কাশ্মীরি আপেল নাকি বাংলার পেয়ারা, কোনটা বেশি উপকারী?

কাশ্মীরি আপেল নাকি বাংলার পেয়ারা, কোনটা বেশি উপকারী?

ছবিঃ সংগৃহীত।

আপেলের লোভনীয় স্বাদ আমাদের সবসময়ই মোহিত করে। তাই বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলেই প্রায় এই ফল খেতে পছন্দ করেন। সেদিক থেকে দেখতে গেলে পেয়ারা তেমন একটা পাত্তা পায় না। বরং এই ফল সবসময়ই যেন অবহেলার পাত্র।

আসলে আমাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে যে, আপেল খুবই উপকারী। সেই তুলনায় পেয়ারা অনেকটাই নিম্নমানের। আর আমাদের এই ধারণায় ইন্ধন দেয় আপেল ও পেয়ারার দামের পার্থক্য। সারা বছরই পেয়ারার তুলনায় আপেলের দাম থাকে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। আর সেই কারণেই অনেকে ধরে নেন যে পেয়ারার তুলনায় আপেল কয়েকগুণ হয়তো উপকারী।

তবে জনসাধারণের মনে গেঁথে বসে থাকা এই ধারণা কি আদৌ সত্যি? নাকি আপেল ও পেয়ারার মধ্যে পুষ্টিগুণের লড়াই তুল্যমূল্য? এই জরুরি প্রশ্ন নিয়েই আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম কলকাতা শহরের বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ মীনাক্ষী মজুমদারের কাছে। তিনিই আমাদের এই বিষয়ে বিশদে জানালেন।

১. গুণের রাজা আপেল​

আপেলের পুষ্টিগুণ গুণে শেষ করা যাবে না। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, ভিটামিন কে, কপার, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। আর এই সকল উপাদানই কিন্তু আপেলকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়। এক্ষেত্রে হার্টের রোগ, বিপি, অ্যাজমার মতো সমস্যার প্রকোপ কমিয়ে দেয় এই ফল। এছাড়া গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আপেলে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা ডায়াবিটিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ থাকতে চাইলে রোজ আপেল খেতে ভুলবেন না যেন।

​২. পেয়ারার গুণের ফিরিস্তি শুনলে অবাক হবেন​

মীনাক্ষী মজুমদারের মতে, ওই কথায় আছে গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না। পেয়ারার ক্ষেত্রেও বিষয়টা ঠিক তাই। জানলে অবাক হয়ে যাবেন, দিনে মাত্র একটি পেয়ারা খেলেই দৈনিক ভিটামিন সি-এর চাহিদা পূরণ হয়ে যাবে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর কাজে এই ফলের জুড়ি মেলা ভার। এছাড়া এতে রয়েছে আয়রন, ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়ামের প্রাচুর্য। ফলে বাড়বে হজম ক্ষমতা। সেই সঙ্গে হার্টের অসুখ থেকে শুরু করে ডায়াবিটিসের মতো রোগও দূরে থাকতে বাধ্য় হবে।

​৩. পেয়ারা না আপেল, কোনটা বেশি উপকারী?​

এই দুটি ফলেরই নিজস্ব কিছু গুণ রয়েছে। তাই সময়-সুযোগ পেলেই পেয়ারা এবং আপেল দুইই খেতে হবে বলে জানালেন মীনাক্ষী মজুমজদার। এক্ষেত্রে একদিন পেয়ারা খেলেন তো পরের দিন আপেল খেতে পারেন। এভাবে অদলবদল করে খেলেই উপকার পাবেন। তবে একদিনে একটির বেশি ফল না খাওয়াই ভালো। এতে উপকারের বদলে শরীরের ক্ষতি হওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হতে পারে।

৪. পেটে ব্যথা হলে সাবধান​

ফল খেলে সাধারণত তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা হয় না। তবে অনেকেরই পেয়ারা বা আপেল খেলে পেটে ব্যথা হয়। আপনিও কি এই সমস্যায় ভুক্তভোগী? তাহলে সমস্যা সমাধানে আপেল সিদ্ধ করে খেতে পারেন। আর অপরদিকে পেয়ারা খেতে হবে বীজ ফেলে দিয়ে। এতেই দেখবেন সমস্যার প্রকোপ কমবে। এদিকে দেহে খনিজ এবং ভিটামিনের ঘাটতিও হবে না।

​৫. পেট ভরে খেয়ে ফল খাবেন না​

অনেকেই ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চে ফল খান। তবে এই অভ্যাস কিন্তু সমস্যা তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে রক্তে সুগার বৃদ্ধির আশঙ্কা বাড়বে বৈকি। এমনকী বাড়তে পারে ওজনও। তাই ভারী খাবার খাওয়ার পরে ফল না খাওয়াই মঙ্গল। বরং চেষ্টা করুন, দুটি মিলের মাঝে ফল খাওয়ার। তাহলেই উপকার মিলবে সবথেকে বেশি।



Disclaimer: প্রতিবেদনটি সচেতনতার উদ্দেশ্যে লেখা হয়েছে। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।