আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসঃ সাংবিধানিক স্বীকৃতি চান শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসঃ সাংবিধানিক স্বীকৃতি চান শেরপুরের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ

ছবিঃ সংগৃহীত।

আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য ১৯৯৪ সালে ৯ আগস্টকে ‘আদিবাসী দিবস’ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। এরপর থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এ দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। তবে আমাদের দেশে এ দিবসটি নিয়ে নেই তেমন কোন আয়োজন। এমনকি নিজেদের মৌলিক অধিকারও সঠিকভাবে ভোগ করতে পারেন না ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ।

আর তাই আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি চান শেরপুর সীমান্তের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ। একই সঙ্গে আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন, চাকরিতে আদিবাসী কোটা নিশ্চিত করণসহ নানা দাবিতে সোচ্চার তারা। এছাড়া নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় স্থায়ী উদ্যোগ গ্রহণের দাবিও দীর্ঘদিনের। এদিকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের জন্য ঘর বরাদ্দ, জীবনমান উন্নয়ন, ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

বেসরকারি সংস্থা আইইডি’র আদিবাসী সক্ষমতা উন্নয়ন প্রকল্পের তথ্যমতে, শেরপুরের শ্রীবরদী, ঝিনাইগাতী ও নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় সাতটি সম্প্রদায়ের প্রায় ৬০ হাজার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস। এদের মধ্যে গারো ১৬ হাজার ৫০০, হাজং ৪ হাজার ৭০০, হদি ১০ হাজার ৬০০, বর্মণ ১৭ হাজার, কোচ ৩ হাজার ৫০০, ডালু এক হাজার ১০০, বানাই ১১০জন বসবাস করছেন।

পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ ও কৃষি কাজেই নির্ভর এখানকার অর্থনীতি। তবে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের বাস করা এসব জায়গার বেশিরভাগই সরকারি খাস জমি ও বন বিভাগের জমি। সময়ের বিবর্তনে সরকারি দপ্তরের সঙ্গে ভূমি নিয়ে দ্বন্দ্ব নিরসনে পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবি দীর্ঘদিনের। আদি পুরুষের রীতি অনুসরণ করে এসব জমিতেই বসবাস করতে চান ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ।

তবে সাম্প্রতি বন বিভাগের উচ্ছেদ অভিযান ও বেদখল জমি মুক্ত করতে সচেতনতা কার্যক্রমের কারণে আতঙ্কে এখানকার মানুষ। স্থানীয়দের দাবী, বনবাসী মানুষের সঙ্গে বন বিভাগের এই দ্বন্দ্ব নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নিলে সমস্যা সমাধান সম্ভব। এজন্য সমতল ও পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য আলাদা ভূমি কমিশন গঠনের দাবি তাদের।

সৌহার্দ্য চিরন বলেন, বন যেখানে আদিবাসী সেখানে। আমরা প্রকৃত অর্থে আদিবাসী। তাই আমরা এই জমিতেই বাস করছি। বন বিভাগের সঙ্গে এই দ্বন্দ্ব কাটাতে দ্রুত আলাদা ভূমি কমিশন করতে হবে।

যুগল কিশোর কোচ বলেন, গতানুগতিক ভূমি কমিশন দিয়ে আমাদের আদিবাসীদের ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে আলাদা ভূমি কমিশন ও আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। দ্রুত এই দাবির বাস্তবায়ন হলে, আমাদের দুর্ভোগ কমবে।

এ ব্যাপারে শেরপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুকতাদিরুল আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পুরো জেলার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের পূর্ণাঙ্গ জরিপ ও স্মার্ট ডাটাবেইজ প্রণয়নের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে বাস্তবায়নাধীন বিশেষ এলাকার জন্য উন্নয়ন সহায়তা (পার্বত্য চট্টগ্রাম ব্যতীত) কর্মসূচির আওতায় শেরপুর জেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৯৫টি গৃহনির্মাণ, এক হাজার ৫২০ জনের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি ও ১৮০ জনের মধ্যে বাইসাইকেল বিতরণ করা হয়েছে।