অফিসের সামনে হঠাৎ বাঘ, গা ছম ছম ভয়ে ভিডিও ধারণ

অফিসের সামনে হঠাৎ বাঘ, গা ছম ছম ভয়ে ভিডিও ধারণ

সংগৃহিত ছবি।

সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার (বাঘ) দেখাটা ভাগ্যের ব্যাপার! তবে, এখন এই ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন ফরেস্ট অফিস, বিভিন্ন এলাকায় প্রায়ই দেখা মিলছে তার।  

কখনো পর্যটকরা আবার কখনো বনকর্মীরা বাঘের দেখা পেয়েছেন। কখনো একটি, কখনো জোড়ায় জোড়ায় আবার তিন-চারটিও। বন অফিসের সামনে বনরক্ষীদের খুব কাছাকাছি চলে আসছে বাঘ।

সুন্দরবনের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি, সজনেখালী টহল ফাঁড়ির পর এবার বাঘ এসে হাজির হয়েছে কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের অফিসের জানালার গ্রিলের কাছে।  

গত মঙ্গলবার সকালে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের অফিসের সামনে দেখা মেলে একটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের। বিশাল রয়েল বেঙ্গল টাইগারটি বনরক্ষীদের ব্যারাকের খুব কাছে চলে আসে। তখন মোবাইলে বাঘটির ভিডিও ধারণ করেন এক বনরক্ষী।

বনরক্ষীর ভিডিওতে দেখা যায়, ব্যারাকের সামনেই ঘাড় বাঁকা করে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক বাঘ। বাঘটি লোকজনের টের পেয়ে কিছুক্ষণ পর হেলেদুলে বনের দিকে চলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে ভিডিও ধারণকারী কচিখালী অভয়ারণ্য অফিসের বনরক্ষী মো. মোস্তাক আহমেদ বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে হঠাৎ বাইরে তাকাতেই চোখ ভড়কে যায়। ব্যারাকের সামনে বিশাল এক বাঘ হাজির।

তখন কৌতূহলভরে দেখছিলাম আমিসহ আমার সহকর্মীরা। বাঘটি আমাদের থেকে মাত্র তিন থেকে চার ফুট দূরে ছিল। বাঘ দেখে গা ছম ছম করছিল সবার। এত কাছে থেকে বাঘ দেখতে পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার! বিশালকায় বাঘটি যখন সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তখন ভয়ে আমাদের সবার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়। ভিডিও করতে গিয়ে হাত কাঁপছিল আমার।

দেড় থেকে দুই মিনিট পর আমাদের চোখে চোখ পড়তেই একটু দ্রুত পায়ে হেলেদুলে বনের দিকে চলে যায় বাঘটি। পরে দূরে একটি মাটির ডিবির ওপর বেশ কিছুক্ষণ শুয়ে ছিল সেই বাঘ।

২০১৮ সালের সর্বশেষ জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখা ছিল মাত্র ১১৪টি। ফলে সচরাচর বাঘের দেখা পাওয়াটা দুরূহ ছিল।

তবে ২০২২ সালের শেষ দিক থেকে প্রায়ই বাঘের দেখা পাওয়ার খবর শোনা যাচ্ছে। তাতে বন বিভাগের ধারণা, সুন্দরবনে আগের তুলনায় বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা যায়, বনবিভাগের কঠোর নজরদারিতে চোরা শিকারিদের দৌরাত্ম্য অনেকটা কমেছে। তাই স্বাভাবিক মৃত্যু ছাড়া বাঘ শিকার হচ্ছে না বললেই চলে।

সুন্দরবনের কচিখালী অভয়ারণ্য কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সবুর হোসেন আজ বৃহস্পতিবার বিকালে বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে বাঘটি রাতে আমাদের অফিসের নিচেই ঘুমিয়ে ছিল। সকালে অফিসের সামনে চলে আসে। প্রায় মাসখানেক ধরে অফিসের আশপাশে বাঘের আনাগোনা টের পাচ্ছি। আবার যে কোনো সময় চলে আসতে পারে। তাই আমরা সতর্কতার সঙ্গে চলাচল করছি। ’ 

পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সগকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মো. মাহাবুব হাসান বলেন, ‘কচিখালী ফরেস্ট অফিসের বনরক্ষীরা বাঘ দেখতে পেয়েছেন শুনেছি। এক বনরক্ষীর মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও দেখেছি। ওই অফিসের সকল বনরক্ষীকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ’ 

এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের চান্দেশ্বর টহল ফাঁড়ি অফিসের পুকুর পাড়ে দেখা মেলে জোড়া বাঘের। একদিন-একরাত (প্রায় ২২ ঘণ্টা) সেখানে অবস্থান করে বাঘ দুটি আবার বনে ফিরে যায়। এর আগে গত বছরের ৩১ অক্টোবর পশ্চিম বনবিভাগের সজনেখালী রেঞ্জ অফিসের চোরাগাজীখালীর বনে চারটি বাঘ দেখতে পান পর্যটকরা। একই বছরের ১২ মার্চ শরণখোলা রেঞ্জের ছিটা কটকা এলাকায় পর্যটকরা চারটি বাঘের দেখা পান এবং ওই বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি কটকা এলাকায় তিনটি বাঘ দেখতে পান বনরক্ষীরা।