কুবি উপাচার্যের 'দুর্নীতি' নিয়ে মন্তব্যে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া

কুবি উপাচার্যের 'দুর্নীতি' নিয়ে মন্তব্যে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া

কুবি উপাচার্যের 'দুর্নীতি' নিয়ে মন্তব্যে বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া

সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য উপাচার্য ড এ. এফ. এম আবদুল মঈন একটি অনুষ্ঠানে দুর্নীতির পক্ষে মন্তব্য করেন। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, টিআইবির পরিচালকসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে উপাচার্য বলেন, 'অনেকেই বলেন দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলব উল্টো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মা পাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মা পাড়ের গরীব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গায় থেকে যদি বল, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাঁধা নয়।’

বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমুল ইসলাম বলেন, 'মানুষ তার নৈতিকতার জন্য শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে পরিচিত। কেউ যদি জোর জবরদস্তি করে উন্নয়ন করে চাহিদা পূরণ করে তা কেবল নিজের উন্নয়ন'ই হবে জাতির উন্নয়ন হতে পারে না। জাতির উন্নয়নের জন্য নৈতিক ভাবে উন্নয়ন করতে হবে দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নয়।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা জানান, 'দুর্নীতি কিন্তু বৈষম্য তৈরীর অন্যতম উৎস। বৈষম্য টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা ও পরিকল্পনার বিপরীতে অবস্থান করে। দুর্নীতির সাথে বৈষম্যের একটা সম্পর্ক রয়েছে। যেহেতু দুর্নীতি বৈষম্য বাড়ায় তাই দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। বাংলাদেশের সংবিধান ও উন্নয়নের দর্শন সততা, নৈতিক মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব দেয়। উন্নয়ন মানে শুধু আর্থিক উন্নয়ন না। সার্বিক উন্নয়নে সৎ, ন্যায্য ও সাম্যের উপর ভিত্তি করে উন্নয়নকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বৈষম্য তৈরী করে শুধু আর্থিক উন্নয়ন হবে যা আমাদের সার্বিক উন্নয়নের সাথে পরিপন্থী। দুর্নীতি মূলত অন্যজনকে বঞ্চিত করে, ক্ষতিগ্রস্ত করে। দুর্নীতি করে মানুষ যে অর্থ উপার্জন করে তা সাময়িক, দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সৎ থাকা ও সৎপথে প্রচেষ্টা করা। সফল মানুষদের দিকে দেখলে আমরা দেখতে পাই, সবাই সৎভাবে ও পরিশ্রমকে পুঁজি করে সফল হয়েছেন। কাজেই শিক্ষকদের উচিৎ সর্বদা নৈতিকতা, সততা ও ন্যায্যতার কথা বলা।’

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান জানান, 'তার এ বক্তব্য সংবিধান পরিপন্থি। বিশেষ করে সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক। একই সাথে সরকার প্রধানের জন্য অবমাননাকর, কারন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ধারাবাহিক ভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুন্য সহনশীলতার ঘোষনা দিয়েছেন। অন্যদিকে সরকারের দায়িত্বশীল অবস্থান থেকে ঘোষিত তথ্য অনুযায়ি দুর্নীতির ফলে বাংলাদেশের বার্ষিক জাতিয় আয়ের ২-৩ শতাংশ ক্ষতি হচ্ছে। উপাচার্য প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতি সহায়ক অবস্থান গ্রহন করেছেন, এবং দেশবাসীকে ও বিশেষ করে তরুন প্রজন্মকে দুর্নীতির মতো জঘন্য, অবৈধ ও অসাংবিধানিক অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। যা একজন উপাচার্যের জন্য আত্মঘাতিমূলক অনৈতিকতার উদাহরন এবং বাস্তবে একটি অপরাধ। কারন দুর্নীতি করা যেমন আইনের লংঘন, তেমনি কাউকে দুর্নীতি করতে প্রশ্রয় দেয়া বা প্ররোচিত করা একই ধরনের অপরাধ।