ব্যাংক ঋণের ২ হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

ব্যাংক ঋণের ২ হাজার কোটি টাকা সুদ মওকুফের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

ছবি:সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে দেশব্যাপী বন্ধের প্রেক্ষিতে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যাংক ঋণ গ্রহিতাদের দুই মাসের সুদ মওকুফ করতে সরকারের পক্ষ থেকে ২ হাজার কোটি টাকার নতুন আরেকটি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি এ পর্যন্ত ১৮টি প্যাকেজ দিয়েছি। আর এটা নিয়ে হলো ১৯ নং প্যাকেজ। যেহেতু নতুন প্যাকেজে গৃহীত ঋণের দুই মাসের সুদ স্থগিত করা হয়েছে, যে সুদের পরিমান ১৬ হাজার ৫শ’ কোটি ৪৯ কোটি। সেই স্থগিত সুদের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে।’

‘ফলে, আনুপাতিক হারে ব্যাংক ঋণ গ্রহিতাদের আর তা পরিশোধ করতে হবে না, ’বলেন তিনি।

এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী, অর্থসচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণরসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে তিনি নতুন এই প্যাকেজ দিয়েছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ঋণ নিয়েছেন তাদের জন্য আমরা বলেছি যে, এই দু’মাস যেহেতু সবকিছু বন্ধ তাই ঋণের সুদ টানার প্রয়োজন হবে না। সেখানে তাদেরকে আমরা কিছু সুযোগ সুবিধা দেব।’

তিনি বলেন, ‘যেহেতু নতুন প্যাকেজে গৃহীত ঋণের দুই মাসের সুদ স্থগিত করা হয় সেই সুদের পরিমান ১৬ হাজার ৫শ’ কোটি ৪৯ কোটি। সেই স্থগিত সুদের মধ্যে ২ হাজার কোটি টাকা সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করবে। যা আনুপাতিকহারে ঋণের গ্রহিতাদের আর পরিশোধ করতে হবে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারাদেশের কারিগরি ও মাদ্রাসা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি এবং সমমানের পরীক্ষার ফল ঘোষণাকালে একথা বলেন।

ব্যাংক ঋণ গ্রহিতাদের ঋণের দায়মুক্তিই তার সরকারের নতুন প্রণোদনার উদ্দেশ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুদের যে অবশিষ্ট অর্থ সেটা ১২টি মাসিক কিস্তিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে ঋণ গ্রহিতাগণ পরিশোধ করবে।’

তিনি ব্যাখ্যা করেন ‘যে সুদটা প্রতিমাসে দিতে হোত এই দুই মাস যেহেতু দিতে পারেনি, তাই, আমরা সেটার জন্য ১২ মাসের একটা সময় দিয়ে দিচ্ছি। যাতে এই ১২ মাসে ধীরে ধীরে তারা বাকীটা শোধ করতে পারবে, সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকারের এই ২ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি প্রদানের ফলে, প্রায় ১ কোটি ৩৮ লাখ ঋণ গ্রহিতা, যারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তারা সরাসরি উপকার পাবেন। তারা কোভিড-১৯ এর কারণে বন্ধ থাকা ব্যবসা-বাণিজ্য বা দোকান-পাট পুনরায় চালুর সুযোগ পাবেন।’

তিনি বলেন, ‘এই ১৯টি প্রণোদণা প্যাকেজের মোট পরিমান দাঁড়ালো এক লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ যা ১২ দশমিক ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমান এবং জিপিপির ৩ দশমিক ৭ শতাংশ।’

এর বাইরেও মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উসব ঈদুল ফিতরের পূর্বে তার সরকার প্রদত্ত মসজিদগুলোতে ইমাম- মোয়াজ্জিনদের জন্য এবং কওমী মাদ্রাসায় প্রদত্ত অনুদানের প্রসংগ টেনে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে ভিন্নভাবে এসব খাতে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।’

‘এসব প্রণোদণা এবং আর্থিক সহযোগিতা বাজেটের ওপর চাপ ফেললেও সরকার আগামী ১১ জুন বাজেট ঘোষণা করবে’, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যেই বাজেট তৈরীর কাজ শুরু করে দিয়েছি।’

গ্রামে হাস-মুরগী পালনকারী, মৎস চাষি, ছোট দোকানী, চায়ের দোকানদার, পণ্য বিক্রেতা-প্রত্যেকেই যেন তাদের জীবন-যাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে সেজন্যই তাঁর সরকারের এই উদ্যোগ উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘এই টাকা এমনি আসেনি। আমাদেরর অর্থনীতি সম্পূর্ণ স্থবির থাকায় এই টাকাগুলো সরকারকে ব্যাংক থেকে ধার করতে হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারই এখন টাকা ধার করে সকলের ব্যবসা-বাণিজ্য যাতে চালু, জীবন যাত্রাটা চলমান থাকে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।’

১ কোটি মানুষকে তালিকা প্রণয়ন করে ১০ টাকা কেজিতে চাল প্রদানের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সাহায্য গ্রহিতাদের তালিকা যাতে যথাযথভাবে হয় সেজন্য যাচাই- বাছাই করে করা হয়েছে।’

এক সময়ে সমাজে অপাংক্তেয় শ্রেনী হিসেবে অতীতের সুবিধাবঞ্চিত হিজড়া, বেদেসহ নিম্ন আয়ের সকল লোকজনকে এর আওতায় আনার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের জন্যই তার রাজনীতি’ কাজেই ‘মানুষের যাতে কষ্ট না হয়’ তা নিশ্চিত করতে সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সূত্র : বাসস