ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠেছে ডিএসসিসির মুগদা-ডেমরা-জুরাইন

ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠেছে ডিএসসিসির মুগদা-ডেমরা-জুরাইন

ফাইল ছবি।

রাজধানী ঢাকায় প্রতিদিনই রেকর্ড মাত্রায় বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। দুই সিটি করপোরেশনের মধ্যে ঢাকা দক্ষিণের (ডিএসসিসি) মুগদা, ডেমরা ও জুরাইন ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকায় এখন পর্যন্ত আক্রান্তের দিক দিয়ে এগিয়ে আছে এসব এলাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও এলাকাগুলোকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণের ২০টি সরকারি ও ৪৬টি বেসরকারি হাসপাতালের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের হার সবচেয়ে বেশি মুগদা হাসপাতালে। প্রথম সারিতে আছে মিটফোর্ড ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও। এসব হাসপাতালের মধ্যে গতকাল মিটফোর্ডে ১৩২ ও মুগদা হাসপাতালে ১১৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়। মূলত আশপাশের এলাকাগুলো থেকেই এসব হাসপাতালে রোগী  বেশি আসছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুগদা, ডেমরা ও জুরাইন তুলনামূলক নিচু এলাকা হওয়ায় এসব স্থানে ডোবা-নালা ও খালের সংখ্যা বেশি। যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে এসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘‌দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে মুগদা, ডেমরা, জুরাইনসহ আশপাশ এলাকা ডেঙ্গুর হটস্পট হয়ে উঠেছে। শিগগিরই ব্যবস্থা নেয়া না হলে এসব এলাকায় ডেঙ্গু পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে।’ 

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘‌এসব এলাকা ঢাকার নিচু এলাকা। তাছাড়া সেখানে এমন অনেক ওয়াটার বডি রয়েছে, যেগুলো সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা হয়নি। অনেক খাল রয়েছে, রয়েছে মজা পুকুরও। এসব ছোট ছোট জলাশয় ওই অঞ্চলকে ডেঙ্গুর হটস্পট হওয়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রাক-বর্ষা সমীক্ষায়ও এসব এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যথার্থ উদ্যোগের অভাবে পরিস্থিতি ভয়ানক দিকে মোড় নিচ্ছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নিচু এলাকা-ডোবা ও জলাশয়ের কারণে রাজধানীর মুগদা, ডেমরা ও জুরাইন এডিস মশার জন্ম ও বসবাস উপযোগী এলাকায় পরিণত হয়েছে। ‌সিটি করপোরেশনের ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় পরিবেশগত এ বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া উচিত বলে মনে করি।’

রাজধানীর ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর ২০টি সরকারি ও ৪৬টি বেসরকারি হাসপাতালে ৯২২ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১১৫ জনই মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। ১৮ জুলাই রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৭৪১ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়। সেখানেও দেখা গেছে সর্বাধিক ১৬০ জন রোগী মুগদা হাসপাতালের। ১৭ জুলাই রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হওয়া ৮৪৭ জন রোগীর মধ্যে ১৫৯ জন, ১৬ জুলাই ৭৪১ জনের মধ্যে ১৬০ জন ও ১৫ জুলাই ১ হাজার ১৬৮ জনের মধ্যে ২৮০ জন রোগীই মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ঢাকায় ১৬ হাজার ৩৯৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় ১১৩ জন। 

ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. ফজলে শামসুল কবিরের দাবি, মুগদাসহ বড় হাসপাতালগুলোয় ভর্তি রোগীদের বেশির ভাগই ঢাকার বাইরের। তবে মুগদা, ডেমরা ও জুরাইনে তুলনামূলক ডেঙ্গু রোগী বেশি, এটা অস্বীকারের সুযোগ নেই।