ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে নেবেন

ডেঙ্গু রোগীকে কখন হাসপাতালে নেবেন

ফাইল ছবি

ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি ভাইরাসজনিত রোগ। এ বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে যাচ্ছে। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হচ্ছে প্রতিদিন।

ডেঙ্গুর লক্ষণ: অনেক ক্ষেত্রেই ডেঙ্গুজ্বরের কোনো লক্ষণ থাকে না। অনেকের সাধারণ ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশিত হয়।

তবে জ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে ছোপ ছোপ দাগ ডেঙ্গুজ্বরের প্রধান তিন লক্ষণ। এছাড়া গা-হাত-পা ব্যথা, অস্থি সন্ধিতে ব্যথা, চোখের পেছন দিকে ব্যথা, পিঠে ব্যথা হতে পারে। ব্যথা হতে পারে তীব্রমাত্রার।

একেবারে হাড় ভেঙে যাওয়ার মতো ব্যথা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে সেজন্য এই জ্বরকে বলা হয় ব্রেক বোন ফিভার। চতুর্থ-পঞ্চম দিনে জ্বর চলে যায়। ক্ষেত্রবিশেষে আবার ফেরত আসে জ্বর। সেজন্য এটিকে বলা হয় স্যাডল ব্যাক ফিভার।

এর পাশাপাশি ক্ষুধামন্দা, অরুচি, বমি ইত্যাদি দেখা দিতে পারে। সর্দি, কাশি, গলা ব্যথাও লক্ষণ হিসেবে আসতে পারে। তীব্র ক্লান্তি, হতাশা দানা বাঁধে। দুই থেকে আট দিন পর্যন্ত জ্বরের দশা চলতে পারে। সাধারণত তৃতীয় থেকে অষ্টম দিনের মাঝে শুরু হতে পারে ডেঙ্গুর জটিলতা।

করণীয়: রোগীকে সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামে রাখতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দিতে হবে। ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ চারবার প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। গা মোছাতে হবে, কপালে জলপট্টি দিতে হবে। পর্যাপ্ত পানীয় পান করাতে হবে। এছাড়া ডাবের পানি, খাবার স্যালাইন, স্যুপ, দুধ, শরবত, ফলের রস ইত্যাদি সেবন করতে হবে। ব্যথানাশক বড়ি কিংবা এসপিরিন জাতীয় ওষুধ সেবন করা যাবে না। এতে রক্তক্ষরণজনিত জটিলতা বাড়তে পারে। অনেক শিশুর তাপমাত্রা বেড়ে গেলে খিঁচুনি দেখা দেয়। এমনটি হলে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

কখন হাসপাতালে নিতে হবে: যদি তীব্রমাত্রায় পেটে ব্যথা হয়, ২৪ ঘণ্টায় তিন বারের বেশি বমি হয়, কিছু খেতে না পারে, দাঁতের গোড়া, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, খিটখিটে মেজাজ, অস্থিরতা, ছটফটানি শুরু হয়, হঠাৎ করে আচরণগত পরিবর্তন দেখা দেয়, চার থেকে ছয় ঘণ্টা ধরে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় অথবা না হয়, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়, পেটে কিংবা ফুসফুসে পানি আসে, রক্তে প্লাটিলেটের মাত্রা এক লাখের নিচে নেমে যায় তবে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

লেখক: মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ, ঢাকা।