মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, ‘অপহরণ নাটক’ সাজান মামা

মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা, ‘অপহরণ নাটক’ সাজান মামা

ফারিহা জান্নাত। (ফাইল ছবি)

নিখোঁজের প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা দারুস সুন্নাহ মাদ্রাসার পেছনের একটি নালা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থী ফারিহা জান্নাতের (৯) মরদেহ। এর মধ্যে মুক্তিপণ চেয়ে ফারিহার পরিবারের কাছে ফোনও যায়। মরদেহ পাওয়া গেলে সবাই বুঝতে পারেন, মুক্তিপণ না দেয়ার কারণে প্রাণ গেছে শিশু ফারিহার।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উদ্ধার করা হয় ফারিহার মরদেহ। পরিবার যখন আদরের সন্তান হারিয়ে পাগলপ্রায়, ঠিক তখনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ জানতে পারে, ফারিহাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। আর এই কাজটি করেছেন ফারিহারই এক মামা (মায়ের চাচাতো ভাই) মো. এরফান।

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের (র‌্যাব) হাতে আটকের পর এরফান এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যই দিয়েছেন। এরফানের বাবা ওই মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ। এরফান নিজেও মাদ্রাসাটির শিক্ষার্থী। অন্যদিকে ফারিহা হ্নীলা ইউনিয়নের পশ্চিম সিকদার পাড়ার সানা উল্লাহর মেয়ে।

এরফানকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে র‌্যাব জানিয়েছে, খাবারের লোভ দেখিয়ে ফারিহাকে নিজের বাবা তথা মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষের কক্ষে নিয়ে যান এরফান। সেখানে তাকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে ধর্ষণ করেন। এ সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে ফারিহাকে নাইলনের দড়ি দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এরফান। পরে মরদেহ মাদ্রাসার পেছনের একটি নালায় ফেলে দেন।

শুক্রবার (২৮ জুলাই) রাত সোয়া ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে র‌্যাব-১৫-এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সৈয়দ সাদিকুল হক জানান, ফারিহাকে হত্যার পর ঘটনা ধামাচাপা দিতে কয়েক দফা ফোন করে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করেন এরফান। ফারিহাকে অপহরণ করা হয়েছে- এমন প্রচারও চালান। প্রকৃতপক্ষে হত্যাকাণ্ডকে অপহরণের ঘটনা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতেই এই প্রয়াস চালান। আর মাদ্রাসায় বাবার কক্ষেই ফারিহাকে ধর্ষণ ও হত্যা করেন তিনি। হত্যার পর রাতভর মাদ্রাসাতেই অবস্থান করেন।

ফারিহার নানা এনামুল হক মঞ্জুর বলেন, একটি মাদ্রাসায় এমন ঘটনা ঘটবে, তা মেনে নিতে পারছি না। এখানে দায়িত্বহীনতা রয়েছে। যেহেতু আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী জানান, বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়ির সামনে রাস্তা থেকে ফারিহাকে অপহরণের অভিযোগ করে পরিবার। এরপর পুলিশ ও র‌্যাব-১৫ কাজ শুরু করে। মাদ্রাসার পেছনের নালা থেকে ফারিহার মরদেহ উদ্ধারের পর প্রকৃত রহস্য বেরিয়ে আসে।

টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জুবাইর সৈয়দ বলেন, আসামিকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার বর্ণনা দিয়েছেন। মরদেহের সুরতহাল করা হয়েছে। বিভিন্ন আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। ময়নাতদন্তে আরও বিস্তারিত বলা যাবে।

ফারিহার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। আটক এরফানকে টেকনাফ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।