মাছ ধরে জাইল্লারা, চাল পায় হাইল্লারা

মাছ ধরে জাইল্লারা, চাল পায় হাইল্লারা

ছবিঃ সংগৃহীত।

বরগুনার আমতলীতে ছয় হাজারেরও বেশি নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ভিন্ন পেশার মানুষ রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয় জেলেদের। 

তারা বলেন, যারা প্রকৃত জেলে, তাদের অনেককে বাদ দিয়ে কয়েক হাজার ভুয়া জেলেকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তালিকায়। তাই নিবন্ধিত না থাকায় সরকারি বিভিন্ন সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রকৃত জেলেরা। এ ছাড়া জেলেদের বরাদ্দের খাদ্য সহায়তা (চাল) বিতরণে অনিয়ম ঠেকাতে যাচাই-বাছাই করে চাল দেওয়ার দাবি স্থানীয় জেলেদের। 

উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, আমতলীতে কার্ডধারী জেলে রয়েছেন ৬ হাজার ৭৮৯ জন। এর মধ্যে আমতলী পৌরসভায় ৪৯৬ জন, ইউনিয়ন পর্যায়ে আমতলী সদরে ৩৪১, হলদিয়ায় ৮২৩, চাওড়ায় ৬০২, কুকুয়ায় ৬১৮, গুলিশাখালীতে ১ হাজার ৬৪০ এবং আরপাঙ্গাশিয়ায় ১ হাজার ৩৪৮ জনকে প্রকৃত জেলে বলে শনাক্ত করে নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে উপজেলা মৎস্য অফিস জেলেদের তালিকা হালনাগাদ করে। এ সংশ্লিষ্ট উপজেলা পর্যায়ে একটি কমিটিও রয়েছে।

চলমান ২২ দিনের মৎস্য শিকারের নিষেধাজ্ঞার খোঁজখবর নিতে গিয়ে উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া, লোছা, আঙুলকাটা ও লঞ্চঘাট জেলেপল্লীতে গেলে স্থানীয় জেলেরা অভিযোগ করেন— ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক ও সচ্ছল ব্যক্তিরা কার্ডধারী জেলে। জীবনে কখনো তারা মাছ শিকার করেননি, যাননি কখনো নদীপাড়ে। তাদের প্রধান পেশা ব্যবসা-বাণিজ্য বা কৃষি। কিন্তু তারা নিবন্ধিত জেলে। খাদ্য সহায়তার তালিকায় সবার আগে থাকে তাদের নাম। প্রতি বছর জেলে হিসেবে তারা পান খাদ্য সহায়তা। চাল বিতরণের দিন লাইনেও দাঁড়াতে হয় না তাদের। অন্য লোকের মাধ্যমে চাল চলে যায় বাড়িতে।

একাধিক জেলে বলেন, এ বছর এমনিতেই অনেক লোকসানে আছি। ধারদেনা করে কোনোমতে বেঁচে আছি। ৬৫ দিনের অবরোধে অনেক কষ্ট হয়েছে পরিবারকে নিয়ে। ইলিশ রক্ষায় আমরা প্রতিবছর সরকারের কথা মেনে ঘাটে থাকি। কিন্তু আমাদের নামের চাল আমরা প্রকৃত জেলেরা পাই না, অন্য পেশার মানুষরা চাল নিয়ে যায় আমাদের সামনে থেকে। 

 

ক্ষোভ প্রকাশ করে তারা বলেন, মাছ ধরে জাইল্লারা, চাল পায় হাইল্লারা। তালিকায় থাকা ভুয়া জেলেদের কার্ড পরিবর্তিত না করা হলে সরকারি অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে।

আমতলী পৌরসভা ৪নং ওয়ার্ডের জেলে স্বপন জানান, পাঁচ বছর যাবত তিনি জেলে পেশায়। তিনি সাগরে মাছ ধরেন। কিন্তু তাদের নামে জেলে কার্ড নেই। 

 

উপজেলার গুলিশাখালী ইউনিয়নের আঙুলকাটা গ্রামের জেলে মনির প্যাদা বলেন, আমি ১০ বছর জেলে পেশায়, আমার কার্ডও হয় নাই। সরকারি কোনো সহায়তাও পাই না। এ ছাড়া আমার বাড়িতে আরও চারজন জেলে রয়েছে। তাদের কারোরই কার্ড নেই। 

 

লোছা গ্রামের সোলাইমান জানান, ১৪ বছর যাবত জেলে পেশায় জড়িত থাকলেও তার নামে কোনো কার্ড নেই। 

ফেরদৌস নামের আরেক জেলে জানান, চার বছর ধরে সাগরে মাছ শিকার করেন তিনি। জেলের তালিকায় নাম নেই তার। নেই কার্ডও। তাই মাছ ধরা বন্ধের সময় সরকারি কোনো সহায়তা পান না তারা।

 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা হালিমা সরদার জানান, অতীতে কিভাবে জেলে তালিকা তৈরি হয়েছে তা তিনি জানেন না। তালিকা হালনাগাদ চলছে। প্রকৃত জেলে শনাক্ত করে নিবন্ধনকরণ এবং তাদের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে। এছাড়া তালিকায় ভুয়া জেলেদের বিষয়ে অভিযোগ পেলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান। সঠিক জেলে তালিকা না থাকায় সরকারের উদ্দেশ্য ব্যাহত এবং অর্থের অপচয় হচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্নের তিনি কোনো উত্তর দেননি।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব যুগান্তরকে জানান, প্রকৃত কোনো জেলে বাদ পড়েনি এবং আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগও করেননি। তবে কিছু লোক আছে তারা সবসময় অভিযোগ করেন। আমরা যখন তাদের ডাকি তারা আসেন না। প্রকৃত জেলেরা যদি কোনো অভিযোগ করে আমরা ব্যবস্থা নেব।