সাজার বিরুদ্ধে সাহেদের আপিল শুনানি গ্রহণ

সাজার বিরুদ্ধে সাহেদের আপিল শুনানি গ্রহণ

সংগৃহিত ছবি।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ করিমের আপিলটি শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট।

সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আখতারুজ্জামানের একক বেঞ্চ সাহেদের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন।

আদালতে আজ সাহেদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর হোসেন। আর দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

 

আইনজীবী জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তিন বছর সাজার বিরুদ্ধে করা আপিল শুনানির জন্য আদালত গ্রহণ করেছে। আগামী সপ্তাহে এ মামলায় জামিন আবেদনের শুনানির দিন ঠিক হয়েছে

।দুদকের আইনজীবী বলেন, সময়মতো সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় আদালত তাকে (সাহেদ) তিন বছরের সাজা দেন। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন তিনি, জামিনও চেয়েছেন। হাইকোর্ট তাকে জামিন দেননি, তবে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন।

 

এর আগে রায় ঘোষণা শেষে সাহেদকে সাজা পরোয়ানাসহ কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তিনি আপিল করেন।

আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান জানান, আপিলের পর বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ আবেদনটি ৩১ আগস্ট কার্যতালিকা (কজলিস্ট) থেকে বাদ দেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ এই মামলার শুনানি হলো।

 

এর আগে সাহেদের পক্ষে তার আইনজীবীরা হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সাজার বিরুদ্ধে আপিল করেন বলে ৩ সেপ্টেম্বর গণমাধ্যমকে জানান দুদকের আইনজীবী।

 

২১ আগস্ট সাহেদকে তিন বছরের সাজার রায় দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৭ এর বিচারক প্রদীপ কুমার। রায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। ৬০ কর্মদিবসের মধ্যে জরিমানার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে বলা হয়।

 

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর নির্ধারিত ২১ কার্যদিবসের মধ্যে সম্পদের হিসাব জমা দিতে সাহেদকে নোটিশ দেয় দুদক। এসময়ে তিনি সম্পদের হিসাব জমা না দেওয়ায় আরও ১৫ কার্যদিবস সময় দেওয়া হয়েছিল। তবে বর্ধিত সময়ের মধ্যেও সম্পদ বিবরণী জমা না দেওয়ায় অনুসন্ধানে নামে দুদক। অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া যায়।

 

এ অভিযোগে ২০২১ সালের ১ মার্চ সাহেদের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত ঢাকা জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা করা হয়। পরে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল অভিযোগ গঠন করে সাহেদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরুর আদেশ দেন আদালত। এ মামলার মোট ১০ জন সাক্ষী বিভিন্ন সময়ে সাক্ষ্য দেন।

 

২০২০ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ওরফে মোহাম্মদ সাহেদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ। ১৮৭৮ সালের অস্ত্র আইনের ১৯ (এ) ধারায় করা মামলায় সাহেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এছাড়া অস্ত্র আইনের ১৯ (এফ) ধারায় তার সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। উভয় সাজা একসঙ্গে চলবে বলে আদালত রায়ে উল্লেখ করেন।

 

২০২০ সালের ৬ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ভুয়া করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট, করোনা চিকিৎসার নামে রোগীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়সহ নানা অনিয়ম উঠে আসে। এ ঘটনার পর পালিয়ে যান সাহেদ। ১৫ জুলাই সাহেদকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরে তাকে হেলিকপ্টারে সাতক্ষীরা থেকে ঢাকায় আনা হয়।

 

করোনা পরীক্ষার নামে ভুয়া রিপোর্টসহ বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৬ জুলাই সাহেদকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। এরপর ১৯ জুলাই তাকে নিয়ে উত্তরার বাসার সামনে অভিযান চালায় ডিবি পুলিশ। সেখানে সাহেদের নিজস্ব সাদা প্রাইভেটকার থেকে পাঁচ বোতল বিদেশি মদ, ১০ বোতল ফেনসিডিল, একটি পিস্তল এবং একটি গুলি উদ্ধার করা হয়।

 

এ ঘটনায় উত্তরা পশ্চিম থানায় অস্ত্র ও মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে দুটি মামলা হয়। এরপর ঢাকাসহ সারাদেশে তার বিরুদ্ধে ৩১টি মামলা হয়। এরমধ্যে ঢাকায় ২৫টি, সিলেট, চট্টগ্রাম ও সাতক্ষীরায় দুটি করে মামলা হয়। অধিকাংশ মামলায় প্রতারণার অভিযোগে করা হয়। এরমধ্যে সিলেটের দুটি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে।