ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে স্পিনে বধ করবে ভারত?

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে স্পিনে বধ করবে ভারত?

ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে স্পিনে বধ করবে ভারত?

ফাইনালের মঞ্চ প্রস্তুত আর কিছুক্ষণের মধ্যেই অস্ট্রেলিয়া ও ভারত মাঠে নামবে আহমেদাবাদের বিশাল এক স্টেডিয়ামে।এই মাঠে বসে আজ খেলা দেখবেন ১ লাখ ৩০ হাজারের বেশি দর্শক।ক্রিকেট ইতিহাসে এর চেয়ে বড় স্টেডিয়াম, এর চেয়ে বড় লোক সমাগম আর নেই।ম্যাচের আগের দিন থেকে আলোচনার কেন্দ্রে আছে উইকেট।

ম্যাচের আগের দিন ভারতের রোহিত শর্মা, রাহুল দ্রাবিড়দের দেখা গেছে উইকেটের আশেপাশে। পরের দিকে প্যাট কামিন্স মোবাইল নিয়ে ছবি তুলেছেন আহমেদাবাদের পিচের, যেখানে হকেব ফাইনাল ম্যাচ।অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট দলের বেশ কজন বেশ উৎসুক দৃষ্টিতেই উইকেট দেখেছেন।সংবাদ সম্মেলনে অবশ্য প্যাট কামিন্স সরল স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, তিনি তেমন পিচ বোঝেননা।

খেলা হবে 'এভারেজ' পিচে

ক্রিকবাজের প্রতিবেদক ভারাত সুন্দারেসান লিখেছেন, উইকেট যাচাই-বাছাইয়ের পরে অস্ট্রেলিয়ান দলের মূল উদ্বেগের বিষয় ছিল মাটির উভয় পাশে ক্রিজের সামনে পাঁচ মিটার প্যাচ ছিল, সেখানে যথেষ্ট পরিমাণে পানি দেয়া হয়নি বলে মনে করছেন অজি ম্যানেজমেন্ট।অস্ট্রেলিয়া মোটামোটি নিশ্চিত যে, স্পিনাররা ফাইনালে বড় ভূমিকা পালন করবে।কেউ কেউ ফাইনালের পিচটিকে এই বছরের শুরুতে ইন্দোরে তৃতীয় টেস্টের উইকেটের সাথে তুলনা করছেন, যদিও সেটি ছিল লাল মাটির উইকেট।

মজার বিষয় হচ্ছে ইন্দোর টেস্টে ভারত অস্ট্রেলিয়ার কাছে পাত্তাই পায়নি।৯ উইকেটের বড় জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া।এই পিচেই পাকিস্তান ও ভারত খেলেছিল ঠিক এক মাস পাঁচদিন আগে, আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের রেটিং অনুযায়ী সেই ম্যাচে পিচ রেটিং ছিল ‘এভারেজ’ - গড়পড়তা।

পুরো টুর্নামেন্টে সেই একটা ম্যাচেই ভারত রাভিচান্দ্রান আশ্বিনকে খেলিয়েছে, অর্থাৎ ভারতের ম্যানেজমেন্ট এই স্পিন ট্র্যাক নিয়ে নিশ্চিত ছিল।আরও মজার বিষয় হচ্ছে গোটা বিশ্বকাপে আর একটা ম্যাচেই উইকেট ‘গড়পড়তা’ রেটিং পেয়েছিল- সেটা ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ, চেন্নাইয়ে।দুটো ম্যাচেই ভারতের প্রতিপক্ষ ১৯০-২০০ রানের ভেতর অলআউট হয়ে গিয়েছিল।

সুন্দরাসেন লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল উইকেট নিয়ে কোনও সমালোচনা করেনি, কোনও ধাক্কাও খায়নি, অস্ট্রেলিয়া এমন একটা মানসিক জায়গায় আছে- যে ধরনের প্রশ্ন আসবে সে অনুযায়ী উত্তর দিতে হবে।এবারের টুর্নামেন্টে অস্ট্রেলিয়া আসলে সেভাবেই খেলছে, প্রায় সব ম্যাচেই অস্ট্রেলিয়া পিচ নিয়ে ভাবেনি, নিজেদের শক্তিমত্তা অনুযায়ী খেলেছে।

অস্ট্রেলিয়ার স্কোয়াড দেখলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়।যেমন অস্ট্রেলিয়া লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা ছাড়া কোনও বিশেষায়িত স্পিনার ছাড়াই ভারতে এসেছে।এতে বোঝা যায় অস্ট্রেলিয়া উইকেট কেমন ব্যবহার করবে সেটা নিয়ে যতটা সম্ভব কম ভাবা যায় ততটা চেষ্টা করেছে।

অস্ট্রেলিয়া ‘ফাইনালের দল’

ওয়ানডে বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া এখনও পর্যন্ত সাতবার ফাইনাল খেলেছে।এর মধ্যে ১৯৭৫ সালে ও ১৯৯৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে হেরে রানার আপ হয়েছিল, এর বাইরে পাঁচবার বিশ্বকাপের শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।

১৯৮৭ সালে অ্যালান বর্ডারের অধীনে কলকাতায় অস্ট্রেলিয়া শিরোপা জিতেছিল।

১৯৯৯ সালে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে শিরোপা জিতেছিল স্টিভ ওয়ার দল।

২০০৩ ও ২০০৭ সালে রিকি পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া ছিল অপরাজেয়।

২০১৫ সালে মাইকেল ক্লার্কে অধীনে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপ জিতেছিল ঘরের মাটিতে।

আর ২০২৩ সালে আহমেদাবাদে মাঠে নামার আগে প্যাট কামিন্স বলেই দিয়েছেন এমন ভরা গ্যালারিতে ভারতীয় সমর্থকদের নীরব করে দেয়াটা অনেক তৃপ্তি দেবে।অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম: ‘শত কোটি হৃদয় ভাঙ্গার মঞ্চ’

অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যম বলছে ভারত এই বিশ্বকাপ ফাইনালে ফেভারিট, বেশিরভাগ শিরোনামেই ভারতের এই বিশ্বকাপ যাত্রাকে স্বপ্নের মতো করে বলা হচ্ছে।গার্ডিয়ান অস্ট্রেলিয়ায় জিওফ লেমন লিখেছেন, “ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া যদি জিতে যায় তবে সেটা হবে আপসেট এবং এটাই হবে অস্ট্রেলিয়ার সেরা বিশ্বকাপ জয়”।

সিডনি মর্নিং হেরাল্ডে ড্যানিয়েল ব্রেটিগ লিখেছেন, ‘শত কোটি হৃদয় ভাঙ্গার মঞ্চ’।তিনি লিখেছেন, “চেন্নাইয়ে (এর আগের দেখায়) অস্ট্রেলিয়া ছিল ভীতু এবং ভীতু একটা দল এই ভারতের বিপক্ষে কোনও কাজে আসবে না এটা প্যাট কামিন্স ভালোভাবেই জানেন”।দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকায় রবার্ট ক্র্যাডোক লিখেছেন, “অস্ট্রেলিয়ার দুটি কাজ করতেই হবে, এক কোহলিকে থামানো, দুই ভারতের পুরো বোলিং লাইন আপকে ভারসাম্যহীন করে দেয়া”।

স্টেডিয়ামের বাইরে ‘নীলের মহাসাগর’

বিবিসির নিতিন শ্রীভাস্তাভ লিখেছেন, “স্টেডিয়ামের বাইরে হাজারো মানুষ সকাল থেকেই জড়ো হয়েছে সেখানে কোনও হলুদ জার্সি পরা মানুষ আমি দেখিনি। মানে অস্ট্রেলিয়ার কোনও সমর্থকই আমার চোখে পড়েনি”।

স্টেডিয়ামের বাইরের পরিবেশকে ‘নীলের মহাসাগর’ বলছেন তিনি।দেদারসে চলছে পতাকা ও জার্সি বিক্রি, স্টেডিয়ামের বাইরে অজয় কুমার ১৭৫টি পতাকা বিক্রি করেছেন এখন তিনি ১৫০ রুপি করে বিক্রি করছেন প্রতিটি পতাকা যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৮০ ডলারের মতো হবে।অজয় কুমার বলছেন, “পতাকা শেষ হয়ে গেলেও সমস্যা নেই আমার ঘর কাছেই আর ঘরে এখনও ৫০০ এর বেশি পতাকা আছে”।

সূত্র : বিবিসি