চলচ্চিত্রে ফিরতে চান না ডলি জহুর

চলচ্চিত্রে ফিরতে চান না ডলি জহুর

ছবিঃ সংগৃহীত।

ডলি জহুর- মঞ্চ থেকে শুরু করে টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র- সব জায়গায় সমান পদচারণা ছিল তার। তিনি এমন একজন অভিনেত্রী যার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। বিশেষ করে নব্বইয়ের দশকের সিনেমায় নায়ক-নায়িকাদের মায়ের চরিত্রে ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দু’বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। এমন অভিনেত্রীই জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ন হয় এই শঙ্কায় অভিনয় করছেন এখন বেছে বেছে। বিরতি দিয়ে দিয়ে।

অভিনয় নিয়ে এখনকার ব্যস্ততা কেমন?

আছে, কিছু কাজকর্ম করছি। খুব বেশি তো করি না, তবে কাজ চলছে। দীপ্ত টিভিতে প্রচারিত হওয়া আশীষ রায় পরিচালিত ‘জবা’ নামের একটি ধারাবাহিক নাটক নিয়েই এখন ব্যস্ততার মধ্যে আছি।

প্রথমবারের মতো টেলিফিল্ম পরিচালনা করলেন। এরকম নতুন কিছু করবেন কি? দেখা যাক। আমি তো আমার অভিজ্ঞতা থেকে এই টেলিফিল্মটি নির্মাণ করার চেষ্টা করেছি। যে রকম কম্ফোর্ট জোনে কাজ করেছি সে রকম হলে সামনেও এরকম কাজ করতে পারি।

সিনেমায় কি আর ফেরার ইচ্ছে হয় না? না, না- আমি মেইন স্টিমের সিনেমা আর করছি না। আর ওই খানটায় ফেরার ইচ্ছে নেই। তাছাড়া বয়সও তো কম হয়নি। এখন আর আগের মতো দৌড়াতে ইচ্ছে হয় না। অনেক কষ্ট করেছি। এখন আমার পক্ষে এত কষ্ট করাও সম্ভব নয়। তবে টিভিতে কাজ করছি কারণ, এই জায়গাটিই আমার নিজের জায়গা মনে করি। কত বছর পার করে এসেছি এই জায়গাটিতে- তাই না!

এমনিতেই ছবিতে ভালো অভিনয়শিল্পী কম- সেই শূন্যতা থেকেও তো করতে পারেন? একবার যখন এই জায়গাটি থেকে চলে গেছি আর ফিরতে চাই না। আর ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি কারণ ছবি ভালো হচ্ছিল না বলেই তো মুখ ফিরিয়ে নেওয়া! আগে তো ছবি হতো গল্পনির্ভর। সেসব সিনেমায় মা-বাবার চরিত্র ছিল গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। এখন ছবি ভালো হলেও তাতে তো নায়ক-নায়িকাই সব। আগে নায়ক-নায়িকা যেমন ছিল তেমন নায়ক-নায়িকার বাবা-মাও ছিল। এখন তো বাবা-মা’র চরিত্র নাই-ই। যতটুকুই বা থাকে, এমন গুরুত্বহীন চরিত্রে অভিনয় করলেই কি আর না করলেই কি। এগুলো করার তো কোনো মানেই হয় না।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও তো ভালো কন্টেন্ট আসছে? তা হলেও এগুলোর গল্প অন্য টাইপের হয়। এ ধরনের গল্পে আমাদের মতো চরিত্র গুরুত্বের সঙ্গে দেখানো হয় না। যে কারণে এটা আমার ভালো লাগে না। তবে এই ট্রেন্ডও এক সময় থাকবে না। তখন হয়তো আমাদের চরিত্রও ওটিটিতে দেখা যাবে। ততদিনে হয়তো আমরা আর থাকব না। তবে আমি চাই বর্তমানে যে ট্রেন্ডের কন্টেন্ট চলছে এটার পরিবর্তন হোক। আশা করি এর পরিবর্তন হবে।

মূলত বিটিভির প্রিয় মুখ ছিলেন- সেই জায়গাটি এখন কেমন? সেই বিটিভিতে তো আমি এখনও কাজ করি। এখনও বিটিভিতে ভালো নাটক হয় বলেই তো এই জায়গাটিতে আছি, কাজ করছি- তাই না! এইতো লাস্ট ১৫ আগস্টের বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবসে করা বিশেষ নাটকটিতে কাজ করেছি।

নতুনদের কাজ কেমন?

এখনও বুঝতে পারছি না। হয়তো ভবিষ্যতে ভালো হবে। ভালো হবে তো নিশ্চয়ই। যারা ওটিটিতে কাজ করছে তারা অনেকে তো গুণী, মেধাবী। টিভিতে হোক আর ওটিটিতেই হোক এরা যেমন ট্রেন্ড নিয়ে এসেছে- হয়তো ভবিষ্যতে এর চেয়ে আরও ভালো ট্রেন্ড নিয়ে আসবে। তবে আমি কখনোই আশাহত হই না।

হুমায়ূন আহমেদের নাটকে যে জনপ্রিয়তা পেয়েছেন- তেমন নির্মাতা আর হবে?

তিনি তো প্রতিটি কাজই একেবারে ডিফারেন্ট কাজ করেছেন। তার নাটকে যেসব চরিত্র থাকত প্রতিটি চরিত্রই গুরুত্বের সঙ্গে আসত। কোনো চরিত্রকেই গৌণভাবে দেখানো হতো না। উনার গল্পে প্রতিটি চরিত্রই স্টাবলিশ হয়েছে। ছোট একটা চরিত্রকেও তিনি অনেক গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরতে পেরেছেন। যারা অভিনয় করেছেন তারাও প্রত্যেকেই সেটিসফায়েড হয়েছেন। যেটা বাংলাদেশের আর কারও নাটকেই সেটা দেখা যাবে না।

তার শূন্যতা কীরকম অনুভব করেন? না, না- এ নিয়ে তো হাহাকারের কিছু নেই। শূন্যতা তো থাকবেই। একজন যায় একজন আসবে। এতো প্রকৃতিরই নিয়ম। এক সময় আমার মা-বাবা ছিল এখন নেই। ভাই গেছে, বোন গেছে, স্বামী গেছে। আবার আমরাও এক সময় থাকব না। তাই বলে এ নিয়ে তো হাহাকার করা ঠিক না। এখন হয়তো ভালো হচ্ছে না। তবে ভবিষ্যতে আবার যখন অন্য কেউ আসবে তখন হয়তো উনার চাইতেও ভালো করতে পারেন- ইনশাআল্লাহ।