বিষক্রিয়ায় মরছে জুড়ী নদীর মাছ, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

বিষক্রিয়ায় মরছে জুড়ী নদীর মাছ, হুমকির মুখে জীববৈচিত্র্য

ছবিঃ সংগৃহীত।

মৌলভীবাজার জেলার জড়ী উপজেলার ফুলতলা ইউনিয়নের বৃহৎ অংশজুড়ে রয়েছে জুড়ী নদী। সম্প্রতি কিছু দুষ্কৃতিকারী এই নদীতে বিষ ঢেলে দেয়।এতে বিষক্রিয়ায় মরেছে নদীর মাছ ও জলজ প্রাণিকুল। ধ্বংস হয়েছে নানান জীববৈচিত্র্য। নদীর তীরবর্তী মানুষের সম্বল জুড়ী নদীতে বিষ প্রয়োগে একদিনে সব হারিয়েছেন নদীনির্ভর মানুষ।

চলতি বছরের ২০ জুন জুড়ী উপজেলা মৎস্য অফিসের ব্যবস্থাপনায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিল নার্সারি কার্যক্রমের আওতায় এই হাওরে রুই, কাতলা ও মৃগেল মাছের মোট দেড় লাখ পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। হাকালুকি হাওরের জুড়ী অংশে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার রঞ্জন চন্দ্র দে ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান।

 

 

সূত্র জানায়,একটি চক্র জুড়ী নদীর উজানে বিষ প্রয়োগ করে। বিষয়টি স্থানীয়দের মধ্যে জানাজানি হলে স্থানীয় ফুলতলা ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম সেলু তাৎক্ষণিক ফুলতলা বিজিবি ক্যাম্প'কে বিষয়টি অবগত করেন। সাথে সাথে বিজিবির একটি টহল দলের সহায়তায় নদীতে বিষ প্রয়োগের বিষয়ে নিশ্চিত হোন। বছরে একাধিকবার নদীতে বিষ প্রয়োগের অভিযোগও রয়েছে। বিষক্রিয়ায় মরছে নদীর মাছ ও জলজ প্রাণী। হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।

ভৌগলিক অবস্থান থেকে জানা গেছে, নদীটির উৎস জুড়ী নদী ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তরপূর্ব অংশের পাহাড়ি অঞ্চলে উৎপত্তি লাভ করেছে। তারপর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার ধর্মনগর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। নদীটির শেষ ভাগ গিয়ে মিলিত হয়েছে হাকালুকি হাওরে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জুড়ী নদী তীরের কয়েকজন বাসিন্দারা বলেন, ফুলতলা ইউনিয়নের কিছু দুষ্কৃতিকারী প্রতিবছরই নদীতে বিষ দিয়ে মাছ ধরে। রাতের শেষ দিকে অথবা ভোরে নদীর উজানের দিকে বিষ দেয় ওই চক্র। আর ওই চক্রের সদস্যরা নদীর ভাটি অঞ্চলে জাল দিয়ে ও অন্যান্য কৌশলে মাছ ধরে। নদীতে মরা বা আধমরা ও পচা মাছ দলবেঁধে ভাসতে দেখে নদী তীরের বাসিন্দারা বুঝতে পারেন নদীতে বিষ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এভাবে নদীতে বিষ দেওয়ার ফলে ছোট বড় মাছ মরে যাওয়াতে নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। হুমকিতে পড়ছে দেশীয় প্রজাতির মিঠাপানির মৎস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি ও এর আশপাশের অনেক ছোট ছোট গাঙ ও খাল বিলের মাছ ও জলজ প্রাণী। তারা অভিযোগ করে বলেন, মৎস্য বিভাগ যদি দ্রুত জোরালো পদক্ষেপ নিতো তা হলে ওই রকমভাবে দেশীয় প্রজাতির মাছ নিধন হতো না।

 

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম সেলু বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে বছরে একাধিকবার নদীতে বিষ ঢেলে দেওয়ার প্রমাণও পেয়েছি। জুড়ী নদীর সাথে ফুলতলা ইউনিয়নের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। তিনি দেশীয় মৎস্যসম্পদ রক্ষায় সবার সচেতনতা ও সহযোগিতা চান।

 

এ প্রসঙ্গে জুড়ী উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, অভিযোগ পেলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।