চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলবে নভেম্বরে

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলবে নভেম্বরে

ছবিঃ সংগৃহীত।

আগামী ১২ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার রেললাইন উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছেন রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন।এ লক্ষ্যে আগামী ২ নভেম্বর চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে। তবে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলবে ২০ থেকে ২৫ নভেম্বরের দিকে।

রেলওয়ের ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম-কক্সবাজার নতুন রেলপথে প্রথমে চলবে তিন জোড়া ট্রেন। চট্টগ্রাম থেকে তিন ঘণ্টা ২০ মিনিট এবং ঢাকা থেকে আট ঘণ্টা ১০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে এসব ট্রেন। ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত সাড়ে ১০টায়। সেটি চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে রাত ৩টা ৪০ মিনিটে। ২০ মিনিট বিরতির পর রাত ৪টায় চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছাবে। পুনরায় ঢাকার উদ্দেশে কক্সবাজার স্টেশন থেকে ছাড়বে দুপুর ১টায়। চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটে। চট্টগ্রাম স্টেশনে ২০ মিনিট বিরতি দিয়ে ৪টায় ছেড়ে রাত ৯টা ৫ মিনিটে ঢাকায় পৌঁছাবে। প্রতিটি ট্রেনে ১৮টি করে বগি থাকবে। ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলবে ট্রেন। পর্যায়ক্রমে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল কক্সবাজারের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ যুক্ত হবে। তবে ঢাকা থেকে যে ট্রেনটি কক্সবাজারে যাবে, সেটি নতুন ট্রেন।

চট্টগ্রাম থেকে যে দুটি ট্রেন আসা-যাওয়া করবে, সেগুলো পুরাতন বগি দিয়ে চলবে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোর মধ্যে একটি সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে ছেড়ে ষোলশহর, জানআলী হাট, পটিয়া, দোহাজারী, সাতকানিয়া, চকরিয়া, ডুলাহাজরা ও রামু স্টেশন থেকে যাত্রী ওঠানামা করাবে। এরপর সকাল ১০টা ২০ মিনিটে কক্সবাজারে পৌঁছাবে। চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে আরেকটি ট্রেন বিকাল ৩টা ১০ মিনিটে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কক্সবাজার স্টেশনে পৌঁছাবে।

একইভাবে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে প্রথম ট্রেনটি ছাড়বে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে। এটি বেলা ২টা ১৫ মিনিটে ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে। কক্সবাজার স্টেশন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে দ্বিতীয় ট্রেনটি ছাড়বে সন্ধ্যা ৭টায়। রাত ১০টা ৫ মিনিটে চট্টগ্রাম স্টেশনে পৌঁছাবে।

 

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘আগামী ১২ নভেম্বর কক্সবাজারের পথে ট্রেন চলাচল উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তবে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলবে ২০ থেকে ২৫ নভেম্বরের দিকে। কক্সবাজার রুটে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম থেকে ছয় জোড়া ট্রেন চলাচলের পরিকল্পনা আছে। তবে ইঞ্জিন ও বগি সংকটের কারণে এখনই তা সম্ভব হচ্ছে না।

পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে দুই জোড়া এবং ঢাকা থেকে এক জোড়া ট্রেন পর্যটন শহর কক্সবাজারে থেকে আসা-যাওয়া করবে। তিনটি ট্রেনই আন্তঃনগর। তবে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি শুধুমাত্র চট্টগ্রাম স্টেশনে দাঁড়াবে। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে চট্টগ্রাম থেকে টিকিট বিক্রি করা হবে। ট্রেনটি অন্য কোথাও না দাঁড়িয়ে সরাসরি কক্সবাজার যাবে। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো মাঝপথে কয়েকটি স্টেশনে দাঁড়াবে।’

 

তিনি আরও বলেন, প্রথমদিকে সবক’টি স্টেশনে থামবে না ট্রেন। স্টেশনগুলোর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর থামবে। এজন্য স্টেশনগুলোতে লোকবল পদায়নের কাজও শুরু হয়েছে।

১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রথমে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল এক হাজার ৮৫২ কোটি টাকা। পরে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার। এটি সরকারের অগ্রাধিকার (ফাস্ট ট্র্যাক) প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে ৯৪ কিলোমিটার অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ।

দোহাজারী-কক্সবাজার রেল প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মুহাম্মদ আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, ‘দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। ট্রলির সাহায্যে কয়েকবার টহলও দেওয়া হয়েছে। রেললাইন এখন চলাচলের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৪ শতাংশ। এখন স্টেশনগুলোর কাজ চলছে। সড়কে লাইট লাগানোর কাজ চলছে। কক্সবাজারে নির্মাণাধীন ছয়তলা আইকনিক রেলওয়ে স্টেশনের কাজ শেষ হয়েছে। রামু এবং ডুলাহাজরা স্টেশনের কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। বাকি স্টেশনগুলোর কাজও শেষ পর্যায়ে। প্রকল্পের অধীন ৩৯টি বড় সেতু, ২৪২টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিংয়ের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সবক’টি স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম।’