১৮ বছরেও বিচার শেষ হয়নি

১৮ বছরেও বিচার শেষ হয়নি

সংগৃহীত

দেশজুড়ে জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সিরিজ বোমা হামলার ১৮ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। আলোচিত এ ঘটনায় করা ৪৩ মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। গ্রেপ্তার হয়নি জেএমবির এজাহারভুক্ত ১৩২ আসামি।

২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলার (মুন্সীগঞ্জ বাদে) ৪৩৪  স্থানে একযোগে বোমা হামলা চালায় জেএমবি।

সিরিজ এই বোমা হামলার ঘটনায় সারা দেশের বিভিন্ন থানায় ১৫৯টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় ৬৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তদন্ত শেষে এসব মামলায় ৭৩৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়। হামলার ১৮ বছরের মধ্যে ১১৬টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

৪৩টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে ঢাকায় বিচারাধীন তিনটি মামলা। ৩২২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন আদালত। গ্রেপ্তার আসামির মধ্যে ৩৫৮ জনকে অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়।

১৫ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেওয়া হয়েছে।

সিরিজ বোমা হামলা মামলার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেশির ভাগ মামলা নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। সাক্ষীদের না পাওয়ায় কিছু মামলার বিচারকাজ এখনো শেষ হয়নি। কেন শেষ হচ্ছে না, কোথায় আটকে আছে, খোঁজ নিয়ে দ্রুত এসব মামলা নিষ্পত্তি করা হবে।’

মামলার বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকার আদালতে ১৮টি মামলা ছিল।

বর্তমানে তিনটি মামলা বিচারাধীন। সেগুলোও সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে রয়েছে। চাঞ্চল্যকর এসব মামলা চাইলেই তো শেষ করে দেওয়া যায় না।

এখনো সক্রিয় জেএমবিসহ জঙ্গিরা

সিরিজ বোমা হামলার ১৮ বছর পরও দেশে সক্রিয় রয়েছে জঙ্গিরা। এ ঘটনায় করা মামলায় জেএমবি সদস্য তুহিন রেজাকে সর্বশেষ গত ২৩ জুন রাজধানীর তেজগাঁও এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৩।

জেএমবির বাইরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হচ্ছে অন্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাও। গত বছরের শেষ দিকে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া নামের একটি নতুন জঙ্গি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের পর গত ৯ আগস্ট সংগঠনটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরই মধ্যে গত ১৩ আগস্ট মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পাহাড়ে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের আরেকটি নতুন জঙ্গি সংগঠনের সন্ধান মিলেছে। ইমাম মাহমুদের কাফেলার প্রধান নেতাসহ ৪০ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জঙ্গিরা অনলাইনে তাদের প্রচারণা ও দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি জঙ্গি হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা হামলার কৌশল রপ্ত করছে।

যেভাবে জেএমবির কার্যক্রম শুরু 

২০০০ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ীতে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে জেএমবির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। এরপর ময়মনসিংহে সিনেমা হলে বোমা বিস্ফোরণ, রাজশাহীতে প্রকাশ্যে জঙ্গি কার্যক্রম, গাজীপুরে আদালত প্রাঙ্গণে বোমা হামলা, ঝালকাঠিতে বিচারকদের ওপর বোমা হামলা, নেত্রকোনায় উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলাসহ ২০০৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে আলোচনায় স্থান করে নেয় জেএমবির কার্যক্রম।

জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে যা বলছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘জঙ্গিগোষ্ঠীর কিছু ঘুমন্ত সেল এখনো রয়ে গেছে। তারা আত্মপ্রকাশ করার চেষ্টাও করছে। জঙ্গি একেবারে নির্মূল করা যায়নি, তবে নিয়ন্ত্রণে আছে।’

 

সূত্র: কালের কন্ঠ