বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ

সংগৃহীত

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস আজ মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর)। বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস সম্পর্কে বিশ্বময় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটি একটি ক্যাম্পেইন, যা প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর পালিত হয়। বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস রোগ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায়, বিশ্ব ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।

সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও জনসচেতনতার লক্ষ্যে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন’।

আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের হিসাব মতে, ২০১৯ সালে প্রতি ১১ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একজন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ছিলেন, যার মোট পরিমাণ ৪২৫ মিলিয়ন। ২০৪৫ সালে ৪৮ শতাংশ বেড়ে তা ৬২৯ মিলিয়ন হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পৃথিবীর মোট ডায়াবেটিস রোগীর ৮৭ শতাংশই উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলোতে বাস করছেন।

বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের স্থান শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম। কিন্তু আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, ২০৩০ ও ২০৪৫ সালে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকবে। পৃথিবীতে বর্তমানে উচ্চ হারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে।

বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর ৯৭ শতাংশই টাইপ-২। এ ধরনের ডায়াবেটিস প্রতিরোধযোগ্য। পদক্ষেপ নিলে এ রোগকে অনেক বিলম্বিত করা যায়।

যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন ওই মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এতে করে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো প্রকাশিত হতে থাকে।

নিউইয়র্কের ওয়েল কর্নেল মেডিক্যাল কলেজের একটি গবেষণা বলছে, সঠিক খাবার খাওয়ার পাশাপাশি কোন ক্রমে সেই খাবার খাওয়া হচ্ছে তার উপরেও রক্তের শর্করার পরিমাণ অনেকটা নির্ভর করে। গবেষকদের দাবি, কার্বোহাইড্রেট প্রথমে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ যতটা বৃদ্ধি পায় তার তুলনায় আগে শাক-সবজি ও প্রোটিন জাতীয় খাবার খেলে অনেকটাই কম থাকে রক্তে শর্করার মাত্রা। আগে প্রোটিন ও শাক-সবজি খেলে আধা ঘণ্টা, এক ঘণ্টা ও দু'ঘণ্টা পর রক্তে শর্করার মাত্রা কম থাকে যথাক্রমে ২৯, ৩৭ ও ১৭ শতাংশ।

শুধু শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণই নয়, কোনো ক্রমে খাবার খাচ্ছেন তার প্রভাব পড়ে বার্ধক্যজনিত লক্ষণ, দেহের ওজন এবং হরমোনের ভারসাম্যের উপরেও। গবেষকদের দাবি, প্রোটিন এবং শাক-সবজি আগে খেলে শর্করা জাতীয় খাদ্যের আগেই শরীরে পৌঁছে যায় ফাইবার। যার ফলে পরিপাকের গতি ধীর কিন্তু স্থির হয় এবং আচমকা দেহের শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে না। এই পদ্ধতিতে খাবার খেলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য যেমন বজায় থাকে, তেমনই কমে প্রদাহ, ভালো থাকে ত্বকও। ফলে চেহারায় বয়সের ছাপ পড়ে কম।

প্রতিদিনের অনিয়মিত খাওয়াদাওয়া, মাত্রাতিরিক্ত ফাস্টফুড, চিনি, কার্বোহাইড্রেট খাওয়া- এইসবই কিন্তু বাড়িয়ে দেয় ডায়াবেটিসের আশংকা। যে কারণে ডায়াবেটিসের সমস্যায় আগেই যেমন রাশ টানতে হবে জীবনযাত্রায় তেমনই খাদ্যাভ্যাসেও আনতে হবে পরিবর্তন। ডায়েটে এমন কিছু খাবার অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যা রক্তে শর্করার বর্ধিত স্তরকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করবে। যেসব খাবার খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে তা হলো: চর্বিযুক্ত মাছ, শাকসবজি, ভিটামিন সি, ডিম, ডুমুর, মটরশুঁটি, টকদই, চিয়া সিডস, ফ্ল্যাক্সসিডস, করলা, আমের পাতা, মেথি, ডায়াবেটিস গাছ গায়নূরা প্রোকাম্বেন্স।

ডায়াবেটিসের সমস্যায় ভুগছেন যারা, এখনই ধূমপান এবং মদ্যপান বর্জন করুন। নিয়মিত সুগারের লেভেল দেখুন। নিয়ম মেনে ওষুধ খান। সারাদিনে অন্তত ঘণ্টাখানেক সময় রাখুন হাঁটার জন্য। এতে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।