স্ত্রীকে পানিতে ফেলে হত্যার পর জিডি করেন স্বামী

স্ত্রীকে পানিতে ফেলে হত্যার পর জিডি করেন স্বামী

ছবিঃ সংগৃহীত

বিয়ের পর থেকে স্ত্রী ফারজানার পুরনো সম্পর্কের জেরে সংসারে ঝগড়া লেগেই থাকতো স্বামী রনি মিয়ার। এক পর্যায়ে রনিকে আর সংসার না করার কথা জানান ফারজানা।

এমন সিদ্ধান্তে ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে ফারজানাকে হত্যা করে থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেন রনি মিয়া।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, ফারজানাকে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কৌশলে কেরানীগঞ্জের বছিলা ব্রিজসংলগ্ন নৌ পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় নিয়ে যান রনি। সেখানে ফারজানাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেন তিনি। নদীতে প্রচণ্ড স্রোত থাকায় ফারজানা পানিতে তলিয়ে যান। পরে রনি তার শাশুড়িকে নিয়ে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় একটি নিখোঁজ সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রনি মিয়া।

 

জিডিতে তিনি উল্লেখ করেন, সাবেক প্রেমিকের হাত ধরেই পালিয়ে গেছেন তার স্ত্রী ফারাজানা।

 

 

জিডি করার ৬ দিন পর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে পুলিশ খবর পায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের জাজিরা বোর্ডঘাট এলাকায় অর্ধগলিত অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক নারীর মরদেহ ভাসছে। পরে বুড়িগঙ্গা নদী থেকে নিখোঁজ ফারাজানার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহটি স্ত্রী ফারজানার বলে শনাক্ত করেন রনি মিয়া। এরপর পুলিশের তদন্তে উন্মোচিত হয়েছে রহস্য।

পুলিশ জানায়, ফারজানার মরদেহ পাওয়ার পর মামলার তদন্ত নাটকীয় মোড় নেয়। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ নিশ্চিত হয় নিখোঁজের আগে তার সর্বশেষ অবস্থান ছিল কেরানীগঞ্জের বছিলা ব্রিজ। আর মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল ১৫ কিলোমিটার দূরে। ঘটনার রাতে তার স্বামী রনির অবস্থানও ছিল বছিলা ব্রিজ সংলগ্ন নদীর পাড়ে।

 

রনিকে ব্যাপকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করার এক পর্যায়ে তার স্ত্রীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। এরপর রনিকে ঘটনাস্থলে নেয়া হয়। তখন রনি নিজেই স্বীকার করেন যে তার স্ত্রীর সঙ্গে নাদিম নামের একটি ছেলের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। এ সম্পর্ক তিনি মেনে নিতে পারেননি।

 

 

কেরানীগঞ্জ থানার ওসি মামুন আর রশিদ বলেন, ভুক্তভোগী নারী শিক্ষানবিশ থাকাকালে নাদিম নামে এক ছেলের সঙ্গে পরিচয় হয়। নাদিমের সঙ্গে যে তার পরকীয়া সম্পর্ক ছিল, সেটা ফারজানার মা স্বীকার করেছেন।

রনির স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মামুন আর রশিদ বলেন, মানসিকভাবে ফারজানাকে নির্যাতন করতেন তার স্বামী। তাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে কথা কাটাকাটি হতো। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে রনি বাসায় এসে হত্যার পরিকল্পনা করেন। রাতে খাওয়া শেষে রনি তার স্ত্রীকে বাইরে ঘুরতে নিয়ে যান। বসিলা ব্রিজের কাছে গিয়ে তারা কিছুক্ষণ কথা বলেন। এক পর্যায়ে তারা নদীর কাছে যান। কৌশলে স্রোতের মধ্যে ফারজানাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন রনি। সেখান থেকে আর উঠে আসতে পারেননি সাঁতার না জানা ফারজানা।

 

পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, নৌবাহিনীতে কাজ করার কারণে পানির স্রোত সম্পর্কে রনি মিয়ার ভালো ধারণা ছিল। ফারজানা সাঁতার জানতেন না। এ সুযোগ নিয়ে তিনি ফারজানাকে নদীতে ফেলে ডুবিয়ে হত্যা করেন।