মানবজাতির জন্য নবীজীবনের সৌরভ

মানবজাতির জন্য নবীজীবনের সৌরভ

প্রতিকী ছবি

পৃথিবীর যেকোনো ব্যক্তি ও মনীষীর জীবনচরিত থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনচরিত সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা তা এমন অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, যা পৃথিবীর অন্য কোনো ব্যক্তির জীবনচরিতে খুঁজে পাওয়া যায় না। নবীজি (সা.)-এর সিরাত বা জীবনচরিত জ্ঞানভিত্তিক, সুবিন্যস্ত, সুপ্রমাণিত, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে পরিপূর্ণ। তা এমন একটি জীবনচরিত, যেখানে মহানবী (সা.)-এর পুরো জীবনকালকে দৃশ্যমান করে তোলা হয়েছে।

আর তা করা হয়েছে ঘটনাপ্রবাহের বিবরণ, ঐতিহাসিক দলিল-প্রমাণ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে।
মহানবী মুহাম্মদ (সা.) এই নশ্বর পৃথিবীতে এমনভাবে জীবনযাপন করেছেন, যার মাধ্যমে ইসলামী ধর্ম জীবন লাভ করেছে, কোরআনের মর্ম স্পষ্ট হয়েছে এবং ইসলামী মূল্যবোধের ব্যাপারে মানুষের ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়েছে। তাঁর জীবনই ছিল কোরআনের নির্ভুল বাস্তবায়ন। এ জন্য আয়েশা (রা.)-কে নবীজি (সা.)-এর স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কোরআনই ছিল স্বভাব।

বস্তুত মহানবী (সা.)-এর জীবনে রয়েছে মুমিনের জন্য উত্তম আদর্শ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ২১)

নবীজি (সা.)-এর শিক্ষাই মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম শিক্ষা। কেননা স্বয়ং আল্লাহ তাঁকে উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করেছেন।

তিনি তাঁকে দান করেছেন কিতাব ও প্রজ্ঞা এবং তিনি যা জানতেন তা তাঁকে শিখিয়েছেন। তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহস্নাত এবং তিনি ছিলেন মানবজাতির জন্য অনুগ্রহস্বরূপ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ মুমিনদের প্রতি অবশ্যই অনুগ্রহ করেছেন যে তিনি তাদের নিজেদের মধ্য থেকে তাদের কাছে রাসুল প্রেরণ করেছেন, যে তাঁর আয়াতগুলো তাদের কাছে তিলাওয়াত করে, তাদেরকে পরিশোধন করে এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, যদিও তারা আগে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতেই ছিল।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬৪)

মানব ইতিহাসে এমন বিশ্বস্ত, বিন্যস্ত ও বিস্তৃত জীবন ইতিহাসের দ্বিতীয় কোনো দৃষ্টান্ত নেই। পৃথিবীর অন্য কোনো মানুষের জীবন এভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি, যেভাবে মহানবী (সা.)-এর জীবনচরিত সংরক্ষণ করা হয়েছে।

আর তাতে রয়েছে মানবজীবনের প্রতিটি স্তর ও পর্বের জন্য নববী নির্দেশনা। যেমন—মানুষের পানাহার, পোশাক ও সাজসজ্জা, ঘুম ও জাগরণ, সফর ও স্থিতি, হাসি ও কান্না, ইচ্ছা ও অনিচ্ছা, ইবাদত ও লেনদেন, পার্থিব ও অপার্থিব জীবন, যুদ্ধ ও সন্ধি, কাছের ও দূরের মানুষের সঙ্গে আচরণ, বন্ধু ও শত্রুর সঙ্গে ব্যবহার, একান্ত ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন সব কিছুতেই তাঁর জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ আছে। কেননা মহানবী (সা.)-এর জীবনের প্রতিটি দিকই পরিপূর্ণভাবে সুসংরক্ষিত।

হায়াতুর রব্বানিয়া থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর