নান্দাইলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ : আহত ২০০

নান্দাইলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ : আহত ২০০

ছবিঃ সংগৃহীত।

ময়মনসিংহের নান্দাইলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দেড় ঘণ্টা ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল। সোমবার (৯ অক্টোবর) উপজেলা পরিষদের সামনের সড়কেময়মনসিংহের নান্দাইলে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে দেড় ঘণ্টা ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়ক দিয়ে যান চলাচল বন্ধ ছিল।

ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় সোমবার আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে। তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খানের অনুসারী। কিন্তু উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ বিষয়টি জানত না। কর্মশালা শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগে দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় আহত হন অন্তত ৬০ জন।সংঘর্ষের কারণে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পণ্ড হয়ে যায় কর্মশালাও।এদিকে সংঘর্ষের মাঝখানে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ভয়ে দিগবিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। সংঘর্ষ থামানোর জন্য পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের ঝাঁজালো গন্ধে নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শতাধিক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের রাজনীতি সাবেক সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) আবদুস সালাম ও ময়মনসিংহ-৯ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান—এ দুই পক্ষে বিভক্ত। গত বছর ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মাধ্যমে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আব্দুস সালাম ও সাধারণ সম্পাদক হন মো. আমিনুল ইসলাম।

তখন থেকে দুই পক্ষের দূরত্ব আরও বেড়েছে।দলের নেতা-কর্মীরা বলেন, সোমবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন বিষয়ে ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ’ নামের এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করে উপজেলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। তাঁরা (নান্দাইল) আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খানের অনুসারী বলে পরিচিত। দুুপুর সাড়ে ১২টা থেকে নান্দাইল উপজেলা পরিষদে মিলনায়তনে দিনব্যাপী এ কর্মশালা শুরু হওয়ার কথা ছিল।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কবির বিন আনোয়ার প্রধান আলোচক হিসেবে কর্মশালায় উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়।তবে কর্মশালা আয়োজনের বিষয়টি নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পক্ষের নেতারা জানতেন না। কর্মশালা আরম্ভ হওয়ার আগে ওই পক্ষের নেতারা অনুষ্ঠানস্থলে যান। এ সময় প্রতিপক্ষের অনুসারীরা তাঁদের বাধা দেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে প্রথমে কথা-কাটাকাটি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে সংঘর্ষ শুরু হয়।

এ পরিস্থিতিতে আয়োজকেরা রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ প্রশিক্ষণ কর্মশালা বাতিল করেন।প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, অনুষ্ঠানস্থল থেকে সংঘর্ষ শুরু হলে তা ধীরে ধীরে মহাসড়কের পুরান বাসস্ট্যান্ড থেকে নতুন বাজার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের নেতারা একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। পরে উভয় পক্ষের লোকজন বল্লম ও রামদাজাতীয় দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরকে ধাওয়া দেয়।

অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। ভেতরে হামলা চালিয়ে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও ডিসপ্লে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘণ্টাখানেক চেষ্টার পর থানা-পুলিশ ও অতিরিক্ত পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষ চলার সময় নান্দাইল শহরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড থেকে নান্দাইল কলেজ মোড় পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এ সময় বাসযাত্রীরা বিপাকে পড়েন। অনেকেই আশঙ্কায় বাস থেকে নেমে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ করেন। অনেক যাত্রী বিভিন্ন দোকানের ভেতরে গিয়ে আশ্রয় নেন। আবার ময়মনসিংহগামী পাঁচটি যাত্রীবাহী বাস যাত্রী নামিয়ে কিশোরগঞ্জে ফিরে যায়।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কবির বিন আনোয়ার আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক। তাঁর নান্দাইলে আগমনের বিষয়টি আমরা জানি না। তাঁর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাইনি। তাঁর আগমনের বিষয়টি জানার জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে অনুষ্ঠানস্থলে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি।’ এ বিষয়ে সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। আয়োজকদের মধ্যে নান্দাইল উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. আবু বক্কর সিদ্দিক মুঠোফোনে বলেন, এটি ছিল ‘রোড টু স্মার্ট বাংলাদেশ, দ্য ড্রিল অনলাইন ক্যাম্পেইন ট্রেনিং’ নামের একটি অনুষ্ঠান। নান্দাইল উপজেলা যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এ আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করার আগে নাম নিবন্ধন করতে বলায় আওয়ামী লীগের সভাপতির পক্ষের নেতারা ও বিএনপির লোকজন মিলে তাঁদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। হামলাকারীরা প্রশিক্ষণের জন্য অনুষ্ঠানস্থলে স্থাপন করা প্রশিক্ষণসংক্রান্ত মূল্যবান যন্ত্রপাতি ভাঙচুর করেন।

সংঘর্ষ চলার সময় মাথায় ইটের টুকরা পড়ে অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়ে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। বিকাল ৪ ঘটিকা পর্যন্ত ৪৩ জনকে চিকিৎসা দেওয়া হয় জরুরি বিভাগে। তবে তখনো অনেক রোগী আসছিল। তবে এ সময় কোনো চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে গৌরীপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. সুমন মিয়া মোবাইলে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য পুলিশ চারটি কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। তাঁদের কোনো পুলিশ সদস্য আহত হননি। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আছে।

নান্দাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবদুল খালেক বলেন, সকাল ১০টা থেকে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রীদের ক্লাস ছিল। দুপুর দেড়টা থেকে এসএসসির পরীক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষার্থী ও সাধারণ ছাত্রী মিলিয়ে তিন শতাধিক ছাত্রী ওই সময় বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিল। তখন সড়কে সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে। বাতাসে গ্যাসের ঝাঁজালো গন্ধ বিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের চোখমুখ জ্বালাপোড়া করতে শুরু করে।

অষ্টম শ্রেণির আটজন ছাত্রী ছটফট করতে শুরু করলে তাদের দ্রুত নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। সেখানে তাদের অক্সিজেন দিয়ে স্বাভাবিক করা হয়। অভিভাবক ডেকে ছয়জনকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে। বাকি দুজনের চরম শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষকেরাও তাদের সঙ্গে গেছেন। এসব কারণে আজকের নির্বাচনী পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।