শিক্ষক বন্ধুদের সংবর্ধনা দিল ঠাকুরগাঁও এসএসসি ১৯৯৯ ব্যাচ

শিক্ষক বন্ধুদের সংবর্ধনা দিল ঠাকুরগাঁও এসএসসি ১৯৯৯ ব্যাচ

সংগৃহীত

 ‘শপথ নিয়েছি এগিয়ে যাওয়ার, জয় হবে মানবতার’ এই স্লোগান নিয়ে ২৫ বছরে পা রাখল ঠাকুরগাঁও জেলার এসএসসি-১৯৯৯ ব্যাচ। এ উপলক্ষ্যে শারদীয় শুভেচ্ছা ও পারিবারিক মিলনমেলার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ১৯৯৯ ব্যাচের ১২০ জন শিক্ষককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়, যারা দেশের বিভিন্ন জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন।

শনিবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স মিলনায়তনে ক্রেস্ট, উপহার ও ফুলেল শুভেচ্ছায় এই গুণী শিক্ষকদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে ১৯৯৯ ব্যাচের সকল প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। এতে সবার পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন। পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে তৈরি হয় আনন্দ আর আবেগঘন পরিবেশের। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় দিনের আয়োজন। দিনভর চলে আড্ডা, স্মৃতিচারণ ও সাংস্কৃতিক আয়োজন।

স্মৃতিচারণ পর্বে স্কুল নিয়ে নানা গল্পে আয়োজনকে আরও বর্ণিল করে তোলেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক আখতারুজ্জামান সাবু এবং সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।

এসএসসি ১৯৯৯ ব্যাচের সদস্যরা বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে এই আয়োজন করেছি। শিক্ষকরা আমাদের দেশের সম্পদ। তাদের ঘটা করে সংবর্ধনা দিতে পেরে আমরা গর্বিত।

এ সময় ১৯৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী প্রশান্ত সরকার বলেন, আমাদের এই ব্যাচের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের জন্য কাজ করা। আমরা যে যেখানেই থাকি না কেন আমরা যেন ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি এবং বিপদে পাশে দাঁড়াতে পারি এটাই চাওয়া। আমাদের সংগঠন ঠাকুরগাঁওয়ে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছে। যারা টাকার অভাবে পড়াশোনা করতে পারছে না তাদেরকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা করোনার সময় ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে সাহায্য করেছি এবং যাদের খাবার ছিল না তাদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছি।

১৯৯৯ ব্যাচের আরেক শিক্ষার্থী জিয়াউল হক বকুল বলেন, বিভিন্ন ছুটিতে আমরা একসঙ্গে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করি। ঠিক একইভাবে এই পূজার ছুটিতে সারা দেশে আমাদের ৯৯ ব্যাচের যে সদস্যরা রয়েছে তারা প্রাণের টানে ঠাকুরগাঁওয়ে ছুটে এসেছি এবং পারিবারিক মিলনমেলায় একত্রিত হয়েছি।

এ সময় ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক ও রংপুর অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক উপপরিচালক আখতারুজ্জামান সাবু বলেন, শিক্ষকতা একটি সম্মানের পেশা। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে আমরা শিক্ষকতা পেশায় আসতে চাচ্ছি না। আমি একবার ক্লাসে প্রশ্ন করেছিলাম, তোমরা কে কে শিক্ষক হতে চাও? দেখলাম কেউ হাত তুলেনি। তারপর একজন ছাত্র বলল, স্যার এই পেশায় তেমন টাকা নেই, তাই এই পেশায় কেউ আসতে চায় না। সবাই ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। কিন্তু এই মহান পেশায় (শিক্ষকতা) থেকে যারা কাজ করতে পারে তাদের মধ্যে একটা তৃপ্তি থাকে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকতা মানে শুধু বই পড়ানো না। শিক্ষকতা বলতে একজন ছাত্রকে মানবিক হিসেবে সমাজে গড়ে তোলা বোঝায়। তার আচার-আচরণ ব্যবহার যেন সুন্দর হয় সেভাবে তৈরি করা।

সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার জালাল উদ্দিন বলেন, তোমাদের এই প্রাণের সংগঠন (এসএসসি-১৯৯৯ ব্যাচ) আজকে আমাদের সেই অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। তোমাদের মুখগুলো দেখলে সেই অতীতের কথা মনে পড়ে। তোমাদের এই সংগঠন তোমাদের বন্ধুত্বের যে বন্ধন সেটাকে আরও শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলবে। তোমরা একে অপরের পাশে দাঁড়াবে। আজকে তোমরা যে শিক্ষকদের সম্মাননা দিয়েছো এতে আমি খুব আনন্দিত।

উল্লেখ্য, এসএসসি ১৯৯৯ ব্যাচ করোনাকালীন সময়ে অক্সিজেন সরবরাহ, অসহায়দের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, শীতবস্ত্র বিতরণ, অসচ্ছল ব্যক্তিদের পাশে দাঁড়ানো, দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরম ফিলাপ এবং ভর্তিতে অর্থসহায়তা করে যাচ্ছে।