ডেঙ্গু আতঙ্ক বগুড়ার শেরপুরে

ডেঙ্গু আতঙ্ক বগুড়ার শেরপুরে

ফাইল ছবি

মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলাবাসীর জনজীবন। বাসা-বাড়ি থেকে অফিস আদালত সব জায়গায় মশা বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। বিশেষ করে শেরপুর পৌরবাসীর অবস্থা একেবারেই নাজেহাল। শুধু সন্ধ্যায় বা রাতে নয়, দিনের বেলায়ও বাসা-বাড়িতে মশার উৎপাত চলছে সমান তালে। এর সঙ্গে এ উপজেলায় পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যুর ঘটনা না ঘটলেও শঙ্কায় রয়েছেন আক্রান্তদের স্বজনেরা।

পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ড্রেন এবং নালা-নর্দমায় মশার লার্ভা কিলবিল করছে। শহরের হাসপাতাল রোড, শান্তিনগর, টাউনকলোনী, উলিপুর, উলিপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রোড, থানা রোড, শিশু পার্ক রোড, আলীয়া মাদ্রসা সংলগ্ন ঘাটপাড় ব্রীজ এলাকায় রাখা পৌর বর্জ্য যেন মশার প্রজননস্থল হয়ে উঠেছে।

শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, এ উপজেলায় গত আগস্ট মাস থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (৫৩ দিনে) ২৪৩ জন রোগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে ডেঙ্গু পরীক্ষা করে, যার মধ্যে ৯৪ জনের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। তথ্যমতে, এসব রোগীর মধ্যে কয়েকজন রাজধানী ঢাকা থেকে আসলেও অধিকাংশ রোগী পৌর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।

শেরপুর পৌর এলাকার বাসিন্দারা জানান, ‘এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও নাগরিক সুবিধা তৃতীয় শ্রেণীর চেয়েও নিম্নমানের। দিনকে দিন পৌর এলকায় বাড়ছে মশার উপদ্রব। মশারি, কয়েল ও ইলেকট্রিক ব্যাট ব্যবহার করেও এ প্রাণঘাতী পতঙ্গের কামড় থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারছে না। 

পৌরবাসী শাহ জামাল কালাম বলেন, ‘গ্রাম অঞ্চলের চেয়ে শহরে মশার উৎপাত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে পৌর শহরে। আর এখানে মশা নিয়ন্ত্রণে পৌরসভা বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই। মাঝেমধ্যে নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও তাতে মশা মরে না। বরং ফগার মেশিনের ধোঁয়ার তাড়া খেয়ে মশা ঘরে ঢুকে যায়। আমরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য নিয়মিত কর দিচ্ছি। অথচ কোন সুবিধা পাচ্ছিনা। অবিলম্বে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি’।

টাউনকলোনী এলাকার গৃহিণী রাজিয়া সুলতানা বলেন, ‘মশার কারণে রাতে বাসায় সন্তানদের লেখাপড়া কড়াতে ঝামেলায় পড়ি। আর দিনের বেলার বিড়ম্বনা হলো রাস্তায় ফেলে রাখা পৌর  বর্জ্যরে উৎকট গন্ধ সয়ে সন্তানদের স্কুলে নেওয়া। কোনো কোনো ডাস্টবিনের এমন অবস্থা যে বৃষ্টির পানি আটকে সেটা যেন মশার আবাস্থল হয়ে আছে। পৌর কর্তৃপক্ষ মশা নিধনে কখন স্প্রে করে এমন দৃশ্য চোখে পড়েনা। তবে, ফেসবুকে একদিন একটা ছবি দেখেছি।’

বগুড়ার শেরপুর পৌরসভার মেয়র জানে আলম খোকা বলেন, ‘এ পর্যন্তু ডেঙ্গু মশা নিধনে ২ হাজার লিটার স্প্রে করা হয়েছে। এবং প্রত্যেক ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে মশা নিধন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।’

শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, ‘মশার কামড়ে মানুষ অ্যানোফিলিস, ম্যালেরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। এদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। এজন্য সকলকে সচেতন থাকা প্রয়োজন। আমরা এখন পর্যন্ত মোট ২৪৩ জন রোগীর ডেঙ্গু পরীক্ষা করেছি। এর মধ্যে ৯৪ জন রোগী ডেঙ্গু পজিটিভ ছিল, এই রোগীগুলোর সবাইকে আমরা আমাদের হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা দিয়েছি এবং সবাই সুস্থ হয়েছে’।