পাগলা মসজিদে এবার পাওয়া গেছে প্রায় ৬ কোটি টাকা

পাগলা মসজিদে এবার পাওয়া গেছে প্রায় ৬ কোটি টাকা

সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের আটটি দানবাক্স থেকে এবার পাওয়া গেল পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ নয় হাজার ৩২৫ টাকা। এটিই মসজিদের ইতিহাসে দানবাক্স থেকে পাওয়া সর্বোচ্চ পরিমাণ টাকা।

তিন মাস ১৪ দিন পর শনিবার সকালে খোলা হয় এসব দানবাক্স। সারাদিন গণনা শেষে রাত সাড়ে ৯টায় জানানো হয় টাকার পরিমাণ। নগদ টাকা ছাড়াও দানবাক্সে বিদেশী মুদ্রা ও সোনা-রূপার অলঙ্কারও পাওয়া যায়। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে, এর আগে গত ৬ মে আরেকবার খোলা হয়েছিল মসজিদের দান বাক্স। তখন সেখানে পাওয়া যায় পাঁচ কোটি ৫৯ লাখ সাত হাজার ৬৮৯ টাকা।

সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কঠোর নিরাপত্তায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে খোলা হয় মসজিদের সব সিন্দুক। এরপর বস্তাবন্দি টাকা নিয়ে যাওয়া হয় মসজিদের দোতলায়। টাকাগুলো ভরতে ২৩টি বস্তার প্রয়োজন হয়।

মুসলমানসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে। এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয়-এমন বিশ্বাস থেকে তারা ছুটে এসে দান করে মোটা অঙ্কের টাকা।

দানবাক্স খোলার সময় মসজিদে নেয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। জেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত একটি বড়সড় দল টাকা-পয়সা গণনা ও তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব পালন করে। আর টাকা গণনার দায়িত্বে ছিলেন রূপালী ব্যাংকের ৬০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি, স্থানীয় মাদরাসার ১৩৮ জন ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষকসহ মোট ১৯৮ জন।

মসজিদ পরিচালনা, এর অর্থ-সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় ২৯ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও কিশোরগঞ্জ পৌর মেয়র।

জানা গেছে, মসজিদের দানের টাকা ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে। আর ওই টাকার লভ্যাংশ থেকে গরিব অসহায় লোকদের আর্থিক সহায়তা, ক্যানসারসহ জটিল রোগে আক্রান্তদের আর্থিকভাবে অনুদান দিয়ে মসজিদটি আর্তমানবতার সেবায় ভূমিকা রাখছে। তাছাড়া দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনুদান দেয়া হয় মসজিদের তহবিল থেকে।

পাগলা মসজিদের দানবাক্স খোলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) কাজী মহুয়া মমতাজ জানিয়েছেন, সবশেষ গত ৭ জানুয়ারি খোলা হয়েছিল সিন্দুক। তখন পাওয়া যায় চার কোটি ১৮ লাখ ১৬ হাজার ৭৪৪ টাকা। এর আগে গত বছরের ১ অক্টোবর খোলা হয় সিন্দুক। সেদিন পাওয়া যায় তিন কোটি ৮৯ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২ টাকা। ২ জুলাই বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার বাদে পাওয়া যায় তিন কোটি ৬০ লাখ ২৭ হাজার ৪১৫ টাকা। তারও আগে গত বছরের মার্চে পাওয়া যায় তিন কোটি ৭৮ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

মসজিদের সভাপতি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দানের টাকায় মসজিদের বড়সড় উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে। মসজিদ ঘিরে এখানে আন্তর্জাতিক মানের একটি দৃষ্টিনন্দন বহুতল কমপ্লেক্স নির্মিত হবে। যেখানে ৩০ হাজার মানুষ একসাথে নামাজ আদায় করতে পারবে। থাকবে সমৃদ্ধ লাইব্রেরিসহ আরো নানা আয়োজন। কমপ্লেক্সের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ কোটি টাকা। দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে প্রকল্পের কাজ।

কিশোরগঞ্জ শহরের পশ্চিমে হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে মাত্র ১০ শতাংশ ভূমির ওপর এই মসজিদটি গড়ে উঠেছিল। সময়ের সাথে পাগলা মসজিদের পরিধির মতো খ্যাতিও বৃদ্ধি পেয়েছে।