ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : শোক দিবসের আলোচনাসভা শেষে ছাত্রলীগকর্মীদের মারামারি, আহত ৫

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : শোক দিবসের আলোচনাসভা শেষে ছাত্রলীগকর্মীদের মারামারি, আহত ৫

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : শোক দিবসের আলোচনাসভা শেষে ছাত্রলীগকর্মীদের মারামারি, আহত ৫

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভা শেষে শাখা ছাত্রলীগের কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় মারামারির ঘটনা ঘটেছে। রোববার দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান মিলনায়তন সংলগ্ন আম বাগানে এ ঘটনা ঘটে। এতে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের মুফতাইন আহমেদ সাবিক ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। এছাড়াও আরো ৪ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। পরে তাকে ইবি চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। ব্যবস্থাপনা বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আকিব তাকে ছুরিকাঘাত করেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। তবে ছাত্রলীগ নেতাদের চাপে পরবর্তীতে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা ছুরিকাঘাত নিয়ে কোন ধরণের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ওই আলোচনাসভার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য ও ঝিনাইদহ আওয়ামীলীগ সভাপতি আব্দুল হাই এবং কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম সরোয়ার জাহান বাদশা। প্রধান আলোচক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যাক্তিরাসহ অন্য শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতক্ষ্যদর্শী সূত্রে জানা যায়, আলোচনা সভা চলাকালে কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে ঢোকার সময় আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ ও জিয়া হলের শিক্ষার্থী শামীম এবং হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষ ও শেখ রাসেল হলের শিক্ষার্থী আশিক কোরাইশির মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এ ঘটনার জেরে আলোচনা সভা শেষ হলেই মিলনায়তনের বাইরে এসে ফের উভয়ের মাঝে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে জিয়া হল ও শেখ রাসেল হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা মারামারিতে জড়ান। পরে সেখানে বঙ্গবন্ধু হল ও লালন শাহ হলের ছাত্রলীগের কর্মীরাও যোগ দিলে চতুর্মূখী সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়। শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দীকি আরাফাত, সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয়সহ ছাত্রলীগনেতারা উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বহিষ্কৃত ছাত্র আলাল ইবনে জয়কে একটি পক্ষের মূখ্য ভূমিকায় দেখা যায়।    

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের নেতারা উভয়পক্ষকে মুখ না খোলার জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। এতে ভুক্তভোগী ও অভিযুক্ত কেউই মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। আঘাত করা ছুরিটিও গায়েব করে দেওয়া হয়েছে। তবে প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন ছুরিকাঘাতের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। দেখেছেন বলে নিশ্চিত করেন। ছুরিকাঘাতে আহত মুফতাইন আহমেদ সাবিক বলেন, কিছু সংখ্যক ছেলেরা মারামারি করছিলো। এসময় আমি তাদেরকে ঠেকাতে গিয়ে আম গাছের ডাল লেগে হাত কেটে গেছে। আমি এর বেশি আর বলতে চাচ্ছি না।

এদিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় অভিযুক্ত আকিব বলেন, আলোচনা সভা শেষে বাহিরে দেখি হুলুস্থুল অবস্থা। পরে রাসেল হলের ছেলেরা আমাকেও মারধর করে আমার হাতে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ওইসময় আমার জামা কাপড়ও ছিড়ে ফেলা হয়। তবে ছুরিকাঘাতের বিষয়টি সঠিক নয়।

ঘটনার সূত্রপাতে জড়িত থাকা আশিক কোরাইশি বলেন, অডিটোরিয়ামে ঢোকা নিয়ে শামিমের সঙ্গে আমার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শামিম আমার চোখ তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। সভাশেষে শামিমসহ কয়েকজন আমাকে মারধর করার জন্য তেড়ে আসে। এসময় আকিব ছুির নিয়ে আমার উপর আক্রমন করতে এলে সাবিক আহত হয়। এ বিষয়ে শামিমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেন, এমন ঘটনা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। আমরা বিষয়টি নিয়ে বিব্রত। এঘটনায় কারো ইন্ধন আছে কী-না তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবো এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, আলোচনা সভা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এরপরে যে ঘটনাটি ঘটেছে তা খুবই দুঃখজনক। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আলোচনা সভা শেষে অতিথিদের নিয়ে ভিসির বাসভবনে গিয়ে মারামারির ঘটনা জানতে পারি। তাৎক্ষণিকভাবে সহকারী প্রক্টরদের ঘটনাস্থল এবং চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। তাদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করেছি। খুব দ্রুতই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।