ভবিষ্যতের সুপারস্টার জিয়াউল রোশান

ভবিষ্যতের সুপারস্টার জিয়াউল রোশান

ফাইল ছবি।

ঢালিউডে অনেক অভিনেতাই আছেন যাদের অভিনয়ে পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরে ধীরে ধীরে নিজের ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ করেছেন। এ তালিকায় বর্তমানের সুপারস্টার শাকিব খানের কথাও ধরা যায়। তবে অভিনয় না জানা এমন অভিনেতা খুব একটা খুঁজে পাওয়া যাবে না যিনি শুরু থেকেই তার অভিনয় দিয়ে দর্শকের নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছেন। সেরকম একজন চৌকস অভিনেতা জিয়াউল রোশান।

যিনি জন্ম নিয়েছিলেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্মভূমি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। বাবা স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত আছেন। কখনো তাকে দেখা গেছে বাবার নির্বাচনী প্রচারণায় শামিল হতে। প্রচণ্ড বন্ধুবৎসল রোশান। এখনো গ্রামে গেলে ছেলেবেলার বন্ধুদের নিয়ে চুটিয়ে আড্ডা দেন। সিনেমার নায়ক হয়ে গেছেন বলে বাল্যবন্ধুদের ভুলে যাননি।

এরকমই একজন মনখোলা আড্ডারু জিয়াউল রোশান অভিনয়ে কোনোরকম পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ঢাকাই চলচ্চিত্রে পা রাখেন। ডাকনাম রিক্ত। রিক্ত মানে শূন্য। নামে রিক্ত হলে কি, ঢাকাই চলচ্চিত্র তাকে শূন্যহাতে বা রিক্তহস্তে ফিরিয়ে দেয়নি। শুধুমাত্র মনের জোরেই ঢাকাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখা রোশানের সম্বল বলতে যা ছিল সেটা হচ্ছে সহজাত প্রতিভা। ২০১৬ সালে জাজ মাল্টি মিডিয়ার ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় তৈরি ‘রক্ত’ চলচ্চিত্রে তার অভিষেক। প্রথম এ ছবিটিতে রোশানের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন পরীমনি। রক্ত মানে প্রচুর প্রাণশক্তি। ‘রক্ত’ সিনেমার এই প্রাণশক্তিই হয়ে উঠল রোশান অভিনীত পরবর্তী একের পর এক সব সিনেমায় এগিয়ে যাওয়ার গল্প। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রোশানকে। স্বল্পতম ক্যারিয়ারেই পেরিয়ে গেছেন প্রায় ৫০টি সিনেমায় অভিনয় করে।

জিয়াউল রোশান সম্পর্কে অনেক উচ্চ প্রশংসা করে দেশের খ্যাতিমান পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান বলেন, ‘ছেলেটা (রোশান) যদি আরও চার/পাঁচ বছর আগে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রাখতে পারত তাহলে আজকে সেই সুপারস্টার থাকত। শাকিব খান নয়।’

শুধু তাই নয়, অনেকে এরই মধ্যে বলছেন, ‘রোশান ঢাকাই চলচ্চিত্রের একটা দুঃসময়ে এসে পড়েছেন। ঢাকাই চলচ্চিত্রের সেই রমরমা অবস্থাটি থাকলে আজকে রোশানই হতেন নাম্বার ওয়ান সুপারস্টার।’

অভিনেতা হিসেবে রোশানের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বলিউড বা দক্ষিণের নায়করা যেমন নিয়মিত জিমে গিয়ে নিজেদের একটা শক্তপোক্ত পেশিসমৃদ্ধ অভিনেতা হিসেবে গড়েপিটে নেন, রোশানের মধ্যেও সেই গুণটি রয়েছে। রোশানও নিয়মিত জিম অনুশীলন করে নিজেকে সেই অ্যাকশন সিনেমা উপযোগী নায়কে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু তাহলে কী, এখন ঢাকাই সিনেমার সেই সোনালি যুগের বাজারটি নেই। কবেই সেটা হারিয়ে এখন ধুকছে। যেখানে ‘নাই মামা’র চেয়ে কানা মামা’ই ভালো এমন একজন নায়ক শাকিব খান সুপারস্টার হয়ে গেছেন। ইন্ডাস্ট্রিকে দীর্ঘদিন একচেটিয়া নিজের দখলে এমন ভাবেই রেখেছেন যে, সেখানে বর্তমান সিনেমার ছোট্ট বাজারে অন্য কেউ ভাগ বসাবে সেই সুযোগও কম। সেই জায়গাই তো নেই, ভাগ বসাবে কোথায়? জিয়াউল রোশানের অবস্থাটি যেন এখন সেরকমই।

বর্তমান ঢাকাই ইন্ডাস্ট্রিতে সিনেমার বাজার বলতে এক-দুই ঈদ কেন্দ্রিকই হয়ে গেছে। এ সময়েই শতাধিক সিনেমা হল খোলা হয়। নয়তো সারা বছরই ৫০-৬০টি সিনেমা হল খোলা থাকে। আবার দুই ঈদের বাইরে অন্য সময়ে সিনেমার মুক্তি দেওয়া হলে দেখা যায় সেই ৪০-৫০টি খোলা প্রেক্ষাগৃহের ২০-২৫টির বেশি প্রেক্ষাগৃহ নতুন সিনেমা প্রচার করতে চাইছে না। তারা পুরনো সিনেমা দিয়ে ছবি প্রদর্শনীর কাজ চালিয়ে যায়। এমন অবস্থায় কি শত ভালো অভিনেতা হলেও কিংবা শত ভালো সিনেমা হলেও কারো পক্ষে সুপারস্টার হওয়া সম্ভব?

জিয়াউল রোশান অভিনীত একটি বিগ বাজেটের সিনেমা ‘রিভেঞ্জ’। দুই-তিন বছর ধরেই ঈদে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেও মুক্তি দিতে পারেনি। এবারও চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু শাকিব খানের এক ‘প্রিয়তমা’ই শতাধিক প্রেক্ষাগৃহ দখল করে বসলে তখন তারা ‘রিভেঞ্জ’ সিনেমাটি মুক্তি দেওয়া থেকে পিছিয়ে আসে। অনেকেই বলছেন, ‘রিভেঞ্জ’ সিনেমাটি মুক্তি দিতে পারলে রোশান সম্পর্কে মানুষের ধারণাই বদলে যেত যে, তিনি কত বড় মাপের সুপারস্টার।

হাতে থাকা কাজগুলো সম্পর্কে বলতে গিয়ে জিয়াউল রোশান নিজেও এই সিনেমাটি সম্পর্কে যায়যায়দিনকে বলেছেন, ‘আমার বিশ্বাস, ‘রিভেঞ্জ’ ছবিটি আমাকে নিয়ে সবার হিসাব-নিকাশই পাল্টে যাবে। এই সিনেমাটিতে আমি কী যে করেছি এখন সেটা এক কথায় বলে বোঝানো যাবে না। ছবিটিতে আমার কাজের জন্য সবাই মনে রাখবে। এটা একেবারেই ভিন্ন ধারার সিনেমা। ছবিটি ফুটিয়ে তুলতে আমরা প্রত্যেকে যার যার জায়গায় ভালো পারফরম্যান্স দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ছবিটিতে সবার মধ্যেই ভালো একটা কম্বিনেশন ঘটেছে। সবাই নিজের সর্বোচ্চটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

অন্যদিকে রোশানের আরও বেশ কিছু সিনেমা ছাড়পত্র পেয়ে মুক্তির প্রহর গুনছে। মুক্তিপ্রতীক্ষিত ছবিগুলো সম্পর্কে বলেন, ‘আমার সব ছবিই বড় বাজেটের। সবগুলোই একঝাঁক তারকার কম্বিনেশনে বড় ক্যানভাসে নির্মিত। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ও পরিচালক যেভাবে পরিকল্পনা করে ছবিগুলো সাজিয়েছেন, তাতে কোনো সংশয় নেই আমার জন্য বড় কিছু অপেক্ষা করছে।’ এই বলে জানালেন নির্মাণাধীন আরও কিছু সিনেমা ‘জামদানি’, ‘এবার তোরা মানুষ হ’, ‘বিট্রে’, ‘রিভেঞ্জ’, ‘মায়া : দ্য লাভ’, প্রেম পুরাণ’, ‘তুমি যেখানে আমি সেখানে’, ‘এক্সকিউজ মি’, ‘মিরজাফর : চ্যাপ্টার টু’, ‘লন্ডন লাভ’, ‘নাকফুল’, ‘করপোরেট’, ‘গুলশানের চামেলি’, ‘ফাইটার’, ‘উন্মাদ’, ‘অপলাপ’ প্রভৃতির কথা।