৭ মাসে ১০ বার পানিবন্দি চট্টগ্রাম

৭ মাসে ১০ বার পানিবন্দি চট্টগ্রাম

ছবিঃ সংগৃহীত।

নগরের অন্তত ১৫ লাখ মানুষ অসহনীয় কষ্টের শিকার। ক্ষতির মুখে ব্যবসায়ীরা।

ভারী বর্ষণ ও পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে গতকাল রোববার (৬ আগস্ট) টানা তৃতীয় দিনের মতো ডুবল দেশের বাণিজ্যিক রাজধানীখ্যাত চট্টগ্রাম নগর। তিন দিনের জলাবদ্ধতায় নগরের অন্তত ৪০ শতাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। রাস্তাঘাট, অলিগলি ও বসতঘর ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত পানিতে ডুবে থাকায় নগরের অন্তত ১৫ লাখ মানুষ অসহনীয় কষ্টের শিকার হন। ক্ষতির মুখে পড়েছেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা।

চলতি বছরের সাত মাসে ১০ বার পানিবন্দি চট্টগ্রাম নগর। আগের বছর ডোবে ১২ বার। ভুক্তভোগীদের মতে, গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারের জলাবদ্ধতার ব্যাপকতা ছিল সবচেয়ে বেশি।

এবার জলাবদ্ধতায় দেশের অন্যতম বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে তেমন ক্ষতি না হলেও অলিগলির দোকান, বিপণিকেন্দ্র ও কাঁচাবাজার পানিতে তলিয়ে যায়। দোকানপাটের মালামাল পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। তিন দিনে কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে ব্যবসায়ীদের ধারণা, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১৫০ কোটি টাকা।

২০২১ সালে এক গবেষণায় উঠে আসে, জলাবদ্ধতার কারণে শুধু খাতুনগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় এক বছরে ৪৬৩ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে এ যাত্রায় রক্ষা পেলেও যেভাবে বৃষ্টি ও জোয়ার হচ্ছে, তাতে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় আছেন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা।

ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জলাবদ্ধতা যাতে না হয়, সে জন্য অনেক ব্যয়বহুল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশনের একটি, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) দুটি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি প্রকল্পের আওতায় ১১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকার কাজ চলছে। এর মধ্যে গত ৬ বছরে ৫ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা খরচ হলেও খুব বেশি সুফল আসেনি। জোয়ার ঠেকাতে নগরের বিভিন্ন খালের মুখে ৪০টি জলকপাটের (স্লুইসগেট) মধ্যে মাত্র ৫টির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। বাকি ৩৫টির কাজ ছয় বছর ধরেই চলছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় (শনিবার বেলা তিনটা থেকে গতকাল বেলা তিনটা) চট্টগ্রামে ২৩১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বর্ষণের পাশাপাশি জোয়ারের উচ্চতাও ছিল বেশি। চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাবে গতকাল রবিবার (৬ আগস্ট) সদরঘাট এলাকায় ভোরের সময় কর্ণফুলী নদীতে জোয়ারের উচ্চতা স্বাভাবিকের চেয়ে দশমিক ৫০ মিটার বেশি ছিল। জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ১৬ মিটার। বিকেলে জোয়ারের উচ্চতা ছিল ৫ দশমিক ১১ মিটার।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, চলতি বছরের মধ্যে গতকাল সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। লঘুচাপের কারণে এই বৃষ্টি আরও কয়েক দিন চলবে।

ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতি

ভারী বর্ষণে শুক্রবার (৪ আগস্ট) ভোর থেকে নগরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা শুরু হয়। জলাবদ্ধতাপ্রবণ এলাকার একটি ছিল নগরের চকবাজারের কাঁচাবাজার এলাকা। শুক্রবার (৪ আগস্ট) থেকে এই এলাকার চক সুপার মার্কেট বন্ধ রয়েছে। গতকাল রবিবারও (৬ আগস্ট) খোলেনি।

চক সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির উপদেষ্টা বেলাল উদ্দিন বলেন, তাঁদের বিপণিবিতানের নিচতলায় পোশাক, প্রসাধন সামগ্রী, ক্রোকারিজ, মুঠোফোনের ৫৫টি দোকান রয়েছে। প্রথম দিন অন্তত ৩০টি দোকানের প্রায় ২০ লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। আবার পানির কারণে তিন দিন ধরে বিপণিবিতান বন্ধ।