এডিএম থাকাবস্থায় দোষী সাব্যস্ত হন উপসচিব সঞ্জয়

এডিএম থাকাবস্থায় দোষী সাব্যস্ত হন উপসচিব সঞ্জয়

ছবিঃ সংগৃহীত।

আদালতের মালখানায় পুলিশের জব্দ করা ফেনসিডিল গায়েবের ঘটনায়ও দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন উপসচিব ড. সঞ্জয় চক্রবর্তী। 

ওই সময় তিনি রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) ছিলেন। ২০১৪ সালে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের শৃঙ্খলা শাখা থেকে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে তিরস্কার করে গেজেট প্রকাশ করা হয়। সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার এক প্রতিবেদনে ফেনসিডিল গায়েবের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এরপরই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন এই কর্মকর্তা। পরে ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে বিভাগীয় তদন্ত করা হয়।

 

২০১৪ সালের ১৪ আগস্ট প্রকাশিত গেজেটে এ বিষয়ে বলা হয়, সঞ্জয় চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে কোর্ট মালখানায় রক্ষিত জব্দকৃত ফেনসিডিলের বোতল ধ্বংসকরণে অনিয়মসংক্রান্ত বিষয়ে বিভাগীয় মামলা চালু করে ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি কৈফিয়ত তলব করা হয়। বিষয়টি সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫ এর ৩(বি) ও ৩(ডি) বিধি অনুযায়ী যথাক্রমে ‘অসদাচরণ ও দুর্নীতি পরায়ণ’র অভিযোগ। অভিযুক্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দাখিলকৃত অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে যে, রাজশাহী জেলা মালখানার দায়িত্বে থাকা সিএসআই (তৎকালীন) পিযুষ কান্তি কর্মকারের সহায়তায় ফেনসিডিল বাইরে বিক্রি হয়। এ অবস্থায় সিটি পুলিশের (এসবি) বিশেষ শাখা জব্দ করে। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে রাজশাহী কালেক্টরেটের সহকারী কমিশনার (তৎকালীন) আতিক এসবি সাত্তার তার তৎকালীন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসাবে এডিএম সঞ্জয় চক্রবর্তীর (পরিচিতি নং ৬৭৯৭) নির্দেশে এসব মালামাল ধ্বংস না করে সংশ্লিষ্ট রেজিস্টারে ধ্বংস করার বিষয়ে মন্তব্য করে পেছনের তারিখে স্বাক্ষর করেন। জেলা পুলিশ সুপার (তৎকালীন) এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠান। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা এই অনিয়মে জড়িত ছিল কিনা তা নির্ণয়ে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার (তৎকালীন) আব্দুল মান্নান জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালককে তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তার দেওয়া প্রতিবেদনে সঞ্জয় চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। এরপর অভিযুক্ত সঞ্জয় চক্রবর্তী ২০১৪ সালের ৩ মার্চ কৈফিয়তের জবাব দাখিল করে ব্যক্তিগত শুনানির আবেদন করেন।

এ বিষয়ে আদেশের একস্থানে বলা হয়, ‘ওই বছরের ৪ এপ্রিল সঞ্জয় চক্রবর্তীর ব্যক্তিগত শুনানি গৃহীত হয়। উভয়পক্ষের বক্তব্য, অভিযুক্ত কর্মকর্তার জবাব, তদন্ত প্রতিবেদন ও নথির রেকর্ডপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ‘জব্দকৃত ফেনসিডিলের বোতল কম পাওয়া সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি পাঠানোর ১৫ দিন পর মতামতের জন্য নথি উপস্থাপন করেন। নবিন শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা মো. আতিক এসবি সাত্তারকে তার চাকরির ২ মাস সময়ের মধ্যে এডিএম (তৎকালীন) সঞ্জয় চক্রবর্তী এ ধরনের দায়িত্ব দেন। এমনকি তাকে ডেকে এনে মালখানার জব্দকৃত ফেনসিডিল ধ্বংসসংক্রান্ত প্রতিবেদনে পূর্বের তারিখে স্বাক্ষর করিয়েছেন।’ বলা হয়, নথি উপস্থাপনে বিলম্ব করাসহ জুনিয়র কর্মকর্তাকে তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়টি অসদাচরণের শামিল। তাই সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ১৯৮৫-এর ৩(বি) অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’র দায়ে সঞ্জয় চক্রবর্তীকে তিরস্কার করা হলো। ওই সময় জনপ্রশাসনের সিনিয়র সচিব ছিলেন ড. কামাল আব্দুল নাসের চৌধুরী।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ড. সঞ্জয় চক্রবর্তী যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আসলে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। জুনিয়র কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়াটা ঠিক হয়নি।