণ রোগীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্তের ঝুঁকিতে পড়ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূলত বর্ষা মৌসুমে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা যায়। কিন্তু এবার পুরোদমে বর্ষা নামার আগেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করে, যা দিন দিন বাড়ছে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত স্বাস্থ্য বিভাগও।

থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে বলে মনে করেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।

তিনি বলেন, কিছুদিন বেশ গরম পড়লেও ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন পাত্রে (জায়গায়) পানি জমে মশার লার্ভার সৃষ্টি হচ্ছে। যেখানে এডিশ মশার প্রজনন ঘটছে। মূলত এ কারণেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে শুরু করেছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধের অন্যতম উপায় হচ্ছে মশার লার্ভা ধ্বংস করা, এডিস মশার বংশ বিস্তার রোধ করা। মোট কথা মশক নিধন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা।