আবারও যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ

আবারও যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ

প্রতীকী ছবি।

আবারও যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাইবে বাংলাদেশ। বিশেষত বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানিতে দেশটি যাতে শুল্কমুক্ত বা কম শুল্ক সুবিধা দেয়, তার জন্য বিশেষ জোর তৎপরতা চালানো হবে। আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য দুই দিনব্যাপী বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) সপ্তম কাউন্সিল বৈঠকে বাংলাদেশ এমন অবস্থান নেবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়। প্রতিযোগী অনেক দেশের তুলনায় যা বেশি।

রপ্তানি আয় বাড়াতে বাংলাদেশ অনেক দিন ধরে এ শুল্ক প্রত্যাহার বা কমানোর চেষ্টা করে আসছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের দাবির প্রতি সাড়া দিয়ে গত মে মাসে সে দেশ থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দিয়েছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা দেশে আসার পর বন্দরে পোকামাকড়মুক্ত বা ফিউমিগেশন করতে হয় না। এ সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে টিকফা কাউন্সিল বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত বা কম শুল্কে প্রবেশাধিকার চাইবে বাংলাদেশ।

বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা তুলায় পোশাক তৈরি করে সে দেশে রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যাতে শুল্ক আরোপ না করে, বাংলাদেশ সে প্রস্তাবও দেবে।

জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস (জিএসপি) বা অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের বেশ কিছু পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত। অবশ্য তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধার আওতায় ছিল না।

কিন্তু ২০১২ সালে তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও পরের বছর রানা প্লাজা ধসে সহস্রাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী সংগঠন ‘আমেরিকান অর্গানাইজেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও)’-এর আবেদনে ২০১৩ সালের ২৭ জুন বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করা হয়।

বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা পুনর্বহালের জন্য ১৬ দফা অ্যাকশন প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে জিএসপি পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। বাংলাদেশে শ্রমমান উন্নয়ন, শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করা, শ্রমিক নেতা কল্পনা আক্তার ও বাবুল আক্তারের সংগঠনের নিবন্ধন পুনর্বহাল, আমিনুল হত্যা মামলার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ইপিজেডে ট্রেড ইউনিয়ন চালু করা ইত্যাদি ওই কর্মপরিকল্পনায় ছিল।

শর্ত পূরণ করার দাবি করে ২০১৫ সাল থেকে টিকফা সভা, পার্টনারশিপ ডায়ালগসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন আলোচনায় বাংলাদেশ জিএসপি পুনবর্হালের দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্র এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।

টিকফার আসন্ন বৈঠকে বিষয়টি তুলবে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশের মূল নজর থাকবে তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত সুবিধার ওপর। এ ছাড়া বৈঠকে বাণিজ্য ও জলবায়ু, মেধাস্বত্ব অধিকার, মানসম্পন্ন সনদ অবকাঠামোর জন্য প্রযুক্তিগত সহযোগিতা, শ্রম সমস্যা ইত্যাদি বিষয় নিয়েও আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ গনমাধ্যমকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধার দাবি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানানো হবে। যুক্তরাষ্ট্রের তুলা আমদানিতে সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে যৌক্তিকভাবেই সে দেশের তুলায় তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে। একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হবে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) গবেষণা পরিচালক ড. আবদুর রাজ্জাক গনমাধ্যমকে বলেন, টিকফা কাউন্সিল বৈঠকে উপস্থাপিত এজেন্ডাগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যুক্তরাষ্ট্র ঠিক করে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আরও যৌক্তিকতার সঙ্গে দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এজেন্ডা উপস্থাপন করতে হবে। টিকফা কাউন্সিল থেকে জিএসপি পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত না পাওয়া গেলেও তা পুনর্বহালে জোর দাবি তুলতে হবে।

তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সে দেশ থেকে কাঁচা তুলা আমদানির ক্ষেত্রে পোকামাকড়মুক্ত না করার সুবিধা দিয়েছে সরকার। এ সুবিধা উল্লেখ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দাবি করতেই পারে সরকার। এ ছাড়া জিএসপি স্থগিত থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে যেসব সমস্যা হচ্ছে, সেগুলো যৌক্তিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে।