কেমন আছেন কনকচাঁপা

কেমন আছেন কনকচাঁপা

ফাইল ছবি।

এ দেশের যারা কালজয়ী প্লে-ব্যাক শিল্পী হিসেবে জনপ্রিয় হয়েছেন তাদের মধ্যে কনকচাঁপা শীর্ষস্থানীয়দের অন্যতম। এখনো যেন কান পাতলেই শোনা যায় এই সেদিনও যখন অডিও বাজার রমরমা ছিল তখন কনকচাঁপার কালজয়ী গান কী রকম জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল! যার গান এখনো কোটি শ্রোতার মুখে মুখে মুখরিত হয়ে আছে। এখনো দেশে ও বিদেশে থাকা বাঙালি শ্রোতার কাছে স্টেজ শো’র সবচেয়ে প্রিয় মুখ কনকচাঁপা।

এই প্রথিতযশা কণ্ঠশিল্পীর আজ ৫৩তম জন্মদিন। রাত ১২টার পর থেকেই ভক্ত-অনুরাগী ও কাছের মানুষদের কাছ থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছায় ভাসছেন কনকচাঁপা। গানের জগতে কনকচাঁপা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করলেও তার পারিবারিক নাম রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। ১১ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৯ সালে ঢাকার শান্তিবাগে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার দাদার বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে। তার বাবা আজিজুল হক মোর্শেদ। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তৃতীয় কনকচাঁপা। চলচ্চিত্র, আধুনিক গান, নজরুল সঙ্গীত, লোকগীতিসহ প্রায় সব ধরনের গানে কনকচাঁপা সমান পারদর্শী। প্রায় ৪০ বছর ধরে সঙ্গীতাঙ্গনের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন কনকচাঁপা। নারী শ্রেষ্ঠ প্লে-ব্যাক কণ্ঠশিল্পী হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিন ও রুনা লায়লার পরে তিনিই একাধিক তিনবার জাতীয় চলচ্চিত পুরস্কার লাভ করেন। এ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে তিন হাজারেরও বেশি গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কনকচাঁপা। প্রকাশিত হয়েছে ৪৬টি একক গানের অ্যালবাম এবং ১৫টি যৌথ অ্যালবাম। করেছেন ৪ হাজারের বেশি স্টেজ শো।

কনকচাঁপা বাংলাদেশের কিংবদন্তি প্লেব্যাক শিল্পী বশীর আহমেদের ছাত্রী ছিলেন। দীর্ঘদিন তার কাছে উচ্চাঙ্গ, নজরুল সঙ্গীতসহ অন্যান্য ভারতীয় সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন।

তবে জন্মদিনকে ঘিরে কনকচাঁপা সচরাচর বিশেষ কোনো আয়োজন করেন না। দিনটিতে তিনি অন্যান্য স্বাভাবিক দিনের মতোই অতিবাহিত করেন। তাই যথারীতি এবারের জন্মদিনেও তার জন্মদিনকে ঘিরে নেই বিশেষ আয়োজন। তবে দিনটিতে তিনি সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে তার বহু ভক্তের শুভেচ্ছা গ্রহণ করেন। চলচ্চিত্র ও সঙ্গীত জগহের বহু শিল্পী তার জন্মদিনকে উপলক্ষ করে যে স্ট্যাটাস দেন তাতেও তিনি সাড়া দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন মিডিয়া, পত্রপত্রিকাও তার জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ সংবাদ করে থাকে। আজকের দিনে পুরোটা সময়ই তিনি পরিবারের সঙ্গেই কাটাবেন বলে মন স্থির করেছেন।

কনকচাঁপা বলেন, ‘জন্মদিনে আমার কখনোই নিজ উদ্যোগে কোনো বিশেষ আয়োজন করা হয় না। তবে মাঝেমধ্যে আমার স্কুলের শিক্ষার্থী, ভক্তরা বিশেষ আয়োজন করে ফেললে তখন অনেকটা নিরুপায় হয়েই তাতে অংশ নিতে হয়। কিন্তু এবার তাও তেমন কিছু করাই হচ্ছে না। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা-কানাডায় কনসার্টে এর সফর শেষ করে ঢাকায় ফিরেছি। দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি তো আছেই। তা ছাড়া পারিবারিক ব্যস্ততা আছে। যে কারণে কোনো আয়োজনেই এবার সাড়া দিতে পারছি না। যেহেতু এই সুন্দর একটি দিনে পৃথিবীতে আমার জন্ম হয়েছে। আল্লাহর রহমতে সুন্দর একটি জীবন হয়েছে আমার। সুস্থ সুন্দরভাবে বেঁচে আছি, তাই মহান আল্লাহর কাছে সব সময়ই আমি শোকরিয়া করি। আগামী দিনগুলোতেও যেন এভাবে বেঁচে থাকতে পারি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে।’

১৯৭৮ সালে সর্বপ্রথম টিভিতে পারফর্ম করেন কনকচাঁপা। একই বছর শিশুশিল্পী হিসেবে ‘নতুন কুঁড়ি’র চ্যাম্পিয়ন হন তিনি। কনকচাঁপা টানা ৩ বছর ‘জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতা’র চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন।

গানের পাশাপাশি লেখালেখির সুখ্যাতিও রয়েছে কনকচাঁপার। ২০১০ সালের অমর একুশে বইমেলায় অটোবায়োগ্রাফি ‘স্থবির যাযাবর’, ২০১২ সালের অমর একুশে বইমেলায় ‘মুখোমুখি যোদ্ধা’ ও ২০১৬ সালের অমর একুশে বইমেলায় ‘মেঘের ডানায় চড়ে’ নামে তিনটি বই প্রকাশিত হয়েছে কনকচাঁপার। বইগুলোর নামকরণ থেকেও বোঝা যায় কনকচাঁপা শুধু একজন সুকণ্ঠী শিল্পীই নন, একজন সুলেখকও। কনকচাঁপার যেসব গান জনপ্রিয় হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘অনেক সাধনার পরে আমি পেলাম তোমার মন’, ‘তোমাকে চাই শুধু তোমাকে চাই, ভালো আছি ভালো থেক’, ‘যে প্রেম স্বর্গ থেকে এসে জীবনে অমর হয়ে রয়’, (খালিদ হাসান মিলুর সঙ্গে), ‘আমার নাকেরই ফুল বলে রে তুমি যে আমার’, ‘থাকত যদি প্রেমের আদালত’, ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’, ‘আকাশ ছুঁয়েছে মাটিকে’, ‘অনন্ত প্রেম তুমি দাও আমাকে’, ‘তুমি আমার এমনই একজন’, ‘বিরহে পোড়াইলা তুমি আমার এ অন্তর’, ‘বাজারে যাচাই করে দেখিনি তো দাম’, ‘আমায় এতো রাতে কেন ডাক দিলা’, ‘আমি মেলা থেকে তাল পাতার এক’, ‘আমার প্রেমের তাজমহল’ ছাড়াও আরও বহু কালজয়ী গান।

কনকচাঁপা তার গানের স্বীকৃতি হিসেবে চলচ্চিত্র ছাড়াও বাচসাস চলচ্চিত্র পুরস্কার, দর্শক ফোরাম পুরস্কার, প্রযোজক সমিতি পুরস্কারসহ আরও অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।

প্লে-ব্যাকে তার বহু জনপ্রিয় গান শুনে অনেকে তার মধ্যে সাবিনা ইয়াসমিন পরবর্তী শিল্পীদের মধ্যে সেরা শিল্পী হিসেবে গণ্য করে থাকেন। সাবিনা ইয়াসমিন দশ হাজারের বেশি প্লে-ব্যাক করেছেন। আর কনকচাঁপা করেছেন তিন হাজারের বেশি প্লে-ব্যাক। তবে তিনি যে সময়ে প্লে-ব্যাক শুরু করেন সেই সময়টা হলো ঢাকাই প্লে-ব্যাকের সোনালি সময়ের শেষ সময়।