অলসতার প্রভাব পড়ে ঈমান ও আমলে

অলসতার প্রভাব পড়ে ঈমান ও আমলে

সংগৃহীত

অলসতা মানুষের একটা দুর্বলতা। এর কু-প্রভাবে নষ্ট হয় মানুষের ঈমান ও আমল। কুরআন-হাদিসে অলস মানুষদের নিন্দা জানানো হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে শক্তিশালী মুমিন দুর্বল মুমিন থেকে অধিক উত্তম ও প্রিয়। তুমি ওই জিনিসে যত্মবান হও, যাতে তোমার উপকার আছে। আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করো। আর উৎসাহ-উদ্দীপনাহীন হয়ো না’ (মুসলিম : ৪৮২২)। অতএব আমাদের প্রতিটি কাজে উদ্যমতা থাকা চাই।

কারও মধ্যে অলসতা ভর করলে, নিজেই নিজেকে অনুপ্রাণিত করা চাই। ভোর রাতে ঘুম থেকে ওঠার চেষ্টা করা এবং তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করা। বিলম্বে ঘুমানো এবং বিলম্বে ঘুম থেকে ওঠা অলসতার অন্যতম কারণ। এটা দূর করতে পারলে জীবনে উদ্যম ও গতি আসবে। হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ যখন রাতে ঘুমায় তখন শয়তান তার ঘাড়ের ওপর তিনটা গিরা লাগিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিরায় সে এই মন্ত্র পড়ে ফুঁ দেয় যে, ‘তোমার সামনে রয়েছে দীর্ঘ রাত; অতএব তুমি ঘুমাইতে থাকো।’ বান্দা যদি (শেষ) রাতে জেগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে তা হলে একটা গিরা খুলে যায়। তারপর যদি ওজু করে তা হলে দ্বিতীয় গিরাও খুলে যায়। তারপর যদি তাহাজ্জুদে দাঁড়িয়ে যায় তা হলে সব গিরাই খুলে যায়। ফলে সকালবেলা সে অত্যন্ত সতেজ ও ঝরঝরে মেজাজের অধিকারী এবং কর্মদ্যোম থাকে। তার অনেক বড় কল্যাণ অর্জিত হয়। আর যদি ঘুম থেকে না ওঠে ও তাহাজ্জুদ না পড়ে তা হলে সে অলস ও মন ভারাক্রান্ত থাকে। অনেক বড় কল্যাণ থেকে সে বঞ্চিত থাকে।’ (বুখারি : ১১৪২; আবু দাউদ : ১৩০৬; ইবনে মাজা : ১৩২৯)

আল্লাহ তায়ালা দিনের শুরুতে বরকত রেখেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি বরকতের সময় জাগ্রত থাকবে আল্লাহ তার অলসতা, উদাসীনতা ও আড়ষ্টতা সব দূর করবেন এবং পুরো দিনের সব কাজে বরকত দান করবেন। হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান! দিনের শুরুতে চার রাকাত নামাজ পড়তে অপারগ হয়ো না, আমি তোমার সারা দিনের কাজ সম্পন্ন করে  দেবো’ (মাজমাউজ জাওয়ায়েদ : ২/৪৯২)। দিনের শুরু ভাগের জন্য রাসুল (সা.) দোয়া করেছেন। হাদিসে এসেছে, নবীজি (সা.) এই দোয়া করেছেন, ‘হে আল্লাহ! আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু ভাগ বরকতময় করুন।’ (তিরমিজি : ১২১২)

অলসতা দূর করার জন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) দোয়া শিখিয়েছেন। নবীজি (সা.) বলতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি অক্ষমতা, অলসতা, কাপুরুষতা, কৃপণতা, বার্ধক্য ও কবরের আজাব থেকে। হে আল্লাহ! আপনি আমার মনে তাকওয়ার অনুভূতি দান করুন, আমার মনকে পবিত্র করুন। আপনিই তো আত্মার পবিত্রতা দানকারী। আপনিই তো হৃদয়ের মালিক, অভিভাবক ও বন্ধু। হে আল্লাহ! আপনার নিকট আশ্রয় চাই এমন ইলম থেকে, যে ইলম কোনো উপকার দেয় না; এমন হৃদয় থেকে, যে হৃদয় বিনম্র হয় না; এমন আত্মা থেকে, যে আত্মা পরিতৃপ্ত হয় না এবং এমন দোয়া থেকে, যে দোয়া কবুল হয় না’ (মুসলিম ২৭২২)। অন্যত্র আছে, তিনি দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।’ (বুখারি : ২৮৯৩)